বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ইন্টারপোলের নিশানায় থাকা ৩ বাংলাদেশি এখন দুবাই

প্রকাশিত: ১২:২৯ পিএম, মার্চ ২৩, ২০২৩

ইন্টারপোলের নিশানায় থাকা ৩ বাংলাদেশি এখন দুবাই

আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায় থাকা ৬২ বাংলাদেশির মধ্যে দু’জন দীর্ঘদিন ধরে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। তারা হলেন– একসময়ের ঢাকার অপরাধ জগৎ কাঁপানো সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ ও আতাউর রহমান মাহমুদ চৌধুরী। ইন্টাপোলের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, জিসানের ঠিকানা ঢাকার খিলগাঁওয়ে আর আতাউরের ফেনীতে। ২০১৯ সালে দুবাই পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন জিসান। এর পর তাঁকে ফেরাতে শুরু হয়েছিল কূটনৈতিক তৎপরতা। তবে এখনও তাঁকে ফেরানো যায়নি। পরে তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে আত্মগোপনে চলে যান। ইন্টারপোলের নিশানায় থাকা জিসান ও আতাউরের সঙ্গে এবার যুক্ত হলো পুলিশ হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম আরাভ খানের নাম। এরই মধ্যে আরাভকে দেশে ফেরাতে বাংলাদেশের আবেদন গ্রহণ করেছে ইন্টারপোল। তবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের ওয়েবসাইটে রেড নোটিশধারী হিসেবে তার নাম যুক্ত করা হয়নি। এদিকে দুবাইয়ে আরাভ ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে অবস্থান করায় ইন্টারপোলের পাশাপাশি ভারতকে নথিপত্র সরবরাহ করেছে বাংলাদেশ। আরাভ ও তাঁর মা-বাবার বাংলাদেশি নাগরিকত্বের সনদের অনুলিপি গতকাল কূটনৈতিক চ্যানেলে ভারতে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশ সদরদপ্তরের মুখপাত্র এআইজি মনজুর রহমান বলেন, আরাভকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের কাছে বাংলাদেশ যে আবেদন করেছে, তা গ্রহণ করা হয়েছে। কেন এখনও রেড নোটিশধারী হিসেবে তার নাম তালিকাভুক্ত করেনি, এটা আমরা জানি না। তবে পুলিশের অপর এক কর্মকর্তা জানান, সাধারণত ইন্টারপোল কোনো দেশের আবেদন গ্রহণ করলেও রেড নোটিশধারী হিসেবে ওয়েবসাইটে নাম তুলতে কয়েক দিন সময় লাগে। এক দেশের অপরাধী অন্য দেশে পালিয়ে গেলে সদস্য রাষ্ট্রগুলো ইন্টারপোলের সহায়তা চায়। ইন্টারপোল নিজে কাউকে গ্রেপ্তার করে না। সদস্য রাষ্ট্রের পুলিশকে অনুরোধ জানায়, ওই অপরাধীকে যেন আইনের আওতায় নেওয়া হয়। তখন ওই দেশের পুলিশ তাদের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। আর বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকলে অপরাধীকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ হয়। রেড নোটিশ থাকার পরও দীর্ঘদিন জিসান ও আতাউরকে দুবাই থেকে ফেরত আনা যায়নি। তবে আরাভের ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই তাকে ফেরত আনার চেষ্টা চলছে। দুবাইয়ের স্থানীয় সূত্র বলছে, দু’দিন ধরে আরাভ আত্মগোপনে রয়েছেন। নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও তাকে দেখা যায়নি। ইন্টারপোল তার ব্যাপারে কার্যক্রম শুরু করেছে– এমন খবর প্রচারের পর থেকে প্রকাশ্যে তাকে দেখা যায়নি। গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো স্ট্যাটাসও দেননি তিনি। অন্য একটি সূত্র বলছে, দুবাই পুলিশের নজরদারিতে আরাভ রয়েছেন। আরাভ তার স্বর্ণের দোকান থেকে সব গহনা সরিয়ে নিয়েছেন। তবে তার দোকানে থাকা ৬০ কেজি ওজনের লোগোটি ফেলে গেছেন। শুরু থেকে আরাভ দাবি করে আসছিলেন, সেটি স্বর্ণের। শেষ পর্যন্ত জানা গেল, লোগোটি স্বর্ণের নয়। এমনকি দুবাই ও বাংলাদেশে নিজের যেসব সম্পদ থাকার গল্প ফেঁদেছেন, এর অধিকাংশ সত্য নয়। এটি তার এক ধরনের প্রতারণার ফাঁদ। পলাতক যেকোনো আসামিকে কূটনৈতিক ও পুশব্যাকের (কোনো দেশ নিজেদের উদ্যোগেই যদি ফেরত পাঠায়) মাধ্যমে দেশে ফেরত আনা যায়। কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় বিনিময় চুক্তি না থাকলেও অপরাধীকে ফেরানো যায়। তবে বন্দি বিনিময় চুক্তি থাকলে দুই দেশের মধ্যে এক ধরনের বাধ্যবাধকতা থাকে। এতে অপরাধীকে ফিরিয়ে আনা তুলনামূলক সহজ। চুক্তি না থাকলে অপরাধী ফিরিয়ে আনার বিষয়টি দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে। সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, দুবাইয়ে আরাভ গ্রেপ্তার হলেও উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে তাঁকে দেশে ফেরানো সম্ভব। যদি তার নামে ইস্যু করা ভারতীয় পাসপোর্ট বাতিল হয়, তাহলে ফেরানোর প্রক্রিয়া সহজ হবে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, দুবাই ও বাংলাদেশে আরাভ যাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন এমন কয়েকজনের ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছেন গোয়েন্দারা। তদন্তের প্রয়োজনে কয়েকজনকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, আরাভ দেশে-বিদেশে নানা ধরনের অপরাধ ও প্রতারণায় যুক্ত। ২০১৮ সালের ৮ জুলাই বনানীর যে ফ্ল্যাটে পুলিশ পরিদর্শক মামুন এমরান খানকে হত্যা করা হয়, সেখানে নারীদের ব্যবহার করে অসামাজিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন আরাভ। এই কাজে তাঁকে সহযোগিতা করতেন প্রথম স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার ওরফে কেয়া। জামিনে গিয়ে কেয়া মালয়েশিয়ায় পালিয়েছেন। মামুন হত্যাকাণ্ডের পর রবিউল ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি বিয়ে করেন। পরে ভুয়া নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি করেন। পাসপোর্টে নাম দেওয়া হয় আরাভ খান। এই পাসপোর্ট নিয়েই তিনি চলে যান দুবাইয়ে। দুবাইয়ে তাঁর মালিকানাধীন ‘আরাভ জুয়েলার্স’ উদ্বোধন করতে যান ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ কয়েকজন তারকা। এর পরই আরাভ আলোচনায় আসেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরাভের ব্যাপারে সাকিবকে অবহিত করার পরও তিনি হত্যা মামলার আসামির অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন। অনেকে এও বলছেন, যাচাই-বাছাই ছাড়া নামিদামি তারকাদের এ ধরনের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া ঠিক নয়। এতে সমাজে নেতিবাচক বার্তা যায়।
Link copied!