শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১

’ওয়ান সিটি টু টাউন’প্রথম টানেল যুগে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৯:৩৪ এএম, অক্টোবর ২৮, ২০২৩

’ওয়ান সিটি টু টাউন’প্রথম টানেল যুগে বাংলাদেশ

মাহমুদা আক্তার খানম: ওয়ান সিটি টু টাউণ’কর্ণফুলী নদীর তলদেশ থেকে ১০৫ ফুট গভীরে টানের নির্মাণের মধ্য দিয়ে প্রথম টানেল যুগে প্রবেশ করল বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম এ টানেলটি শুধু চট্টগ্রাম শহরের দুই প্রান্তরকে যুক্ত করবে না, হবে শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের যোগসূত্র। মাটির প্রায় ১৪০ ফুট গভীরে নির্মিত ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের টানেলটি গাড়িতে পাড়ি দিতে সময় লাগবে তিন থেকে সাড়ে তিন মিনিট। টানেলে দুটি টিউব রয়েছে। এই টিউবগুলো কর্ণফুলী নদীর তলদেশ থেকে ১০৫ ফুট গভীরে নির্মাণ করা হয়েছে। গাড়ির জট যাতে না হয়, সে জন্য রয়েছে ২০টি টোল বুথ। প্রকল্প সুত্রগুলো জানায় কর্ণফুলী নদীতে বিভক্ত চট্টগ্রাম শহরকে সাংহাইয়ের মতো ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ হিসেবে গড়তে টানেল নির্মাণের পরিকল্পনা করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর টানেল নির্মাণে প্রকল্পটি তাঁর সরকারের অনুমোদন পায়। পরের বছরের ১৪ অক্টোবর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে টানেলের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। সাত বছর পর বাস্তবে রূপ নিয়েছে টানেল। স্বাধীনতার ৫২ বছরে টানেলযুগে প্রবেশ করেছে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ। আনন্দের এই ক্ষণ উদযাপনে বর্ণিল সাজে সেজেছে কর্ণফুলীর দুই তীর। সেতু কর্তৃপক্ষের বক্তব্য নির্মাণ করা টানেলে গাড়ি চলাচলের কারণে শুধু দূরত্বই কমবে না, বাঁচবে সময় ও খরচ। কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রামের দূরত্ব কমবে ৪০ কিলোমিটার। মহেশখালীতে চলমান ৭২টি প্রকল্পের সুফল সারাদেশ পাবে আরও কম সময়ে। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেল বাংলাদেশের জন্য গৌরবের, চট্টগ্রাামের জন্য গর্বের। দেশের অর্থনীতি বিনির্মাণে এই টানেল যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।একাধিক অর্থনীতিবিদরা মনে করেন দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতির জন্য লাভজনক হবে টানেল। এদিকে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন ১০০ বছর আয়ুষ্কাল ধরে এবং ৯ মাত্রা ভুমিকম্প সহনীয় মাত্র নিয়ে এ টানেল তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক মো: হারুনুর রশীদ চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এটি নির্মাণে বহু চ্যালেঞ্জ ছিল। নির্মাণকাজের ৫ শতাংশ এগিয়ে গেলে টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) দিয়ে কাজ করতে করতে মনে হয়েছে, এটি ওপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। তখন একবার মনে হয়েছে, কাজটি সহজ নয়, কঠিন। তাছাড়া এ ধরনের কাজের অভিজ্ঞতাও নেই দেশের প্রকৌশলীদের। এরপর ৫০ শতাংশ কাজের পর ধরা পড়ে মাটি নরম। টানেলের মাঝামাঝি স্থানটি আরও দেবে যাচ্ছে। টিবিএম কাজ করছে না ঠিকমতো। এজন্য চার মাস অতিরিক্ত সময় লাগে। এ রকম নানা জটিলতা পার করে আজ যান চলাচলের উপযোগী হয়েছে টানেলটি। এদিকে টানেলের এক প্রান্ত চট্টগ্রাম শহরের পতেঙ্গায়। আরেক প্রান্ত কর্ণফুলীর দক্ষিণ প্রান্তের আনোয়ারায়। এ এলাকার মিরসরাইয়ে হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় শিল্পনগর। পাঁচ শতাধিক কারখানা স্থাপিত হবে। আবার কক্সবাজারের মহেশখালীতে হচ্ছে ৭২টি বড় প্রকল্প। গভীর সমুদ্রবন্দরও সেখানে।আনোয়ারায় রয়েছে কোরিয়ান ইপিজেড ও চীনা শিল্পাঞ্চল। এসব প্রকল্পের পণ্য পরিবহনে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করবে এই টানেল। প্রকল্প সুত্র জানায় ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে কাজ সম্পন্নের লক্ষ্যে টানেল নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। পরে ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বরে ১ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি এবং বাস্তবায়ন সময় দেড় বছর বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করে সরকার। তাতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। করোনার কারণে কাজ বাধাগ্রস্থ হলে বাড়ে প্রকল্প মেয়াদ। প্রকল্প ব্যয় বেড়ে হয় প্রায় ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২০ বছর মেয়াদে ঋণ দিচ্ছে ৬ হাজার ৭০ কোটি টাকা। চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। সুত্র জানায়, আগুন, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প থেকে রক্ষায় টানেলে থাকছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। টানেলের ভেতরে রয়েছে অগ্নিনিরোধক বোর্ড। টানেলটি ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় করে নির্মাণ করা হয়েছে। উদ্বোধনের পর টানেল রক্ষণাবেক্ষণে পারফরম্যান্স বেজড মেইনটেন্যান্স পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। টোল আদায় করা হবে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে। প্রবেশের আগে গাড়িগুলো স্ক্যান করা হবে। টানেলের ভেতরে হেঁটে পার হওয়া, গাড়ি থামানো ও ছবি তোলা যাবে না। অযান্ত্রিক, দুই ও তিন চাকার যানও চলবে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুবিজুর রহমান টানেলটি এশিয়ার মধ্যে প্রথম কোনো টানেল যা পানির নীচ দিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটা দুরত্ব পার হতে লাগবে সাড়ে তিন মিনিট।
Link copied!