শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আওয়ামী লীগে পঞ্চপাণ্ডবের উত্থান

প্রকাশিত: ০৯:৪৫ এএম, মে ১০, ২০২১

আওয়ামী লীগে পঞ্চপাণ্ডবের উত্থান

আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক থেকে। আওয়ামী লীগের সভাপতি জাতীয় ইস্যুতে আওয়ামী লীগের না জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। তিনি আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীরা আশা আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দু এবং তার নির্দেশে অনুপ্রেরণা দিয়েই দল পরিচালিত হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতির যে অভিপ্রায়, আকাঙ্ক্ষা এবং নির্দেশনা সেটি মাঠে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দলের সাধারণ সম্পাদকের। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হলেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তৃণমূলের যোগসূত্র। দলের তৃণমূল রাজনৈতিক নির্দেশনা পায় এবং পুরো দলের যে চেইন অফ কমান্ড সেটি গড়ে ওঠে সাধারণ সম্পাদককে ঘিরে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজেই নানা রকম ঝুট ঝামেলার মধ্যে জরিয়ে গিয়েছেন। বিশেষ করে তার ছোটভাই কাদের মির্জা একের পর এক বাক্যবাণ এবং সে ব্যাপারে তার নীরবতা আওয়ামী লীগে তার অবস্থানকে কিছুটা হলেও নড়বড়ে করে দিয়েছে। তাছাড়া করোনার কারণে তিনি একরকম ঘরবন্দি আছেন। ঘরে থেকে বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে তিনি তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ এমন একটা সংগঠন যেখানে ঘরে থেকে একটি করে বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে দল পরিচালনা করা যায় না। দলের নেতৃত্ব রাখা যায় না। কারণে সারা দেশের তৃণমূলের কর্মকাণ্ড, তৃণমূলের শৃঙ্খলা দেখা এবং তাদের অভাব অভিযোগ শোনা, তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রের যোগসূত্র রক্ষা করা এবং অন্তঃকলহ, বিরোধ মীমাংসা ইত্যাদি কাজগুলো করতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। সেটি করার ক্ষেত্রে সাধারণ সম্পাদক মূল ভূমিকা রাখেন। তবে সাধারণ সম্পাদকের নাজুক পরিস্থিতি, তার অসুস্থতা এবং করোনা সময় আওয়ামী লীগের পঞ্চপাণ্ডবের উত্থান ঘটেছে। সাধারণ সম্পাদক নয় বরং আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের যোগসূত্র, নেতাকর্মীদের বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্নের উত্তর, দলের অন্তঃকলহ মেটানো এবং হতাশ কর্মীদের চাঙ্গা করাসহ নানা রকম দলের খুঁটিনাটি কাজ সামলাচ্ছেন আওয়ামী লীগের ৫ জন নেতা। আওয়ামী লীগের মধ্যেই বলা হচ্ছে যে, পঞ্চপাণ্ডব। রাজনৈতিকভাবে তাদের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তারা একে অন্যের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্বও রয়েছে। আর দীর্ঘদিন ছাত্র রাজনীতি, যুব রাজনীতি করে তারা তাদের নিজেদের মধ্যে খুব ভালো বোঝাপড়া করে নিয়েছেন। আর যে কারণে তারা পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই সারাদেশের আওয়ামী লীগের সংকট, সম্ভাবনা এবং কর্মসূচিগুলো করছেন। সব বিষয়ে তারাই আওয়ামী লীগ সভাপতির সাথে যোগাযোগ করে তৃণমূলে পরামর্শ দিচ্ছেন বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছেন। যে ৫ জন আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে সারাদেশের কর্মীদের সমন্বয় করছেন, পরামর্শ দিচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন... ১. জাহাঙ্গীর কবির নানক: জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং তিনিই এই করোনাকালীন সময়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। কারণ সারাদেশে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং আওয়ামী লীগ সভাপতির বিভিন্ন নির্দেশনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তিনি অন্যতম মূল ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। এই করোনার সময় তিনি দেশের বিভিন্ন এলাকা সফর করছেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিশছেন। ২. আবদুর রহমান: আরেকজন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমানও জাহাঙ্গীর কবির নানকের সঙ্গে মিলে দেশের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডগুলো দেখভাল করছেন। ৩. বাহাউদ্দিন নাছিম: আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু এই করোনাকালীন সময়ে তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অন্যতম আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। বিভিন্ন এলাকার নেতাকর্মীদের সমস্যা, জিজ্ঞাসা ইত্যাদি এবং সংকট সমাধানে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছেন বাহাউদ্দিন নাছিম। ৪. মির্জা আজম: মির্জা আজম আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। মির্জা আজম সাংগঠনিক সম্পাদক হলেও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক থাকার কারণে সারাদেশে তার নেটওয়ার্ক। কর্মীবান্ধব নেতা হওয়ার কারণে কর্মীদের সঙ্গে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ নিচ্ছেন, দিচ্ছেন এবং কেন্দ্রীয় যে সিদ্ধান্ত সেটি তৃনমূলে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। ৫. এস এম কামাল: এস এম কামাল সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনিও এই পঞ্চপাণ্ডবের সদস্য। যিনি সারাদেশের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমন্বয় রক্ষা করার কাজটি করছেন। এই পাঁচজনই এখন আওয়ামী লীগের সারা দেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল কেন্দ্রে পরিণত হয়েছেন এবং তাদেরকে ঘিরেই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো পরিচালিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতিও এদেরকে দিয়েই তার নির্দেশনাগুলো এবং অভিপ্রায়গুলো তৃণমূল পর্যায়ে জানাচ্ছেন। সূত্র: বাংলা ইনসাইডার  
Link copied!