শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কালেভদ্রে ‘এমডি রেসিডেন্সে’ পা পড়ে তাকসিমের

প্রকাশিত: ১১:১৩ এএম, নভেম্বর ১৭, ২০২২

কালেভদ্রে ‘এমডি রেসিডেন্সে’ পা পড়ে তাকসিমের

রাজধানীর গুলশানে প্রায় দুই বিঘা জমির ওপর আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ি। আভিজাত্যের কোনো কমতি নেই সেখানে। বাড়ির সামনে-পেছনে বাগানের পাশাপাশি রয়েছে গুলশান লেক। দৃষ্টিনন্দন এ বাড়ির নাম ‘ওয়াসা এমডি রেসিডেন্স’। এতে রয়েছেন সার্বক্ষণিক নিরাপত্তারক্ষী। তবে এ বাড়িতে থাকেন না ঢাকা ওয়াসার আলোচিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান। তার এই বাড়ির ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে ধরা হয়েছে মাত্র ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু খালি এ বাসায় প্রতিবছর রক্ষণাবেক্ষণ, মালী, নিরাপত্তারক্ষীসহ কেয়ারটেকারের বেতন বাবদ গুনতে হচ্ছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা। গুলশান-২-এর ৫৫ নম্বর রোডের ১২ নম্বর বাড়ি। দেখতে ওই এলাকার বাকি বাড়িগুলো থেকে আলাদা। এতে রয়েছে ছোট্ট একটি পুকুর। উজ্জ্বল আলোর জন্য রয়েছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বাতি। উঁচু প্রাচীর ঘেরা বাড়িতে রয়েছে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কয়েক শিফটে সেখানে কাজ করেন ছয়জন নিরাপত্তারক্ষী। এ ছাড়া বাড়ির দেখভালের জন্যও রয়েছে আলাদা কর্মচারী। বাগানের জন্য রয়েছে মালী। নিয়মিত কাজ করার পাশাপাশি এসব কর্মচারীরা ওভারটাইমও করেন। সে বাবদও গুনতে হয় টাকা। একসময় বাড়িটি ওয়াসার চেয়ারম্যান রেসিডেন্স নামে পরিচিত ছিল। তবে পরবর্তীতে ওয়াসার পরিচালন ক্ষমতা ব্যবস্থাপনা পরিচালকনির্ভর হওয়ায় এটি পরিচিত হয় এমডি রেসিডেন্স নামে। ওয়াসার খাতা-কলমেও আছে এই নাম। তাকসিম এ খান কালেভদ্রে এ বাড়িতে যান। কোনো বিদেশি অতিথি বা বিশেষ কোনো আয়োজনে বাড়িতে আসেন তিনি—এমনটিই জানিয়েছেন সেখানে দায়িত্বরত কর্মচারীরা। ওয়াসার এমডি রেসিডেন্সের পাশেই নতুনভাবে তৈরি হয়েছে ওয়াসা কর্মকর্তাদের জন্য কোয়ার্টার। এর প্রতিটি অ্যাপার্টমেন্টের মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। গত ১৮ সেপ্টেম্বর তাকসিম এ খানের অনুমোদনক্রমে ওয়াসার সচিব প্রকৌশলী শারমিন হক আমীর বাসা ভাড়ার এমন অফিস আদেশ জারি করেন। গত ১৪ মার্চ অনুষ্ঠিত ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের ২৮৮তম সভায় বাসা বরাদ্দ (আবাসিক নিবাস) নীতিমালা অনুমোদন করা হয়। এতে বলা হয়, গুলশানের ‘ওয়াসা রেসিডেন্স’ বরাদ্দপ্রাপ্ত হবেন ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রধান ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ (সিনিয়র) টাইপ: ১৬০০ বর্গফুট বা তদূর্ধ্ব বাসা পাবেন ঢাকা ওয়াসার প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা অথবা বেতন গ্রেড ষষ্ঠ থেকে তদূর্ধ্ব। এ টাইপ: ১০০০/১৫০০ বর্গফুটের বাসা পাবেন এর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারী অথবা বেতন গ্রেড সপ্তম থেকে দশম। বি টাইপ: ৬০০/৯০০ বর্গফুটের বাসা পাবেন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী অথবা বেতন গ্রেড ১১তম থেকে ১৬তম। সি টাইপ: ৫০০/৫৫০ বর্গফুটের বাসা পাবেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী অথবা বেতন গ্রেড ১৭তম থেকে ২০তম। নীতিমালার ৯ নম্বর ধারায় বলা হয়, আবাসনের বরাদ্দ হস্তান্তরযোগ্য নয়। কর্মচারী বা তার পরিবার সাধারণভাবে বরাদ্দকৃত বাসায় বসবাস না করলে তা বাতিলযোগ্য হবে। ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, ওই বাড়ি সংলগ্ন ওয়াসার কর্মকর্তা কোয়ার্টারে একেকটি ফ্ল্যাটে ভাড়া বাবদ ধরা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এমনকি ভাড়ার বাইরে কর্মকর্তাদের বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও অন্যান্য ইউটিলিটির বিল আলাদাভাবে পরিশোধ করতে হয়। তারা বলছেন, ওয়াসার বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গত এক যুগে তিনি ওয়াসা রেসিডেন্সে স্থায়ীভাবে থাকেননি। যদিও সেখানে প্রতিবছর প্রায় অর্ধকোটি টাকারও বেশি খরচ হয়। এর মধ্যে প্রতিবছর ছোটখাটো মেরামত ও বাসা রং করতে হয়। ছয়জন নিরাপত্তারক্ষী দায়িত্ব পালন করেন। কেয়ারটেকারের পাশাপাশি রয়েছেন আলাদা মালীও। তারা আরও বলেন, গুলশান এলাকায় জমির মূল্য অনেক বেশি। ওয়াসা এমডি রেসিডেন্স যেহেতু ব্যবহৃত হয় না, তাই এ সম্পত্তি ভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়। যেখানে ওয়াসার আয় বাড়বে। এ বিষয়ে জানতে তাকসিম এ খানকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফাকে ফোন করা হলে তিনিও রিসিভ করেননি। পরে তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে কল করলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। আমি তো কিছু করিনি। যারা করেছে তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করেন।’ সূত্র: কালবেলা
Link copied!