শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়ালটনের টেন্ডার জালিয়াতি

প্রকাশিত: ১০:৩০ এএম, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১

ওয়ালটনের টেন্ডার জালিয়াতি

ডেইলি খবর ডেস্ক: টেন্ডার জালিয়াতি ওয়ালটনের। ব্যবসার আড়ালে সরকারের জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পে ট্যাব (ট্যাবলেট কম্পিউটার) সরবরাহের কাজ পেতে জাল কাগজের মাধ্যমে দরপত্র দাখিল করেছে ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ। জুন মাসে স্ট্যাম্প কিনে চুক্তি দেখানো হয়েছে আড়াই বছর আগে। এছাড়া বিদেশি কোম্পানি থেকে ট্যাব এনে নিজের নামে দেশীয় পণ্য বলে চালানোর চেষ্টাও করা হয়েছে। এ বিষয়ে ওয়ালটনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সংশ্লিষ্ট প্রকল্প। ওয়ালটনের এই জালিয়াতির বিষয়টিকে চিঠিতে প্রতারণা ও জবরদস্তিমূলক কাজ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।অভিযোগ আছে পন্য বিক্রিতেও নানারকম কারসাঝি করে যাচ্ছে ওয়ালটন। প্রায় শো রুমে ইজিয়ার মেশিন তারা ব্যবহার করে না। বিল-ভাওচার এনালগে। কৌশলে সরকারের বিপুল অঙ্কের ট্যাক্্র-ভ্যাট ফাকিতেও সিদ্ধ হস্ত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক কবির উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, আমরা কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলাম। ওয়ালটন জবাব দিয়েছে। তবে সেটি সন্তোষজনক কিনা এই মুহূর্তে বলা যাবে না। অপরদিকে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে,আইন-কানুন এবং শর্ত মেনেই তারা দরপত্র দাখিল করেছে। সরকারকে ট্যাক্্র-ভ্রাটসহ সার্বিত নিয়মকানুন মেনেই ওয়ালটন ব্যবসা করে।সূত্র জানায়, সরকার জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পে ট্যাবলেট কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য পরিসংখ্যান ব্যুরো গত ২৩ জুন দরপত্র আহ্বান করে। ইজিপি পদ্ধতিতে ৩ লাখ ৯ হাজার ট্যাব কেনার জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করলে ওয়ালটন ছাড়াও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়। কিন্ত ওয়ালটনের দরপত্র মূল্যায়নের সময় বেশ কিছু গুরুতর ত্রুটি ও জালিয়াতির বিষয় ধরা পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, গত ২ সেপ্টেম্বর ওয়ালটন ডিজি টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এসএম মঞ্জুরুল আলম অভিকে প্রকল্পের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানো নোটিশটি দেওয়া হয়। দরপত্র মূল্যায়নের উদ্ধৃতি দিয়ে এতে বলা হয়, ওয়ালটনের দলিল ও নমুনা ট্যাব ২০০৮ সালের পিপিআর,এর বিধি ১২৭(২) ধারা অনুসারে প্রতারণা। এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অভিজ্ঞতার সনদ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি একই গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন প্লাজার সঙ্গে ওয়ালটন ডিজি টেকের একটি চুক্তি হয়। যার মূল বিষয় ছিল, চাহিদা অনুযায়ী ওয়ালটন ডিজি টেককে ট্যাব সরবরাহ করবে ওয়ালটন প্লাজা। কিন্তু ওই বছর ১ জানুয়ারি চুক্তির তারিখ দেখানো হলেও সরকারের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ক্রয়ের তারিখ লেখা আছে চলতি বছরের ৩০ জুন। অর্থাৎ এতে প্রমাণিত হয় যে, চুক্তিপত্রে আড়াই বছর আগের যে তারিখ লেখা হয়েছে তা সঠিক নয়। বাস্তবে তারা চুক্তিটি করেছে গত ৩০ জুনের পরে। সেক্ষেত্রে এটি একটি বড় ধরনের জালিয়াতি। দ্বিতীয়ত, ট্যাব সরবরাহের দরপত্রে ওয়ালটন ডিজি টেক অংশ নিয়েছে গত জুলাই মাসে। অথচ ওয়ালটন প্লাজাকে ট্যাব সরবরাহের জন্য ক্রয়াদেশ দিয়েছে ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি। এটি তো শুধু অবিশ্বাস্য নয়, আরও একটি প্রতারণার আশ্রয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকের চিঠিতে বিষয়টিকে অসামঞ্জস্য বলে উল্লেখ করা হয়। তৃতীয়ত, ডকুমেন্টে ট্যাবলেটের প্রস্তাবিত ব্র্যান্ড দেখানো হয়েছে, ওয়ালটন এবং মডেল নাম ওয়ালটন ৮এ । কিন্তু ট্যাব সিস্টেম ওপেন করলে ব্র্যান্ড নাম আসে ওয়ালপিএসএবং মডেল নাম আসে এএলপিএস ওয়ালপ্যাড ৮এ । অর্থাৎ বিদেশি একটি কোম্পানির কাছ থেকে ট্যাব আমদানি করে তা দেশে এনে আউটলুকে ওয়ালটনের লোগো বসিয়ে নিজেদের নামে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রকল্পের চিঠিতে এ বিষয়ে বলা হয়, ক্রয় প্রক্রিয়া চলাকালীন ওয়ালটনের ডিএমডি মো: লিয়াকত আলী বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে বিভ্রান্তিমূলক, অসত্য ও অপবাদমূলক তথ্য সংবলিত আবেদন ও পত্রাদি দাখিল করেছেন। যা সরকারি ক্রয় কার্যক্রমকে প্রভাবিত করার শামিল। এ ধরনের প্রতারণা ও জবরদস্তিমূলক কার্যক্রমের কারণে কেন ওয়ালটনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে ৭ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। ওই সময়সীমা অনুসারে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জবাব দেওয়ার কথা। তবে ইতোমধ্যে ওয়ালটন জবাবও দিয়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোকে দেওয়া জবাবে ওয়ালটন ডিজি টেকের ডিএমডি লিয়াকত আলী স্বাক্ষতির চিঠিতে বলা হয়েছে, তারা আইন-কানুন মেনেই আবেদন করেছেন। চুক্তির আড়াই বছর পর স্ট্যাম্প কেনার ব্যাখ্যায় বলা হয়, ওয়ালটন প্লাজার কাছে চুক্তির মূল কপি ছিল। কিন্তু করোনার কারণে সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল এ প্রতিষ্ঠান। ফলে আরেকটি স্ট্যাপে ওই চুক্তির হুবহু নকল দাখিল করা হয়। এছাড়া ট্যাব ওপেন করলে যে বিদেশি কোম্পানির নাম আসার বিষয়ে বলা হয়, এটা সফটওয়্যারের বিষয়। অপরদিকে সরকারি ক্রয় কার্যক্রমকে প্রভাবিত করার অভিযোগটি সঠিক নয় বলে চিঠিতে দাবি করা হয়। এদিকে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, গত ২৫ আগস্ট ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে ট্যাব কেনার প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হয়। কিন্তু উপযুক্ত ক্রয় প্রতিযোগিতা না থাকায় মতামত দিয়ে ক্রয় প্রস্তাব বাতিল করে পুনঃদরপত্রের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন,ওয়ালটনের জালিয়াতির বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে এভাবে ক্রয় প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যাওয়ায় প্রকান্তরে ওয়ালটন লাভবান হয়েছে। এর ফলে তারা নতুন করে ত্রুটিমুক্ত প্রস্তাব দেওয়ার সুযোগ পাবে। পুরো বিষয়টিকে রহস্যজনক বলে অভিহিত করেছেন সংশ্লিষ্টদের অনেকে। সুত্র-যুগান্তর
Link copied!