মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আরেক নক্ষত্র ওয়াসিমের বিদায়

প্রকাশিত: ০৩:৫৪ এএম, এপ্রিল ১৮, ২০২১

আরেক নক্ষত্র ওয়াসিমের বিদায়

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কিংবন্তী নায়িকা ‘মিষ্টি মেয়ে’ কবরীর মৃত্যুশোক কাটতে না কাটতেই চলে গেলেন বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি দিনের নায়ক ওয়াসিম। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর শাহাবুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। হাসপাতালের চিকিৎসক জয়ন্ত নারায়ণ শর্মা আচার্য সাংবাদিকদের জানান, নায়ক ওয়াসিমের পরিবারের লোকজন তাকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে রাত ১২টা ৪০ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক জায়েদ খান নায়ক গত রাতে ওয়াসিমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি জানান, কিছুদিন ধরে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন ওয়াসিম। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। এর ঠিক চব্বিশ ঘন্টা আগে শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ২০ মিনিটে মারা যান কবরী। গতকাল শনিবার তাঁকে চোখের জলে বিদায় জানিয়েছেন স্বজন আর ভক্ত অনুরাগীরা। ওয়াসিমের পুরো নাম মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ। বিগত শতকের সত্তর ও আশির দশকের তুমুল জনপ্রিয় নায়ক ছিলেন ওয়াসিম। বিশেষ করে ফোক ফ্যান্টাসি ও অ্যাকশনধর্মীর ছবির অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিনেতা ছিলেন তিনি। অভিনয় জীবনে ১৫২ টির মতো ছবিতে তিনি অভিনয় করেন। ঢাকায় চলচ্চিত্রে ওয়াসিমের অভিষেক হয় সিনেমার সহকারী পরিচালক হিসেবে ১৯৭২ সালে ‘ছন্দ হারিয়ে গেল’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। এরপর ১৯৭৪ সালে প্রখ্যাত চিত্র নির্মাতা মহসিন পরিচালিত ‘রাতের পর দিন’ সিনেমার মাধ্যমে নায়ক হিসেবে রূপালী পর্দায় আত্নপ্রকাশ তাঁর। সিনেমাটি ব্যবসা সফল হলে সুপারস্টার হয়ে উঠেন তিনি। এরপর ১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া এস এম শফী পরিচালিত ‘দি রেইন’ সিনেমা তাঁকে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। তিনি হয়ে ওঠে জনমানুষের নায়ক। ‘দি রেইন’ সিনেমাটি এতই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল যে বিশ্বের ৪৬টি দেশে সেটি মুক্তি পেয়েছিল। ১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত চলচ্চিত্রে শীর্ষ নায়কদের একজন ছিলেন তিনি। ওয়াসিম অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হলো দ্য রেইন, ডাকু মনসুর, জিঘাংসা, কে আসল কে নকল, বাহাদুর, দোস্ত দুশমন, মানসী, দুই রাজকুমার, সওদাগর, নরম গরম, ইমান, রাতের পর দিন, আসামি হাজির, মিস লোলিতা, রাজ দুলারী, চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা, লুটেরা, লাল মেম সাহেব, বেদ্বীন, জীবন সাথী, রাজনন্দিনী, রাজমহল, বিনি সুতার মালা, বানজারান। তিনি অলিভিয়া, অঞ্জু ঘোষ ও শাবানার সঙ্গে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। দি রেইন সিনেমায় নায়িকা ছিলেন অলিভিয়া। এরপর ‘বাহাদুর’, ‘লুটেরা’, ‘লাল মেম সাহেব’, ‘বেদ্বীন’ সিনেমায় অলিভিয়ার সঙ্গে অভিনয় করেন। ‘রাজ দুলালী’ ছবিতে শাবানার সঙ্গে অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করেছিলো। অঞ্জু ঘোষের সঙ্গে অভিনয় করেছেন ‘সওদাগর’, ‘নরম গরম’, ‘আবেহায়াত’, ‘চন্দনদ্বীপের রাজকন্যা’, ‘পদ্মাবতী’, ‘রসের বাইদানী’সহ বেশকিছু সিনেমায়। ওয়াসিমের জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৩ মার্চ চাঁদপুরে। ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন তিনি। ১৯৬৪ সালে বডি বিল্ডিংয়ের জন্য তিনি ‘মিস্টার ইস্ট পাকিস্তান’ খেতাব অর্জন করেছিলেন। ওয়াসিমের মৃত্যুর সংবাদে কণ্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবী লিখেছেন, ‘আব্বা (শিল্পী মাহমুদুন নবী) প্রথম জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন, ‘দি রেইন’ ছবিতে ১৯৭৬ সালে ‘আমি আজ ভুলে গেছি সবই’ গানটি জন্য। সেই ছবির নায়ক ওয়াসিমও চলে গেলেন আজ! আর কিছু পারছিনা ভাবতে... মনের ওজন বড়ই ভারি লাগছে... আল্লাহ আমাদের মাফ করুন। সবার জন্য সুস্থতা কামনা করছি। শিল্পী বেঁচে থাকুক দর্শক শ্রোতার মনে। আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করুন। আমিন।’
Link copied!