মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কঠোর হচ্ছে সরকার, বাড়ছে উত্তেজনা

প্রকাশিত: ১১:৪৪ এএম, ডিসেম্বর ৪, ২০২২

কঠোর হচ্ছে সরকার, বাড়ছে উত্তেজনা

ঢাকায় ১০ ডিসেম্বরে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ কোথায় হবে, তা নিয়ে সরকার ও বিএনপির মধ্যে এখনো কোনো বোঝাপড়া হয়নি। নিজেদের পছন্দের স্থান নিয়ে দুই পক্ষই আছে অনড় অবস্থানে। এ অবস্থায় গতকাল শনিবার রাতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসার সামনের সড়কে তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে ব্লক রেইডও শুরু করে পুলিশ। আর আমিনবাজার থেকে যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এদিকে সমাবেশস্থল নিয়ে ঠেলাঠেলির মধ্যে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে কার্যালয়ের সামনের সড়ক বিভাজকের পাশে এ বিস্ফোরণ ঘটে। এরপরই সেখানে পুলিশি পাহারা জোরদার করা হয়। বিএনপি আগে থেকেই অভিযোগ করে আসছে তাদের সমাবেশ পণ্ড করতে সবকিছু করছে সরকার। গায়েবি মামলা করা হচ্ছে, সেই মামলায় গ্রেপ্তার করে হয়রানি করা হচ্ছে নেতা-কর্মীদের। এখন নতুন করে ঢাকায় পুলিশের অভিযান, বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসার সামনে পুলিশ চেকপোস্ট বসাল। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, ১০ ডিসেম্বরের কর্মসূচি ঘিরে কঠোর হচ্ছে সরকার। বিএনপির নেতাদের কথাবার্তায়ও মনে হচ্ছে তারাও ছাড় দিতে রাজি নন। দুই পক্ষের এমন কঠোর অবস্থানে উত্তেজনা বাড়ছে দ্রুত। বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার জানান, খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় প্রবেশের রাস্তায় চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। গতকাল রাত সাড়ে নয়টার দিকে চেকপোস্ট বসানো হয়। এ ছাড়া চেয়ারপারসনের বাসভবন ফিরোজায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, রাত সাড়ে আটটার পর থেকে বনানীর কাকলী এলাকায় ইনসাফ আবাসিক নামে একটি হোটেল ঘিরে রাখে পুলিশ। সন্ত্রাসীরা আত্মগোপন করে আছে বলে তাদের কাছে খবর আছে, সেই তথ্যের ভিত্তিতে তারা অভিযান চালিয়েছেন। বনানী ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ব্লক রেইড করেছে বলে জানা গেছে। নয়াপল্টনের ককটেল বিস্ফোরণের ব্যাপারে জানতে চাইলে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া জানান, এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি। কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। ঘটনা তদন্তে পুলিশ কাজ করছে। ককটেলটি চলন্ত কোনো যানবাহন থেকে নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজনৈতিক মহল বলছে, ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের সময় যত ঘনিয়ে আসছে এ নিয়ে উত্তাপ তত বাড়ছে। দুদলের বাগ্‌যুদ্ধের কেন্দ্রে আছে সমাবেশের স্থান। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। আর বিএনপি বলে আসছে, তারা নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবে। তবে নয়াপল্টন নিয়েও বিএনপির কিছুটা নমনীয় হওয়ার আভাস মিলেছে। দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রয়োজনে নয়াপল্টনের বাইরে সমাবেশ করার চিন্তা আছে তাদের। তবে সেটা সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের আচরণের ওপর নির্ভর করবে। বিএনপি গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামে গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ের এই ধারাবাহিক কর্মসূচি শুরু করে। রাজশাহীর সমাবেশের মধ্য দিয়ে নয়টি সাংগঠনিক বিভাগে গণসমাবেশ করেছে দলটি। এখন ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশের দিকেই সবার দৃষ্টি। ছাড় দেওয়ার ইঙ্গিত বিএনপির নয়াপল্টনে সমাবেশের প্রচারপত্র বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধনকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘সরকার যদি কোনো ঝামেলা না করে, আমাদের দিক থেকে ঝামেলা হওয়ার সম্ভাবনা নাই। সরকারের যদি ভালো কোনো প্রস্তাব থাকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়া, আমাদের বলতে পারে। বিকল্প হতে পারে। তবে সে বিকল্প কখনোই সোহরাওয়ার্দী হবে না।’ নয়াপল্টন ছাড়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না, জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, ‘সমাবেশের স্থান হিসেবে নয়াপল্টনের কোনো বিকল্প নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে আমরা কথা বলব। তার আগে সমাবেশ বানচাল করতে সরকার এবং ক্ষমতাসীন দল যেসব ব্যবস্থা করে রেখেছে, বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে, সেখান থেকে সরে আসতে হবে। সেটা করা হলে আমরাও নয়াপল্টন ছাড়ার বিষয়ে চিন্তা করতে পারি।’ সোহরাওয়ার্দী ধরে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা নয়াপল্টনে নিজেদের কার্যালয়ের সামনেই বিএনপি সমাবেশ করবে, সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তা কিছুতেই চাইছে না। এ জন্য পুলিশ বিএনপিকে নয়াপল্টনের পরিবর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। সেখানেই তারা শেষ পর্যন্ত সমাবেশ করতে বাধ্য হবে—এমনটা ধরে নিয়েই নিজেদের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সাতজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে গতকাল শনিবার এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তাদের প্রায় সবাই বলেছেন, এখন পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্ত ১০ ডিসেম্বর বিএনপিকে কোনোভাবেই নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। সোহরাওয়ার্দীতে না যেতে চাইলে তখন পূর্বাচল বা টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠ বিবেচনা করা হতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ১০ ডিসেম্বরের আগ থেকেই নয়াপল্টন এলাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সেখানে জমায়েতের কোনো সুযোগই দেওয়া হবে না। এখন পর্যন্ত এটাই সিদ্ধান্ত। এখান থেকে সরে আসার সম্ভাবনা কম। সরকারের একজন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বরের আগেই যদি বিএনপি বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে, তাহলে তাদের দমন করার জন্য যা যা করা দরকার, তা করা হবে। তাঁরা মনে করছেন, ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলাম যেভাবে শাপলা চত্বরে বসে পড়েছিল, নয়াপল্টনে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দিলে তেমনই কোনো ঘটনা হতে পারে। তাই একটি সীমানার মধ্যে বিএনপিকে রাখতে চায় সরকার। যাতে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সে ক্ষেত্রে সোহরাওয়ার্দীই উত্তম জায়গা। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যা বলেন, ‘বিএনপি তো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে। আবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছে মাঠ তাড়াতাড়ি হস্তান্তর করতে, যাতে তারা ১০ লাখ লোকের সমাবেশ করতে পারে। সরকার তাদের যেখানে অনুমতি দিয়েছে, সেখানেই করতে হবে। আমার জানামতে, এটা পরিবর্তনের তেমন কিছু নেই।’ এদিকে, রাজারবাগে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকেরা পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের কাছে জানতে চেয়েছিল, বিএনপি যদি নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে যায় পুলিশের অবস্থান কী হবে? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা যেখানে অনুমতি দিয়েছি, আশা করি তারা সেখানেই সমাবেশ করবে। এখনো সময় আছে, বিএনপি দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে বলে আশা করি।’ পরিবহন ধর্মঘট নাও হতে পারে সমাবেশ ঘিরে ঢাকায় পরিবহন ধর্মঘট হবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শুক্রবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের যৌথ বার্ষিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, পরিবহন ধর্মঘট হবে না। পরিবহনের নেতারা আমাদের অনুরোধ রেখেছেন।’ জানতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘৮-৯ ডিসেম্বর পরিবহন ধর্মঘট রয়েছে কি না? সেটি এখন পর্যন্ত আমার জানা নেই।’
Link copied!