বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কম হজযাত্রী নিয়েও বড় চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ১১:৫৫ এএম, মে ৮, ২০২২

কম হজযাত্রী নিয়েও বড় চ্যালেঞ্জ

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী হজ ফ্লাইট শুরুর আর মাত্র ২৩ দিন বাকি। কিন্তু হজ সম্পর্কিত প্রকৃত আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম দেশে এখনো শুরুই হয়নি। সৌদি আরবের পক্ষ থেকে হজের খরচ সম্পর্কিত তথ্য না পাওয়ায় অনেক কাজই এগোতে পারছে না ধর্ম মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে হজ কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞ কর্মকর্তা কম থাকায় এটিও নতুন চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। হজ কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেওয়া ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বর্তমান বেশিরভাগ কর্মকর্তার হজ সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা নেই। গেল দুই বছর হজে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না। এ সময়ে হজ কার্যক্রমে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের অনেকে পদোন্নতি পেয়ে বা বদলি হয়ে অন্য জায়গায় চলে গেছেন। মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে থাকা প্রতিমন্ত্রী ও সচিব- দুজনই হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এবারই প্রথম দায়িত্বে আছেন। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান হজ কার্যক্রমে চ্যালেঞ্জের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি যুগান্তরকে বলেন, এবার হজযাত্রায় সময় কম পাওয়ায় আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। তবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। আশা করি বড় সমস্যা ছাড়াই হজ পর্ব শেষ করতে পারব। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে ৯ জুলাই। চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে ৫৭ হাজার ৮৫৬ জন হজে যেতে পারবেন। সৌদি আরব থেকে পাওয়া খরচের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার হজ প্যাকেজ ঘোষণা করবে। সেই ঘোষণা অনুযায়ী হজ যাত্রীরা এজেন্সিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করবে। এরপর এজেন্সিগুলো সৌদি আরবে গিয়ে বাড়ি ভাড়া ও থাকা-খাওয়া সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করবে। সৌদি আরবে মোয়াল্লেম (যিনি হজের সময় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন) নিয়োগও করা হয় তখন। এরপর যেসব এজেন্সি নির্ধারিত কোটার যাত্রী পাবেন না তারা অন্য এজেন্সির সঙ্গে মিশে সরকারি শর্ত পূরণ করবে। এসব কার্যক্রম সম্পন্ন করতে আগে কয়েক মাস সময় পেত হজ এজেন্সিগুলো। হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর, ফ্লাইটের আগে এবার কতদিন সময় মিলবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। তাই সরকার ঘোষিত ৩১ মের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে হজ ফ্লাইট শুরু করা সম্ভব হবে না-এ বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত সংশ্লিষ্টরা। দীর্ঘদিন ধর্ম মন্ত্রণালয়ে হজ সংক্রান্ত কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন এমন একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, নতুন কর্মকর্তাদের জন্য হজের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব সম্পন্ন করা বিশাল চ্যালেঞ্জের। বর্তমানের অনেক কর্মকর্তা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাজ করে যাওয়া সাবেক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন বিষয় জেনে নিচ্ছেন। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সাবেক একজন অতিরিক্ত সচিব উদাহরণ দিয়ে বলেন, আপনার অফিসে যদি প্রথমেই কাউকে এনে রিপোর্ট করতে বসিয়ে দেন তিনি কি পারবেন? সব কাজই এমন, পুরোনোদের সঙ্গে কাজ করতে করতে নতুনদের অভিজ্ঞতা হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ে প্রায় সব কর্মকর্তা নতুন হওয়ায় কিছুটা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তাদের অনেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আমরা সাধ্যমতো প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি। হজযাত্রীর সংখ্যা কম হওয়ায় একটা সুবিধা আছে, তবে হজ বিষয়টি স্পর্শকাতর বিধায় সর্বতোভাবে সতর্ক থাকার বিকল্প নেই। হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি শাহাদাত হোসাইন তসলিম যুগান্তরকে বলেন, এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সময়। সৌদি আরব থেকে চূড়ান্ত তথ্য না পাওয়ায় প্যাকেজ ঘোষণা হচ্ছে না। প্যাকেজ ঘোষণার পর সৌদি যাত্রার পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হবে। এত অল্প সময়ে এগুলো সম্পন্ন করা খুবই কঠিন। তিনি বলেন, এবার হজযাত্রী কম হওয়ায় যতটা সহজ হবে ভেবেছিলাম সময় স্বল্পতার কারণে সেটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ের সবাই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আশা করি সমন্বিত উদ্যোগে আমরা ভালোভাবে হজ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবো। শূন্যকোটায় আবেদন : ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত এবারের হজে ৬৫ বছরের (পাসপোর্ট অনুযায়ী যাদের জন্ম ১৯৫৭ সালের ১ জুলাই বা এর পর) কম বয়সি ব্যক্তিই শুধু হজ পালনের যোগ্য বিবেচিত হবেন। ফলে ১৯৫৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে যাদের জন্ম তারা এ বছর হজে যেতে পারবেন না। তবে যেসব হজযাত্রী ২০২০ সালের হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন এবং বয়স এরই মধ্যে ৬৫ বছর অতিক্রম করছে, তার পরিবর্তে পরিবারের একজন সদস্য (৬৫ বছরের কম বয়সি) এ শূন্য কোটায় হজে যাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এমন শূন্য কোটায় হজে যেতে আগ্রহী ব্যক্তিকে বেসরকারি এজেন্সির ক্ষেত্রে নিজ নিজ এজেন্সির মাধ্যমে এবং সরকারি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দ্রুত প্রাক-নিবন্ধন গ্রহণ করে ১০ মের মধ্যে প্রাক-নিবন্ধনের ট্র্যাকিং নম্বর এবং যার পরিবর্তে হজে যেতে চান তার ট্র্যাকিং নম্বর স্লিপসহ ঢাকার আশকোনায় হজ অফিসের পরিচালকের কাছে সরাসরি বা ই-মেইলের মাধ্যমে লিখিতভাবে আবেদন করতে হবে। ওই সময়ের পর আর কোনো আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না। হাব খোলা ৭ দিন : এদিকে হজসংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে এখন থেকে সপ্তাহে প্রতিদিন অফিস খোলা রাখার ঘোষণা দিয়েছে হাব। সংগঠনটির সভাপতির স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ১১টা এবং অন্যান্য দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত হাব অফিস খোলা থাকবে।
Link copied!