শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়: উপাচার্যের দখলে ৮ পদ

প্রকাশিত: ১২:৩২ পিএম, অক্টোবর ২৯, ২০২২

কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়: উপাচার্যের দখলে ৮ পদ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর এই কঠিন দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আরও আটটি গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলেছেন, মূলত নিয়োগ কমিটি কবজায় রাখার জন্য এসব পদ ধরে রেখেছেন তিনি। এর মাধ্যমে তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতে চাইছেন। তবে উপাচার্যের দাবি, তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব থেকে সরে যেতে পারলেই বেঁচে যান। উপাচার্য সৌমিত্র একাধারে আইন, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, ব্যবসায় প্রশাসন ও চারুকলা অনুষদের ডিনের দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল এবং মার্কেটিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, ইনস্টিটিউট অব নজরুল স্টাডিজের পরিচালক এবং কেন্দ্রীয় জার্নাল কমিটির সম্পাদকও তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পরিপন্থি তাঁর এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলেছে, তিনি এসব পদ আঁকড়ে থাকতে পারেন না। অধ্যাপক সৌমিত্র গত ডিসেম্বরে উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ছয়টি অনুষদের ২৪টি বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮ হাজারের বেশি। কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৬-এর ২২ ধারার ৫ নম্বর উপধারা অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে অধ্যাপকদের মধ্য থেকে ডিন নিয়োগ দিতে হবে। এমনকি বিভাগে অধ্যাপক না থাকলে সহযোগী অধ্যাপকও ডিন হতে পারেন। বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের আটজন এবং ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের আছেন চারজন অধ্যাপক। চারুকলা অনুষদেও আছেন একাধিক সহযোগী অধ্যাপক। দায়িত্ব দেওয়ার মতো যোগ্যরা থাকতেও আইনসহ এসব অনুষদে একাই ডিনের দায়িত্ব পালন করছেন উপাচার্য সৌমিত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী কোনো বিভাগে যদি শুধু একজন অধ্যাপকই থাকেন, যত দিন পর্যন্ত ওই বিভাগে নতুন কোনো অধ্যাপক না হবেন অথবা বিভাগীয় প্রধান দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ না করবেন, তত দিন পর্যন্ত তারই বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালনের কথা রয়েছে। তার ব্যতিক্রম ঘটেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আশরাফ আলী সিদ্দিকীর মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২ অক্টোবর। মেয়াদ শেষ হলেও পুনরায় তাঁরই বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার কথা থাকলেও গত ১২ অক্টোবর উপাচার্য নিজেই সে দায়িত্ব নিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে উপাচার্য জানান, তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান। অধ্যাপক আশরাফ বলেন, 'এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত, তাই এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। তবে দায়িত্ব পালনে আমি অপারগতা প্রকাশ করিনি।' নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক জানান, বিভাগীয় প্রধান ও ডিন ক্ষমতাবলে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য থাকেন। সেই ক্ষমতা কোনো শিক্ষকের হাতে না দিয়ে সব কর্তৃত্ব নিজের কাছে রাখতেই অতিরিক্ত আট দায়িত্বে অধিষ্ঠিত আছেন তিনি। যেমন কোষাধ্যক্ষের পদ শূন্য থাকায় সম্প্রতি মার্কেটিং বিভাগের চারজন শিক্ষক নিয়োগে উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, ডিন, বিভাগীয় প্রধানসহ একাই নিয়োগ বোর্ডের চার সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন উপাচার্য। ওই নিয়োগ বোর্ডে বাইরের দুই বিশেষজ্ঞও ছিলেন তাঁর পূর্ববর্তী কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। শিক্ষকরা আরও বলেন, অন্য কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের একসঙ্গে এত পদে দায়িত্ব পালনের নজির নেই। নিয়োগ অনিয়ম-দুর্নীতির দিকে ইঙ্গিত করে তাঁরা বলেন, একাই নিয়োগ বোর্ডের চার সদস্যের দায়িত্ব পালনের মতো সুযোগ কে হাতছাড়া করতে চায় বলুন? শিক্ষকরা বলেন, নীতিমালা অনুসারে প্রভোস্ট পদে দুই বছরের জন্য দায়িত্ব দেওয়ার নিয়ম থাকলেও উপাচার্য দিয়েছেন অনির্দিষ্টকালের জন্য, অর্থাৎ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. শেখ সুজন আলী বলেন, ব্যক্তিগত স্বার্থ আর নিজের হাতে ক্ষমতা ধরে রাখতেই হয়তো তিনি যোগ্যদের কাছে দায়িত্ব অর্পণ করছেন না। আমরা চাই, নিয়ম ও আইন অনুযায়ী চলুক কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকাণ্ড। এ ব্যাপারে উপাচার্য সৌমিত্র বলেন, 'আমার আগে উপাচার্যের দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি যেসব দায়িত্বে ছিলেন, আমি যোগদানের পর আপনা-আপনি সেসব দায়িত্ব আমার ওপর অর্পিত হয়েছে। আমি আগ্রহ ভরে দায়িত্বগুলো নিইনি। এসব দায়িত্ব আমি ছাড়তে পারলেই বাঁচি।' প্রভোস্ট পদের বিষয়ে তিনি বলেন, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মানে দুই বছরের বেশি নয়। এটা কৌশল মাত্র। ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম বলেন, এসব অনুষদে অধ্যাপক থাকতেও তিনি কেন দায়িত্ব পালন করছেন, তা জানি না। ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, এত এত অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক থাকতে কোনোভাবেই একজন উপাচার্য একাই এতসব দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। এটা চরম অনিয়ম ও আইনবহির্ভূত।  
Link copied!