মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আবারও মাঠে সেই ডেসটিনি

প্রকাশিত: ১১:০৬ এএম, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২১

আবারও মাঠে সেই ডেসটিনি

আর্থিক খাতের আঁতকে ওঠা প্রতিষ্ঠানের নাম ডেসটিনি। প্রলোভন দেখিয়ে লুট করা হয়েছে গ্রাহকের হাজার হাজার কোটি টাকা। অনিয়মের কারণে প্রতিষ্ঠানের অনেক শীর্ষ কর্তাই এখন জেলে। তবে প্রায় ১০ বছর পর আবার মাঠে নেমেছে বিতর্কিত সমবায় প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি। দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থেকে আবারও আলোচনায় ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা সমবায় অধিদপ্তরের অনুমোদনে গঠন করা হয়েছে নতুন কমিটি। পুরোনো কমিটিতে যারা ছিলেন, তারা এখন নতুন কমিটিতে নেই। বলা হচ্ছে, যেহেতু তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তাই নতুন কমিটিতে তাদের স্থান হয়নি। সমবায় অধিদপ্তরের যুগ্ম নিবন্ধক মোহাম্মদ হাফিজুল হায়দার চৌধুরী বলেন, সমবায় থেকে নিবন্ধন নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে ডেসটিনি। তিনি বলেন, ডেসটিনি কো-অপারেটিভে কোনো সমস্যা হয়নি। যে ১২ জন নিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এ জন্য তারা আবার নিবন্ধন নিয়ে কাজ পরিচালনা করতে পারবে। ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সহসভাপতি জাকির হোসেন জানান, সরকারের সকল নিয়মনীতি মেনে আবারও ব্যবসা করতে চায় ডেসটিনি। এ ক্ষেত্রে কোম্পানির সম্পদ বিক্রি করে গ্রাহকদের দায়দেনা পরিশোধ করা হবে। তিনি জানান, এমএলএম ব্যবসা করার জন্য আবেদন করা হয়েছে। তবে এই আইনটি যুগোপযোগী করতে হবে। সমবায় বিশেষজ্ঞ এমদাদ হোসেন মালেক বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এমএলএম কোম্পানি লোভনীয় অফার দিয়ে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ডেসটিনি আবার কোন ফর্মে নিবন্ধন করে ব্যবসা করবে? আগে যে কয়েক হাজার কোটি টাকা গ্রাহকের পকেট থেকে বের করে নিয়েছে, তারা তো এখনও টাকা ফেরত পায়নি।’ কমিটি অনুমোদন দিয়েছে সমবায় অধিদপ্তর গত ২৮ জুন ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের নতুন কমিটির অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সমবায় অধিদপ্তর। ১২ সদস্যের এই কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল এম হারুন অর রশিদ (অব.)। সহসভাপতি হয়েছেন মো. জাকির হোসেন, আর সম্পাদক হয়েছেন আজম আলী। নির্বাচন পরিচালনার জন্য ১৭ মে সমবায় সমিতি বিধিমালা ২০০৪-এর ২৬(২) বিধি অনুসারে সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিটি গঠন করা হয়। ১২টি পদের বিপরীতে ২৩ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তবে ‍পরে ১৩ জন তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। ফলে সীমিত ব্যবস্থাপনা কমিটির ১২টি পদে ১২ জন প্রার্থীই থাকেন। একই পদের বিপরীতে একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন সবাই। নির্বাচনে সভাপতি, সহসভাপতি, সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ পদে একজন করে এবং ব্যবস্থাপনা কমিটি সদস্য হিসেবে ৭ জনসহ মোট ১২ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কার্যক্রম শুরু করেছে ডেসটিনি দীর্ঘদিন পর আবার অনুমোদন পেয়ে নড়চেড়ে বসেছে ডেসটিনি। এতদিন ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকায় তৈরি হয় স্থবিরতা। ডেসটিনির মালিকানাধীন সব সম্পদ পুলিশের নিয়ন্ত্রণে হলেও প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কাকরাইল মোড়ে আলিস টাওয়ারের কয়েকটি ফ্লোরে সীমিত পরিসরে কাজ শুরু করা হয়েছে। নতুন নেতৃত্ব পাওয়া সকলেই প্রতিদিন ওই অফিসে বসছেন। অফিস চালু হওয়ার খবরে বিনিয়োগকারী অংশীদাররাও আসতে শুরু করেছেন। রাজধানীর কাকরাইলের মাহতাব প্লাজায় ডেসটিনির যে তিনটি অফিস ছিল, সেই অফিসগুলো এখন বন্ধ। এতদিন চালু থাকলেও কয়েক দিন আগে পুলিশ অফিস গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। কো-অপারেটিভের কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য নতুন কমিটি অফিস নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করছে। জানা গেছে, ডেসটিনির যেসব সম্পত্তি এখন পুলিশের জিম্মায়, সেগুলো এই কমিটির নিয়ন্ত্রণে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশেষ করে মাল্টিপারপাসের নামে থাকা সম্পত্তি নিতে চায় কমিটি। গ্রাহকের হা-হুতাশ কেউ দিয়েছে হাজার, কেউ লাখ লাখ টাকা। কোটি টাকাও দিয়েছে অনেক পরিবার। ১০ বছর আগের দেয়া সেই টাকার জন্য আক্ষেপ এখনও স্পষ্ট। কেউ প্রকাশ্যে, কেউ বা অপ্রকাশ্যে চাহিদা তুলে ধরছেন। কিন্তু কোথায় গেলে মিলবে টাকা, তা কেউ জানে না। ডেসটিনির অফিসে অফিসে এখনও খোঁজ নেন গ্রাহকরা। কবে চালু হবে, বিনিয়োগকৃত টাকার কোনো হদিস কি মিলেবে? কিন্তু কোনো সদুত্তর নেই। সমবায় অধিদপ্তর থেকে নতুন কমিটি করে দেবার পর আলিস টাওয়ারে গ্রাহকদের ভিড় বাড়ছে। ডেসটিনি কো-অপারেটিভে অনিয়ম সমবায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল সমবায় অধিদপ্তরের অতিরিক্ত নিবন্ধক অমিয় কুমার চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি ডেসটিনি কো-অপারেটিভে ১ হাজার ৪৪৮ কোটি ৭৮ লাখ ৭৩ হাজার ৯৫২ টাকার অনিয়ম খুঁজে পায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধকের অনুমোদন না নিয়ে সমিতির সদস্যদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থ ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ, অনুমোদনহীনভাবে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে ঋণ বিতরণ ও সেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনা, সম্পদের মূল্য বেশি দেখানো, বাজেটবহির্ভূত এবং অনুমোদনহীন বিভিন্ন ব্যয়ের মাধ্যমে এসব অনিয়ম করা হয়। বিশ্লেষক মন্তব্য সমবায় বিশ্লেষক এমদাদ হোসেন মালেক বলেন, ‘পুরোনো বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ কি বর্তমান কমিটি দেখবে নাকি নতুন করে কার্যক্রম পরিচালনা করবে, সেটি স্পষ্ট নয়। তারা যদি নতুন করে রেজিস্ট্রেশন নেয়, তাহলে আগের বিনিয়োগকারীরা অর্থ কি ফেরত পাবেন? যদি ফেরত পান, কী উপায়ে পাবেন? এগুলো স্পষ্ট না করে ব্যবসা কাজ শুরু করলে জনমনে সন্দেহের জায়গা তৈরি হবে।’ তিনি আরও বলেন, ডেসটিনির পরে ইউনি পে টু ইউ এসেও একই কাজ করেছে। প্রায় হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে তারা। এ ছাড়া যুবক নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠানও কয়েক হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। যুবকের সম্পত্তি বিক্রি করে গ্রাহকের টাকা দেয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু গ্রাহকের টাকা ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা কেউ এখনও করেনি। তিনি বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতা বলে নতুন আইনের আওতায় না নিয়ে এসে কোনোভাবেই এসব ব্যবসাকে অনুমোদন করা উচিত নয়। আগে নিয়ন্ত্রণমূলক জায়গায় নিয়ে তারপর অনুমতি নিতে হবে। না হলে ডেসটিনি আবার নতুন আঙ্গিকে এসে গ্রাহক ঠকাবে। সূত্র: নিউজবাংলা
Link copied!