শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কাজে না গিয়েও মাসে মাসে বেতন লুটে তারা

প্রকাশিত: ০৯:১৫ এএম, জুলাই ২৪, ২০২২

কাজে না গিয়েও মাসে মাসে বেতন লুটে তারা

ডেইলি খবর ডেস্ক: চাকরির আইন নিজেরাই তৈরি করেন তাই কাজে না গিয়েও মাসে মাসে বেতন লুটে নেন তারা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বর্জ্য পরিবহনে নিয়োজিত গাড়িগুলোতে চালকের সহকারী পদে লোক আছে ৬২ জন। তাঁদের বেশির ভাগই নিজেরা কাজে যান না।তাতে প্রতি মাসের বেতন পেতে কারোর সমস্যা হচ্ছে না। বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নেন না বর্জ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। কারণ, কাজে না যাওয়ার বিনিময়ে চালকের সহকারীরা প্রতি মাসে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দেন, যা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মীদের কাছে ‘দস্তুরি’ (দালালি বা কমিশন) নামে পরিচিত। সহকারীদের এমন স্বেচ্ছাচারিতায় ভুগতে হচ্ছে চালকদের। তাঁদের অভিযোগ, কোনো চালক সহকারীদের কাজে না আসার বিষয়ে কথা বললে ওই চালককে সহকারীর বেতন থেকে কিছু টাকা দেওয়া হয়। কোনো কোনো সহকারী আবার নিজেই অন্য একজনকে চালকের সঙ্গে কাজ করতে পাঠিয়ে দেন। আর কোনো চালক টাকা নিতে রাজি না হলে, এই চালকের জন্য সহকারীর বরাদ্দই বাতিল করা হয়।কাজে না গিয়ে সহকারীদের বেতন নেওয়ার বিষয়ে বলেন,‘আমরা লেবার ফাংশনে কাজ করি, আমাদের ত্রুটি থাকবেই। যেসব চালক হেলপার পাচ্ছেন না, তাঁরা একটু অভিযোগ করেনই।মনিরুজ্জামান চৌধুরী, ডিএনসিসির অঞ্চল-৪ এর সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাকাজ না করেই চালকের সহকারীদের প্রতি মাসে পারিশ্রমিক নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এস এম শরিফ-উল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে তাঁরা অবগত নন। চালকের সহকারীরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৪ এর অধীনে কাজ করেন। শিগগির ওই অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সময় ২০১১ সালের জানুয়ারিতে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে মোট ১০০ চালকের সহকারী (ট্রাক ক্লিনার) নিয়োগ করা হয়। ওই বছরই নভেম্বরে ঢাকাকে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এই দুই সিটি করপোরেশন হিসেবে বিভক্ত করা হয়। তখন ঢাকা উত্তর সিটিতে ৬৭ চালকের সহকারী চলে আসেন। তাঁদের মধ্যে ৬২ জন এখনো ঢাকা উত্তর সিটিতে রয়েছেন। বাকিদের মধ্যে দুজন সম্প্রতি ডিএনসিসির ভারী চালক পদে পরীক্ষা দিয়ে নিয়োগ পেয়েছেন। অন্যরা চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।দস্তুরি দিলেই সব মাফ-চালকের যেসব সহকারী নিজে কাজ করেন না, কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে তাঁদের প্রতি মাসে দস্তুরি দিতে হয়। এই দস্তুরি দেওয়ার বিষয়টি স্বীকারও করেছেন আবদুল আজীজ নামে একজন সহকারী। যাঁরা এ কাজ করেন তাঁরা প্রত্যক্ষভাবে দোষী। জেনেও এ কাজ যাঁরা প্রতিহত করছেন না, তাঁরাও এ জন্য দায়ী। সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনা দরকার।ইফতেখারুজ্জামান,টিআইবির নির্বাহী পরিচালক-ঝাড়ু বাদ দিয়ে দপ্তরি আদায়-সহকারীদের কাছ থেকে যিনি দস্তুরি আদায় করেন,সেই আবদুর রব মূলত ডিএনসিসির ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতাকর্মী (ঝাড়ুদার)। তবে রাস্তা ঝাড়ু দেওয়ার কাজ না করে তিনি ডিএনসিসি ৪ নম্বর অঞ্চলে সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান চৌধুরীর দপ্তরে কাজ করেন। আবদুর রব বলেন, ‘দস্তুরি কী আমি জানি না। আমি কারও কাছে দস্তুরি চাই না।’ অন্যদিকে আবদুর রব রাস্তা ঝাড়ু দেওয়ার কাজ করেন কি না, খোঁজ নেওয়া হলে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দুজন সরদার জানান, রব রাস্তা ঝাড়ু দেওয়ার কাজে আসেন না। চালকের সহকারীর দায়িত্ব নগর ভবনে-ঢাকা উত্তর সিটির পরিবহন বিভাগের তালিকা অনুযায়ী কনটেইনার ক্যারিয়ার, কম্পেক্টর এবং খোলা ট্রাক সব মিলিয়ে ডিএনসিসিতে ময়লাবাহী গাড়ির সংখ্যা প্রায় ১৫০টি। বিপরীতে চালকের সহকারী আছেন মাত্র ৬২ জন। এমন সংকট থাকলেও একজন সহকারীকে কাজ করানো হচ্ছে নগর ভবনে। তাঁর নাম ইউসুফ আলী মোল্লা। কাজ করছেন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে। সম্প্রতি নগর ভবনে গিয়ে ইউসুফ আলীকে নগর ভবনের দশম তলায় ওই বিভাগে পাওয়া যায়। ওই শাখার অন্য কর্মীদের কাছে জানা যায়, ইউসুফ পিয়নের কাজ করেন। নগর ভবনে ইউসুফ আলীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি কথা বলতে চাননি। বর্জ্য পরিবহনের গাড়িগুলোর চালকের সহকারীদের তত্বাবধান করেন, ডিএনসিসির অঞ্চল-৪ এর সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান চৌধুরী। কাজে না গিয়ে সহকারীদের বেতন নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা লেবার ফাংশনে কাজ করি, আমাদের ত্রুটি থাকবেই। যেসব চালক হেলপার পাচ্ছেন না, তাঁরা একটু অভিযোগ করেনই। এ ছাড়া কোনো হেলপার কাজে না এলে তাঁর বেতন কাটা হয়।’ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের পে–স্কেল অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের চালকের সহকারীদের দৈনিক মজুরি ৬০০ টাকা। এই হিসাবে তাঁদের মাসিক বেতন দাঁড়ায় ১৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া তেল ও সাবান কেনার জন্য প্রত্যেককে মাসে আরও ১০০ টাকা করে দেওয়া হয়। চালকের সহকারী অন্তত ১০ জনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়,তাঁরা কেউই নিজেরা কাজে যান না।নিয়োগ পেয়ে দায়িত্ব পালন না করে বেতন–ভাতা নেওয়াটাকে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার বলে উল্লেখ করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, যাঁরা এ কাজ করেন তাঁরা প্রত্যক্ষভাবে দোষী। জেনেও এ কাজ যাঁরা প্রতিহত করছেন না, তাঁরাও এ জন্য দায়ী। সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনা দরকার। খোজ নিয়ে জানা গেছে বেড়ায় ক্ষেত খাচ্ছে। সুত্র-প্রথমআলো  
Link copied!