বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এই বয়সেও আমি সবদিক দিয়ে তৃপ্ত : মুহিত

প্রকাশিত: ১২:৫৮ পিএম, জানুয়ারি ২৫, ২০২২

এই বয়সেও আমি সবদিক দিয়ে তৃপ্ত : মুহিত

দেশ ও দশের সেবায় যিনি সারা জীবন নিবেদিত, যিনি ছাত্র অবস্থায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সংস্পর্শে আসেন আর তাঁরই ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন, বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে একজন দিকপাল হিসেবে যিনি সুপরিচিত, তিনি হলেন বাংলাদেশের রেকর্ডকারী সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। আজ আবুল মাল আব্দুল মুহিতের শুভ জন্মদিন। আজ থেকে ৮৮ বছর আগে ২৫ জানুয়ারি সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরীর কোলজুড়ে যে সন্তান পৃথিবীর আলোর মুখ দেখেছিল, সেই মুখ একদিন বড় হয়ে দেশ ও দশের জন্য নিবেদিত হবে তা আগে কল্পনাও করেননি। তবে পারিবারিক পরিবেশ তাকে অনেক উৎসাহিত, অনুপ্রাণিত করেছিল এখন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ, পরিবারের সব সদস্য শিক্ষা ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রায় পৌঁছেছেন। যে কারণে খুব কম সময়ে আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সুনাম দেশ ছেড়ে বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিকভাবে অর্থনীতি ও উন্নয়নে একজন উচ্চমানের বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। শিক্ষার পাশাপাশি নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন একজন সমাজসেবক ও সংগঠক হিসেবে। যে কারণে দেখা যায় বাংলাদেশ স্বাধিকার ও মুক্তিসংগ্রামে তার ছিল দৃঢ় পদক্ষেপ। বহুমুখী বিরল প্রতিভার অধিকারী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে খুব সহজে বিচার বিশ্লেষণ করা যাবে না। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা এক কুড়ির বেশি। কোনোটি ইংরেজিতে, আবার কোনোটি বাংলায় লেখা। ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত ‘স্মৃতি অমøান, ২০০০ সালে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের জনরাষ্ট্রের উদ্ভবসহ অনেক বই পাঠকদের মনের খোরাক জোগায়। এ কথা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, তিনি প্রথম কূটনীতিবিদ যিনি একজন সিএসপি জাঁদরেল আমলা হয়েও মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ পরিত্যাগ করে বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য প্রর্দশন করেন। ওই সময়ে তিনি ‘তমঘায়ে পাকিস্তান’ উপাধি বর্জন করেন। আর সে সময় সিএসপিদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের জন্মলগ্নে আবুল মাল আব্দুল মুহিতের অবদান দেশের ইতিহাসে এক অনন্য পর্ব। রাজনৈতিক সচেতনার পাশাপাশি তার মধ্যে কাজ করে দেশের উন্নয়ন। একই সঙ্গে দেশের সব মানুষের জীবনমান উন্নয়ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনি সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাজেট দিতে সক্ষম হয়েছেন। এখানেই তার কৃতিত্বের পরিচয় বহন করে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সব শক্তিকে এক দৃষ্টিতে দেখেন। যে কারণে বাজেট তৈরি করার আগে তিনি সব শ্রেণির মানুষের মতামতকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। আবুল মাল আব্দুল মুহিত আজ ৮৮ বছরে পা দিচ্ছেন। এই বয়সে কত স্মৃতি কত কথা মনে ভিড় করে। কোনোটা আবার স্মৃতির ভেলায় চড়ে হারিয়ে যায়, আবার কোনোটা স্মৃতির মণিকোঠায় জ্বলজ্বল করে। তার জন্মদিন উপলক্ষে কিছু কথা, কিছু স্মৃতি জানতে টেলিফোনে শরণাপন্ন হয়েছিল সময়ের আলোর প্রতিনিধি। করোনা ও ওমক্রিনের কারণে সরাসরি উপস্থিতি হওয়া সম্ভব হয়নি। কথার শুরুতে আবুল মাল আবদুল মুহিতকে ভারতের বিখ্যাত শিল্পী আশা ভোসলের গাওয়া ‘আমার দিন কাটে না/ আমার রাত কাটে না’ গানের এই কলি স্মরণ করিয়ে দিই। প্রশ্ন রাখি যে মানুষটা সারা দিন সারা রাত কাজের মধ্যে ডুবে থাকতেন আজ তার দিন কাটে কীভাবে? প্রশ্ন শুনেই হেসে উঠলেন স্বভাবগতভাবে। বললেন, আমি তো অবসরে আছি। আমার তো সময় কেটে যায় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে। পেপার পড়ে, আর খাওয়া দাওয়া, বই পড়া তো আছেই। কথায় কথায় অনেক কথা। আগে তো একটা লম্বা কর্মজীবন কাটিয়েছি কাজের মধ্য দিয়ে। তখন তো খুব একটা সময় পেতাম না পড়াশোনার। এখন তো পড়ার সুযোগ পাচ্ছি। কর্মজীবনে কোনো ধরনের অতৃপ্তি আছে কি না? কোনো কিছু ভাবনায় না এনে অকপটে বলেন, আমি তো এমন কোনো কাজ করিনি যে অতৃপ্তি থেকে যাবে। আমার কর্মজীবন ভালোমন্দ মিলিয়ে ছিল। কখনও অতৃপ্তি অনুভব করিনি। আমি শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছি কোনো ধরনের যেন অতৃপ্তি না থাকে। মন্ত্রী থাকাকালে আমার যতদূর মনে পড়ে আমি কাউকে এমন কোনো কথা বলিনি বা এমন কোনো কাজ করিনি যাতে কেউ মন্দ বলে। তবে হ্যাঁ, আমি যাদের সঙ্গে কাজ করেছি তাদের মতের সঙ্গে কখনও কখনও পার্থক্য হলেও, কোনো ধরনের অতৃপ্তি থাকিনি। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, তৃপ্ত জীবন নিয়ে আমি এখন ৮৮ বছরে পা দিয়েছি। বলা যায়, আমি একজন তৃপ্ত মানুষ। সময় কাটছে কীভাবে? আবারও এই প্রশ্নে তিনি সাবলীল কণ্ঠে জানালেন, লেখালেখি করছি। আমার আত্মজীবনী দুখণ্ড বের হতে যাচ্ছে। এটা অনেক আগেই বের হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কী জানি প্রকাশের ভাগাভাগি হয়ে যাওয়ার কারণে একটু দেরি হয়ে গেল। মন্ত্রী থাকাকালে আপনি কাউকে কোনো বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন কি না? এই প্রশ্নে তিনি অবলীলায় বলে ফেললেন, না এমনটা হয়নি। আমার অনেক বন্ধু আছে তারা হয়তো নিতে চেয়েছে। কিন্তু আমি ন্যায্যতা দেখেছি। হ্যাঁ, যদি দেখি তার এটা পাওয়ার যোগ্যতা আছে, তখন মতামত দিয়েছি। আপনার অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু করোনাকালে চিরবিদায় নিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে কথা তুলতেই তিনি বললেন- হ্যাঁ, অনেক বন্ধু তো চলে গেছেন। অনেকদিন তাদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। আর সুযোগও ছিল না। আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল এসব বন্ধু-বান্ধব চলে যাওয়াতে। এখন খুব কম বন্ধু-বান্ধব বেঁচে আছেন। কথায় কথায় তিনি বিদেশে দুয়েকজন বন্ধুর কথা জানালেন। এদের মধ্যে লন্ডনে নিযুক্ত হাইকমিশনারের কথা বিশেষভাবে বলতে হয়। তিনি আমার খুব প্রিয়। আমার খুব ইচ্ছে ছিল তাদের সঙ্গে দেখা করার। কিন্তু হবে কি না তাও বলতে পারছি না। এখনকার পরিস্থিতিতে দেখা করার সুযোগও কম। আপনার মন্ত্রিত্বকালে এমন কোনো স্মৃতি আছে যা আপনাকে নাড়া দেয়। প্রশ্ন শুনে কিছুক্ষণ যেন দম নিলেন। বললেন, অনেক স্মৃতি, কোনটা রেখে কোনটা বলি। তবে আমি কী কাজ করেছি সেটা তারাই মূল্যায়ন করবে। আমি বলতে পারব না কোন কাজটা আমি ভালো করেছি, আর কোনো কাজটা মন্দ করেছি। চেষ্টা করেছি ভালো কাজ করার। অফুরন্ত অবসরে আপনি কি গান শোনেন? এক সময় আপনি প্রচণ্ডভাবে রবীন্দ্রসঙ্গীত পছন্দ করতেন। এখন কি করেন? বিশেষ করে রেজওয়ানা চৌধুরী বণ্যার গান শোনেন। হেসে দিলেন আমার এই প্রশ্ন শুনে। তিনি বললেন, আমি সবার গানই শুনি। তবে আমার কাছে নজরুলের গান ভীষণ ভালো লাগে। তার গানের রাগ আছে। বৈচিত্র্য আছে। তাকে আমার কাছে পণ্ডিত মনে হয়। তা না হলে এত রাগের সমাহার হবে কেন? এ ছাড়াও তার গানের হিন্দু, মুসলমানসহ বিভিন্ন ধমের্র পটভূমি আমাকে খুব টানে। ৮৮ বছরে পা দিয়ে আপনার অনুভূতি কেমন? এই প্রশ্ন করতেই তিনি কিছুটা যেন দম নিলেন। বললেন, ভালোই লাগছে। মানুষ এতদিন বাঁচবে সেটাই তো পরম পাওয়া।
Link copied!