শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আকাশপথেই এসেছিল করোনা

প্রকাশিত: ১০:৫৩ এএম, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১

আকাশপথেই এসেছিল করোনা

বিভিন্ন দেশে কয়েক মাস পরপরই মিউটেশনের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্ট তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু ভেরিয়েন্ট টিকার কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। তবু দেশের সবাইকে টিকার আওতায় আনতে হবে; সরকার যা চেষ্টা করে যাচ্ছে। সম্প্রতি র‌্যামন ম্যাগসেসাই পুরস্কারে ভূষিত আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ডক্টর ফেরদৌসী কাদরী বাংলাদেশে কভিডের বিস্তার ও গতিবিধি নিয়ে এক গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে বলতে গিয়ে গণমাধ্যমের কাছে এই অভিমত তুলে ধরেছেন। ওই গবেষণায় উঠে আসা তথ্য অনুসারে দেশে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতেই বিমানযোগে বিদেশফেরতদের মাধ্যমে দেশে করোনাভাইরাস ঢুকেছে। আর প্রথম দফায় ঢাকা থেকে সারা দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে গত বছর ১৬ থেকে ২৩ মার্চের মধ্যে। ঢাকা থেকে ঢাকার বাইরে ছুটে যাওয়া মানুষের মাধ্যমে সংক্রমণের দেশজুড়ে বিস্তার হয়েছে বলেও প্রমাণ মিলেছে গবেষণায়। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর), আইসিডিডিআরবি এবং আইদেশি, সরকারের এটুআই প্রগ্রাম, যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্যাঙ্গার জিনোমিক ইনস্টিটিউট, হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ এবং ইউনিভার্সিটি অব বাথের বিজ্ঞানীদের যৌথ উদ্যোগে একটি জিনোমিক কনসোর্টিয়ামের আওতায় বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রবেশ, দেশব্যাপী বিস্তৃতি এবং করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে বিভিন্ন সময়ে লকডাউন এবং মানুষের গতিবিধির ভূমিকার ওপর ভিত্তি করে ওই গবেষণাপত্রটি গত ৪ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞানবিষয়ক আন্তর্জাতিক সাময়িকী নেচারে প্রকাশিত হয়। গবেষণায় বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস আসা, বিস্তার এবং লকডাউনের আগের ও পরের সময়ে মানুষের চলাচলের ভূমিকা উঠে আসে। গত বছরের মার্চ মাসে গবেষণাটি শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে গত বছরের মার্চ-জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগৃহীত ৩৯১টি করোনাভাইরাসের জিনোম বিশ্লেষণ করা হয়। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য উদ্ভব হয় গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে এবং পরবর্তী সময়ে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের মাধ্যমে আরো ভাইরাস দেশে আসে। গবেষণায় দেখা যায়, গত বছরের ২৩ মার্চ থেকে ২৬ তারিখের মধ্যে ঢাকা থেকে বহির্মুখী যাতায়াতই মূলত দেশব্যাপী করোনাভাইরাস বিস্তারের প্রাথমিক কারণ। গবেষণাটির বিষয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘আমাদের এই কনসোর্টিয়াম বিভিন্ন সময়ে নীতিনির্ধারকদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে সহায়তা করে থাকে। এর মধ্যে সীমান্তবর্তী এলাকায় জনসাধারণের চলাচল নিষিদ্ধ করা, পরিবহন ও যানবাহন চলাচলে সীমাবদ্ধতা আনা, বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন এবং যেসব দেশে উদ্বেগজনক ভেরিয়েন্ট ছিল, সেখান থেকে আসা ভ্রমণকারীদের সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা রাখা, সময়মতো লকডাউন সিদ্ধান্ত বা প্রয়োজনবোধে আন্তর্জাতিক চলাচল সীমাবদ্ধ করা হয়। আমাদের এই কনসোর্টিয়াম গত বছরের মার্চ মাস থেকে কাজ করে যাচ্ছে।’ গবেষণাপত্রটির মূল লেখকদের অন্যতম ড. লরেন কাউলি বলেন, জেনোমিক এবং মবিলিটি থেকে বিভিন্ন ডাটা স্ট্রিম একত্র করে আমরা কিভাবে করোনাভাইরাস বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, তা বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়েছি। গবেষণাটিতে মহামারি প্রতিরোধে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের কার্যকারিতা দেখানো হয়েছে, যা ভবিষ্যতে অন্যান্য মহামারির ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা সম্ভব হবে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ওয়েলকাম স্যাঙ্গার ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নিকোলাস টমসন বলেন, ‘আমরা বহু বছর ধরেই বিভিন্ন সংক্রামক রোগের ওপর একসঙ্গে কাজ করছি। বিজ্ঞানীরা যখন জনস্বাস্থ্য পেশাজীবীদের সঙ্গে যৌথভাবে একটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করেন, তখন কতটা সাফল্য অর্জন করা যায় এই গবেষণাপত্র তারই একটি বাস্তব উদাহরণ। হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক ক্যারোলিন বাকি বলেন, মবিলিটি ডাটা, প্রথাগত চলমান সার্ভিলেন্স সিস্টেমের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। গবেষণায় দেখানো হয়েছে, এ ধরনের একটি মিলিত বিশ্লেষণধর্মী গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি একটি দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে মূল্যবান ভূমিকা রাখতে পারে, যা অন্য কোনো উপায়ে অর্জন করা কঠিন। গতকাল আইসিডিডিআরবির জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো বিবৃতি আকারে এই গবেষণার এমন তথ্য প্রকাশ করা হয়। জানানো হয়, এই গবেষণায় ফেসবুক ডাটা ফর গুড, গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি আজিয়াটা লিমিটেড জনসংখ্যা মোবিলিটির তথ্য সরবরাহ করেছে। বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সার্স-কোভ-২ নমুনার সিকোয়েন্সিংয়ে সহায়তা করেছে।
Link copied!