শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কলকাতায় করোনা রোগীদের মৃতদেহ সৎকারে রমরমা বাণিজ্য!

প্রকাশিত: ০৫:১৩ এএম, মে ২, ২০২১

কলকাতায় করোনা রোগীদের মৃতদেহ সৎকারে রমরমা বাণিজ্য!

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভারতে প্রতিদিন হাজার হাজার রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। আর সেই মৃত রোগীদের দেহ সৎকারে চলছে রমরমা বাণিজ্য। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতায় দেহ সৎকারে বিভিন্ন ‘প্যাকেজও’ চালু হয়েছে এরই মধ্যে। আনন্দবাজার জানিয়েছে, করোনায় মৃতদের দেহ সৎকার করা নিয়ে কলকাতায় শহরে নানা অলিখিত ‘প্যাকেজ’ চালু হয়েছে। প্রতিদিন মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে যত বাড়ছে, ততই সেই সব প্যাকেজের খরচ বাড়ছে। কারো থেকে স্রেফ সরকার নির্ধারিত শ্মশানে মৃতদেহ পৌঁছে দিতে ১২ হাজার তো কারও থেকে ১৫ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। যদিও গত বছর এই সব করতে তিন হাজার টাকার বেশি নেওয়া যাবে না বলে ঘোষণা করেছিল পৌরসভা। কিন্তু এখন শুধু বাড়তি টাকা চাওয়াই নয়, প্রিয়জনের শেষকৃত্যের ছবি পাওয়ার বা বিশেষ কিছু জিনিস মৃতদেহের সঙ্গে পাঠানোর ইচ্ছে থাকলে সেই সংক্রান্ত খরচও আলাদা করে দিতে বলা হচ্ছে মৃতের পরিবারকে। আবার মোটা টাকার প্যাকেজ নিতে রাজি থাকলে বাড়ি বসেই মিলছে চিতাভস্ম! রয়েছে মৃতদেহের সঙ্গে শেষ বার ছবি তোলার ‘ইচ্ছাপূরণের’ সুযোগও! খবরে বলা হয়, ‘লাস্ট রাইটস উইশ’, ‘গুডবাই’, ‘সি ইউ ইন দ্য অ্যানাদার ওয়ার্ল্ড’ নামে বেশ কিছু সংস্থা তৈরি হয়েছে গত কয়েক দিনে। বেসরকারি হাসপাতাল তো বটেই, সরকারি হাসপাতাল থেকেও এই সব সংস্থা কোভিড মৃতদের দেহ সৎকারের জন্য নিয়ে যাচ্ছে। বেসরকারি ক্ষেত্রে হাসপাতাল থেকেই মৃতের পরিবারের ফোন নম্বর তাদের দিয়ে দেওয়া হচ্ছে কমিশনের ভিত্তিতে। এমনই একটি সংস্থার নম্বরে ফোন করা হলে, মৃতের নাম, ঠিকানা, তিনি কোন হাসপাতাল ভর্তি ছিলেন জেনে নিয়ে বলা হয়, ‘শেষকৃত্যের ছবি লাগবে? যদি লাগে, তা হলে আলাদা ১৫০০ টাকা। মৃতদেহের সঙ্গে তার পছন্দের কিছু পাঠাতে হলে আরও হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ১৬ হাজার পাঁচশো!’ এত? এ বার ওই ব্যক্তি বলেন, ‘অন্য রোগ হলে দু’হাজারও লাগত না। তা ছাড়া, আপনাদেরটা যাতে আগে হয়, সেটা আমরা দেখে দেব।’ বিডন স্ট্রিটের এমনই আর একটি সংস্থার আবার দাবি, ‘ছবি বা চিতাভস্ম না লাগলে আট হাজারে হয়ে যাবে। কিন্তু প্রচুর দেহ আসছে। ফলে কয়েক দিন যদি মৃতদেহটা কোথাও রেখে দিতে হয়, তা হলে কিন্তু আলাদা খরচ।’ কোথায় রাখা হবে? সংস্থার দাবি, ‘পৌরসভার কোনো জায়গাই ফাঁকা নেই। রেফ্রিজারেটর বসিয়ে আমরাই একাধিক জায়গা করেছি, যেখানে দিন কয়েক দেহ থাকতে পারে।’ আর একটি সংস্থা আবার মৃতদেহের শেষকৃত্য থেকে শ্রাদ্ধের কাজ— সবই ২০ হাজার টাকায় করে দেওয়ার ‘প্যাকেজ’ ঘোষণা করেছে। কলকাতা পৌরসভা থেকে কোভিড মৃতদেহ শ্মশানে পৌঁছে দেওয়ার অনুমতি পাওয়া এক সংস্থার মালিক বললেন, ‘মৃত্যুর আগে যেমন রোগ নিয়ে ব্যবসা চলছে, মৃত্যুর পরে মৃতদেহ নিয়েও একই জিনিস চলছে। প্রশাসনের কোনও হুঁশই নেই। আমরা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া তিন হাজারের বেশি এক টাকাও নিচ্ছি না। ২২টা ছেলে আমার সংস্থায় কাজ করছে।’ ভুক্তভোগী এক কোভিডে মৃতের আত্মীয়ের মন্তব্য, ‘রাজধানীর অবস্থা রোজ দেখছি, আর ভয় ধরছে। এখানেও তেমনটা হওয়ার আগে প্রিয়জনকে সসম্মানে বিদায় জানাতে চাই। এইটুকু চাওয়া নিয়েও যারা ব্যবসা করছেন, তারা আর যা-ই হোন, মানুষ নন।’
Link copied!