শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অযাচিত ফোন কল: শোকের দিনেও মেলে গানের অফার

প্রকাশিত: ০৯:৪৬ এএম, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১

অযাচিত ফোন কল: শোকের দিনেও মেলে গানের অফার

অযাচিত কল আর বিরক্তিকর এসএমএসে ক্ষুব্ধ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা। ঢালাওভাবে পাঠানো এসব এসএমএস ও কলের বেশিরভাগই গ্রাহকের অপ্রয়োজনীয়। দরকার না থাকলেও গৃহশিক্ষক, ভ্রমণের ইচ্ছা না থাকলেও ভিসা সেবার অফার, শত কোটি টাকার মালিককেও মাত্র কয়েক লাখ টাকা ঋণের অফার, বিবাহিতদের সঙ্গী খুঁজে দেওয়ার অফার দেওয়া হচ্ছে। এমনকি মৃত্যুশোকের মতো পরিস্থিতিতেও গ্রাহকদের গান শুনতে বাধ্য করছে তারা। পণ্যের বিজ্ঞাপনের জন্য প্রায় সবার মোবাইলেই আসছে এমন কল বা এমএমএস। মোবাইল অপারেটরদেরও নানা অফার আসে প্রতিনিয়ত। ঘন ঘন এমন কল ও এসএমএসে বিরক্ত অনেকেই। বেসরকারি চাকরিজীবী মোহাম্মদ আলী (৪৫)। গত ৫ আগস্ট গ্রাম থেকে বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়ি ছুটছিলেন তিনি। পথে স্বজনরা বারবার ফোন করে সান্ত্বনা দিচ্ছিল তাকে। একসময় ২২৭৮৮ নম্বর থেকে একটি ফোন আসে। রিসিভ করতেই অপরপ্রান্ত থেকে গান বেজে ওঠে। এরপরই এক নারী বলতে থাকেন, ‘প্রিয় গ্রাহক, আনলিমিটেড ফ্রি গান ডাউনলোড শুধু এয়ারটেল কলার টিউনে, ৭ দিনের জন্য ৭ টাকায় ৩১ পয়সায় পেতে ১ প্রেস করুন’- শুনে বিরক্ত হয়ে কেটে দেন তিনি। মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমার বাবা হদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তার আকস্মিক মৃত্যুতে আমি দিশেহারা। আত্মীয়স্বজনরা একের পর এক ফোন করে খবর নিচ্ছিল কোথায় আছি, কখন পৌঁছাব ইত্যাদি। এর মধ্যে একটি ফোন আসে প্রথমে। ভাবছিলাম, হয়তো বিদেশ থেকে কেউ ফোন করেছে। রিসিভ করতেই কী সব অফার। এরপর রাগ করে কেটে দিয়েছি। ফোন করার আগে অন্তত জানা উচিত কার মানসিক অবস্থা কেমন।’ আরেক ভুক্তভোগী মিলন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘৭ সেপ্টেম্বর বিকালে একটা জরুরি মিটিং করছিলাম। এমন সময় আমার এয়ারটেল নম্বরে +৮৮০২১৬৪৮০ থেকে একটি ফোন আসে, রিসিভ করতেই অপরপ্রান্ত থেকে নারীকণ্ঠে অনুরোধ আসে, ‘দয়া করে কলটি কাটবেন না, হতে পারে কলটি আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, দুদিনের পরিচয় থেকেই হতে পারে চিরদিনের পরিণয়, তাই তো আমাদের বন্ধু সন্ধান সার্ভিসের মাধ্যমে আপনি খুঁজে নিতে পারেন আপনার মনের মতো কোনো বন্ধুকে, এখনই এক প্রেস করুন, ২ টাকা ৬৭ পয়সা চার্জ এবং অটো রেনুয়াল প্রযুজ্য।’ আমি বিবাহিত অথচ আমাকে বন্ধু খোঁজার অফার দিচ্ছে।’ নিসা সেরনিয়াবাত (গৃহিণী) বলেন, ‘৯ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টা ৫২ মিনিটে ২৩৪৪৩ নম্বর থেকে একটা ফোন আসে। তখন আমি রান্নাঘরে। জরুরি মনে করে দৌড়ে আসি। রিসিভ করতেই এক নারী বলেন, ‘মাঝে মাঝে এমন কাউকে দরকার হয় যে মানসিকভাবে আপনাকে শক্তি দিতে পারে, এমন অনেকের সঙ্গে কথা বলতে পারেন আপনি প্রতিদিন মাত্র ২ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফিতে, দেরি না করে এখনই ১ চাপুন, কি এক চেপেছেন তো?’ গভীর রাতেও এ ধনের ফোন বা এসএমএস দিয়ে বিরক্ত করে। এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার।’ তপন কুমার রায়ের দেওয়া অফারটি একটু ভিন্ন রকম। অফারে অবাক ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমি একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী অথচ ২০৫০২ নম্বর থেকে ফোন করে আমাকে ইসলামিক সার্ভিসের মাধ্যমে কোরআন তেলাওয়াত ও গজল ডাউনলোডের অফার দেয়।’ এ ছাড়া ২৪০০০ নম্বও থেকে ফোন করে গস্খামীণফোনের ওয়েলকাম টিউনের অফার। ২৩৪৪৩ নম্বর থেকে এয়ারটেল ভয়েস চ্যাটে বন্ধু খোঁজার অফার, ২১২৮০ নম্বর থেকে করোনায় বাড়তি ঈদ আনন্দসহ বিরক্তিকর সব অফার দিচ্ছে কোম্পানিগুলো। এ প্রসঙ্গে রবির চিফ করপোরেট অফিসার শাহেদ আলম সময়ের আলোকে বলেন, ‘আমরা এ ধরনের কোনো অফার কাস্টমারকে দিই না। কারা দেয় সেটিও বলতে পারব না। গ্রাহকদের নম্বর এখন ই-কমার্স সাইট বা রিটেইলারদের কাছেও পাওয়া যায়। বিভিন্ন কন্টেন্ট প্রোভাইডররা এগুলো করতে পারে, আমরা কোনো ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস বা ফোনে সার্ভিস পুশ করি না।’ বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় বলেন, ‘ডু নট ডিস্টার্ব (ডিএনডি) সার্ভিস সম্পর্কে গ্রাহকের ধারণা না থাকায় তারা হয়তো প্যাকেজে সম্মতি দিয়ে রেখেছে। এ জন্য এগুলো আসছে। আন ওয়ান্টেড (অপ্রত্যাশিত) মেসেজ ও কল সম্পর্কে আমাদের ধারণা আছে। আমরা এগুলো নিয়ে কাজ করছি।’ এদিকে ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা ও সংরক্ষণে গ্রাহকদেরও সচেতন হতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এ জন্য আইন থাকা জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ মোবাইল ফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ডু নট ডিস্টার্বের (ডিএনডি) মাধ্যমে শুধু মোবাইল অপারেটরদের প্রমোশনাল বিজ্ঞাপন বন্ধ করা যায়, কিন্তু বিরক্তিকর অন্য কল বন্ধ করা যায় না। অযাচিত ফোন কল ও মেসেজের দায় বিটিআরসি এড়াতে পারে না, কারণ বিটিআরসি ১৮২টি ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস কোস্পানির লাইসেন্স দিয়ে রেখেছে এবং রাজস্ব ভাগাভাগিরও অংশ পায়। এসব কোম্পানি গ্রাহকের অনুমতি ছাড়াই সার্ভিস অ্যাকটিভ করে দিচ্ছে। গ্রাহকদের টাকা নিয়ে যাচ্ছে। এটি বিটিআরসির নিরীক্ষা বিভাগ দ্বারা প্রমাণিত।’ তিনি বলেন, ‘শুধু ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস না, বিভিন্ন থার্ড পার্টি আছে যারা গ্রাহকের নম্বর নিয়ে বিরক্ত করছে। এদের মনিটরিং করে শাস্তির আওতায় আনলে হয়রানি অনেক কমবে।’
Link copied!