বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

একজনের রয়েছে ১৫টি জাহাজ, বিআইডবিøউটিএর ১২ কর্মকর্তা নজরদারিতে

প্রকাশিত: ০৮:৪৯ এএম, অক্টোবর ১৪, ২০২১

একজনের রয়েছে ১৫টি জাহাজ, বিআইডবিøউটিএর ১২ কর্মকর্তা নজরদারিতে

ডেইলি খবর ডেস্ক: একজনের রয়েছে ১৫টি জাহাজ,বিআইডবিøউটিএর ১২ কর্মকর্তা নজরদারিতে। সরকারী চাকরির বেতনভাতা দিয়ে যেখানে একটি জাহাজও কেনা সম্ভব নয়,কিন্তু নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়াধীন বিআইডবিøউটিএর চাকুরিজীবী কয়েকজন শিপিং লাইন্স ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন শতকোটি টাকা। শুধূ কি তাই তারা যৌথভাবে গড়ে তুলেছেন‘ডজন রোজ’নামের একটি কোম্পানিও গঠন করেছেন। যে কোম্পানির বহরে চলছে একাধিক জাহাজ।আছে নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানও। ভয়াবহ দুর্নীতির এ অভিযোগ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডবিøউটিএ) বর্তমান ও সাবেক ১২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এরমধ্যে অবসরে যাওয়া সাবেক উপপরিচালক আবু বকর ছিদ্দিক নামে-বেনামে অন্তত ১৫টি জাহাজের মালিক হয়েছেন।সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য দুদক থেকে তাদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য চেয়ে বিআইডবিøউটিএ-এর চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দুদকের নজরদারিতে আছেন এসব কর্মকর্তা। তাদের অবৈধ সম্পদের বিষয়েও খোঁজ নিচ্ছে স্বাধীন সংস্থাটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন,এসব কর্মকর্তা মূলত ঘুস-দুর্নীতির টাকায় ফুলেফেঁপে উঠেছেন। কর্মস্থলে তাদের দায়িত্ব হলো জাহাজের রুট পারমিট দেওয়া, নদী ও ঘাট ব্যবস্থাপনা মনিটরিং,ড্রেজিং, বয়াবাতি সংরক্ষণ করা। অনেক শর্ত পূরণ সাপেক্ষে রুট পারমিট অনুমোদন দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে পর্দার আড়ালে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। প্রত্যেক কর্মকর্তার বিষয়েই গভীরভাবে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে বিআইডবিøউটিএ-এর চেয়ারম্যানের কাছে প্রয়োজনীয় নথিপত্র চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিছু নথিপত্র সংগ্রহও করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আয়কর নথি চাওয়া হবে। এরপর তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব পর্যালোচনা করা হবে।এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিআইডবিøউটিএ-এর পরিচালক (প্রশাসন) আবু জাফর হাওলাদার বলেন,দুদকের চিঠি আমরা পেয়েছি। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছিল, এর অধিকাংশই সরবরাহ করা হয়েছে। আরও তথ্য চাইলে আমরা তাও সরবরাহ করতে প্রস্তুত।যে কারণে নজরদারিতে বিআইডবিøউটিএ কর্মকর্তারা-দুদকের আমলে নেওয়া অভিযোগে বলা হয়, বিআইডবিøউটিএ-এর সাবেক উপপরিচালক আবু বকর ছিদ্দিক নামে-বেনামে অন্তত ১৫টি জাহাজের মালিক। গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর তিনি স্বেচ্ছায় অবসরে যান। অধিকাংশ জাহাজের মালিকানাসংক্রান্ত কাগজপত্র তিনি তার স্ত্রী ইসরাত জাহান পাপড়ির নামে করেছেন। তার মালিকানাধীন জাহাজগুলো হলো-এমভি রাজহংস-৭ (এম-৬৭৮৬), রাজহংস-৮ (এম-৯৯৭৭), রাজহংস-১০ (এম-০১-২০৭৭) এবং বন্ধন-৫ (এম-০১-১২১৮)।এর মধ্যে রাজহংস-১০-এর যাত্রী ধারণক্ষমতা ৬১৬ জন। ১৫ কোটি টাকা মূল্যের জাহাজটি ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল রেজিস্ট্রেশন পারমিট পায়। এছাড়া এমভি রাজহংস-৭ এবং ৮-এর প্রতিটির মূল্য ১৩ থেকে ১৪ কোটি টাকা। রাজহংস-৮-এর মালিক হিসাবে ইসরাত জাহান পাপড়ি জাহাজ মালিক সমিতির সদস্য হন। তার সদস্য নম্বর-৭৩। কোম্পানির কাগজপত্রে সই-স্বাক্ষর সবই মি.সিদ্দিকের।মালিক সমিতির সবাই জানেন স্ত্রী সামনে থাকলেও আবু বকর ছিদ্দিকই সব। স্ত্রী ইসরাত জাহান পাপড়িকে জাহাজ মালিক দেখিয়ে দুটি কোম্পানি খোলা হয়। এর একটি হচ্ছে মেসার্স বে-ওয়াটার সার্ভিস লিমিটেড। অপরটি মেসার্স বন্ধন ওয়াটার ওয়েজ। যাত্রীবাহী জাহাজের পাশাপাশি বেনামে শিপিং লাইন্সের (কার্গো জাহাজ) ব্যবসাও আছে আবু বকর ছিদ্দিকের। কোম্পানির নাম আল জামিউ শিপিং লাইন্স লিমিটেড,যা বাংলাদেশ-ভারত প্রটোকল রুটে পণ্য পরিবহণকারী প্রতিষ্ঠান।জানতে চাইলে সংস্থাটির সাবেক উপপরিচালক আবু বকর সিদ্দিক বলেন,সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় আমি কোনো দুর্নীতি করিনি। আমার কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদও নেই। আমার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। দুদক এর অনুসন্ধান শুরু করলে আমরা তা আইনানুগ মোকাবিলা করব। বিআইডবিøউটিএ-এর সাবেক এবং বর্তমান ১২ কর্মকর্তা যৌথভাবে‘ডজন রোজ’বা ১২ গোলাপ নামে একটি কোম্পানি গড়ে তুলেন। এ কোম্পানির বহরে ইতোমধ্যে একাধিক জাহাজ চলাচল করছে। আরও বেশ কয়েকটি জাহাজ নির্মাণাধীন। এর মধ্যে রূপগঞ্জের আলম মেরিন শিপ বিল্ডার্সের ডকইয়ার্ডে নির্মিত রোজ-১ (এম-২০-৭৪৬) নামের বিশাল জাহাজটি ডজন রোজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াজুল ইসলাম ওরফে মনিরের নামে নিবন্ধিত।আবু বকর ছিদ্দিক ছাড়াও বিআইডবিøউটিএ-এর আরও ১১ সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা ডজন রোজ কোম্পানির সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যুক্ত। তাদের মধ্যে একজন আছেন এমদাদুল হক। তিনি নিুমান সহকারী পদ থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। তিনি এমভি সুমনা হক জাহাজের মালিক। এছাড়া দুজন আছেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা,অন্যরা কর্মরত। তাদের মাধ্যমে পরিচালিত হয় এমভি সুমনা হক,শাহরুখ-১,২-রিজেন্ট-১০,এমভি সোহেলী এবং এমভি স্বর্ণদ্বীপ-৪।যেসব নথিপত্র তলব করা হয়েছে:বিআইডবিøউটিএ-এর ওই এক ডজন কর্মকর্তার বিষয়ে নানা তথ্য চেয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের কাছে ২৯ সেপ্টেম্বর চিঠি দেওয়া হয়। দুদকের এক উপপরিচালক মো:মশিউর রহমান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বর্তমান পদবি ও কর্মস্থল সংক্রান্ত প্রতিবেদন চাওয়া হয়। চিঠিতে বিআইডবিøউটিএ-এর রেজিস্ট্রেশন নিয়ে পরিচালিত এমভি রাজহংস-৭,এমভি রাজহংস-৮,এমভি রাজহংস-১০,এমভি বন্ধন-৫,আল জামিউ-১,আল জামিউ-২,আল জামিউ-৩,ডজন রোজ-১,এমভি সুমনা হক,শাহরুখ-১,রিজেন্ট-১০,এমভি সোহেলী ও স্বর্ণদীপ-৪ নৌযানের মালিকানা ও রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রের কপি সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।এছাড়া নৌযানগুলো পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত মেসার্স বে-ওয়াটার সার্ভিসেস লিমিটেড,বন্ধন ওয়াটার ওয়েজ,আল জামিউ শিপিং লাইন্স লিমিটেড ও ডজন রোজের মালিকানাসংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্রের কপি সরবরাহ করতে বলা হয়।সুত্র-যুগান্তর
Link copied!