মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

ঈদেও জমেনি পার্লার ব্যবসা

প্রকাশিত: ০২:০১ এএম, আগস্ট ১, ২০২০

ঈদেও জমেনি পার্লার ব্যবসা

করোনার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে গত চার মাসে পার্লার ব্যবসায় ধস নেমেছে। ঈদুল ফিতর, পহেলা বৈশাখের মতো বড় আয়োজনে পার্লারগুলোতে অতীতে রমরমা ব্যবসা হলেও এবারে ছিল ভিন্ন চিত্র। লকডাউন থাকায় মার্চের শেষ সময় থেকে টানা এপ্রিল মাস দেশের বেশির ভাগ পার্লার বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়। এখন লকডাউন না থাকায় ঈদুল আজহা সামনে রেখে অনেক পার্লার খুললেও করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় ব্যবসা জমে উঠছে না। করোনার আঘাত হানার আগের সময়ের তুলনায় বর্তমানে পার্লারগুলোতে সেবাগ্রহীতার সংখ্যা তিন ভাগের এক ভাগও হয় না। এমন পরিস্থিতিতে লোকসান পুষিয়ে নিতে অনেক পার্লারে সেবার মূল্য কয়েক গুণ বাড়ানো হয়েছে। এতে সেবাগ্রহীতারা ভোগান্তিতে পড়ছেন। অন্যদিকে টিকে থাকার জন্য খরচ কমাতে এরই মধ্যে অনেক পার্লারে কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে অথবা বেতন কমানো হয়েছে। কাজ হারানো নারীরা আর্থিক অনটনে পড়েছেন। সরেজমিনে রাজধানীর ধানমণ্ডি, মিরপুর, সেগুনবাগিচা, বনানী, গুলশান, উত্তরা এলাকায় খোঁজ নিয়ে পার্লার ব্যবসায়ের এমন চিত্র দেখা যায়। পার্লার ব্যবসায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেন, এভাবে চলতে থাকলে দেশের অধিকাংশ পার্লার লোকসানে পড়ে বন্ধ হয়ে যাবে। একই মত জানিয়ে অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলেন, নারী উদ্যোক্তারাই মূলত পার্লারের ব্যবসা করে থাকেন। এ দেশের ৯০ শতাংশ পার্লারের মালিক নারী উদ্যোক্তারা। তাই পার্লারের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে নারী উদ্যোক্তাদের বড় অংশ মূলধন হারাবে। অন্যদিকে পার্লারে কর্মরতদের প্রায় সবাই নারী। এতে পার্লার বন্ধ হয়ে গেলে নারী বেকারের সংখ্যাও বাড়বে। ব্যবসায়ী নারীদের সংগঠন বাংলাদেশ উইমেন এন্টারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ওয়েব) প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী নাসরিন আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের অনেক সদস্য পার্লার ব্যবসায় জড়িত, অনেকে পার্লারে কাজ করে। গত মার্চের শেষ সময় থেকে পার্লার ব্যবসা ভয়াবহ খারাপ যাচ্ছে। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় অনেক ক্রেতা পার্লারে আসছেই না। ক্রেতা না থাকলে ব্যবসায় লোকসান হবে। পার্লার ব্যবসায় ধস নামায় নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। বরং বেকারের সংখ্যা বাড়ছে।’ বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘করোনা ব্যাধি থেকে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত পার্লার ব্যবসা গতিশীল হবে না। আমাদের দেশে পার্লারের ব্যবসায় নারীরাই বেশি জড়িত এবং পার্লারে কর্মরতদের প্রায় সবাই নারী। তাই পার্লার ব্যবসা লোকসানে থাকা মানেই নারী উদ্যোক্তাদের লোকসানে থাকা। এতে নারী বেকারের সংখ্যা বাড়বে।’ রাজধানীর বনানী এলাকায় ১০ বছরের বেশি সময় থেকে মিংক বিউটি পার্লার সেবা দিয়ে চলেছে। গত মার্চে করোনার কারণে পার্লার বন্ধ রাখা হয়। এই মাসে পার্লার খুললেও সেবা নিতে আসা নারীর সংখ্যা করোনার আগের তুলনায় কম। মিংক বিউটি পার্লারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহানাজ পারভিন বলেন, ‘করোনার কারণে পার্লার বন্ধ রাখলেও এখানে কর্মরতদের নিয়মিত বেতন দিতে হয়েছে। করোনার আগে কোনো কোনো দিনে আমার পার্লারে ৭০ জন নারীও সেবা নিতে এসেছেন। আর এখন ক্রেতা কম।’ ধানমণ্ডি এলাকার বিউটি হারবাল পার্লারের মালিক সেঁজুতি সেন বলেন, করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় একসঙ্গে অনেককে সেবা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। আগে সময় নির্ধারণ করে তারপর কাস্টমারকে আসতে বলি। এতে কাস্টমারের সংখ্যা অনেক কমেছে। এখন টিকে থাকার জন্য প্রতি সেবা গড়ে ২০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছি। বাংলাদেশ বিউটি পার্লার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, সারা দেশে পাঁচ লাখের বেশি পার্লার রয়েছে। রাজধানীর নামকরা পার্লারের মধ্যে রয়েছে পারসোনা, ওমেন্স ওয়ার্ল্ড, ফারজানা শাকিল, মিংক বিউটি পার্লার ও হারবাল, রুচিতা, সাজ, ঐশি, একান্ত, বধূয়া, নোলক, ঝলক, জলনূপুর, হংকংসহ একাধিক পার্লার। বিভাগীয় ও জেলা শহরের অভিজাত এলাকাসহ পাড়া-মহল্লায় পার্লার গড়ে উঠেছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মেহনাজ তাবাসুম কালের কণ্ঠকে বলেন, আগে নিয়মিত পার্লারে গেলেও করোনা সংক্রমণের ভয়ে গত এপ্রিল ও মে মাসে পার্লারে যাইনি। গত মাসের শেষে গিয়েছিলাম। আগের তুলনায় গড়ে ২০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত একেকটি সেবার দাম বেড়েছে।
Link copied!