মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কোটি কোটি টাকা লোপাটের মেধা প্রকৌশলীর

প্রকাশিত: ০৫:৪৩ এএম, এপ্রিল ৬, ২০২১

কোটি কোটি টাকা লোপাটের মেধা প্রকৌশলীর

কোটি কোটি টাকা লোপাটের মেধা প্রকৌশলীর। করোনা পরিস্থিতিও তার কাছে পরাভুত। ঠিকাদারি ও সরকারি চাকরি একসাথেই চালিয়ে যাচ্ছেন সড়ক ও জনপথ (সওজ) সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম। তিনি চাকরির পাশাপাশি পুরোদমে ঠিকাদারি চালিয়ে কোটি কোটি টাকা লোপাট করছেন। নিরাপদে এই ব্যবসা চালিয়ে যেতে ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়েছেন ছোট বোনের স্বামীর নামে। এটি তার বাড়তি পয়সা কামানোর বড় হাতিয়ার। এটি দিয়েই কৌশলে একচেটিয়া কাজ বাগিয়ে নেন। তিনি যেখানেই পোস্টিং পান সেখানেই এই ঠিকাদারি লাইসেন্সের বিপরীতে কাজ হাতিয়ে নেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির নাম এমটি এন্টারপ্রাইজ। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে প্রায় দেড়শো ঠিকাদারি কাজ পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। জরুরি মেরামত কাজের নামে ডিপিএম (দরপত্র ছাড়াই) পদ্ধতিতে কোটি কোটি টাকা লোপাট হয়েছে এই লাইসেন্স দিয়েই। তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, এমটি এন্টারপ্রাইজ ছাড়াও আরও কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত এই নির্বাহী প্রকৌশলী। পছন্দের ঠিকাদার কাজ না পেলে তিনি কৌশলে তা বাতিলে পটুহস্ত। এমনকি সিলেটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর নামে ভুয়া স্মারক তৈরি করে সর্বনিম্নকে বাদ দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতাকে কাজ দিতে পিছপা হননি। মুস্তাফিজুর রহমান নামে একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী এই নির্বাহী প্রকৌশলীর বিশ্বস্ত সিপাহশালার। তিনিই গোপন সব কাজ তদারকি করেন। প্রায় ৫ বছর ধরে সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগে কর্মরত আছেন এই মুস্তাফিজ। গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। স্বাভাবিক বদলি করা হয় মাদারীপুরে। এক সপ্তাহের মধ্যে এই বদলি স্থগিত করে ক্ষমতার জানান দিতে সক্ষম হন। রহস্যজনক কারণে সওজের প্রধান প্রকৌশলী এক আদেশে নির্বাহী প্রকৌশলীর ইচ্ছানুযায়ী আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত তাকে সুনামগঞ্জেই রেখে দেন। এর কারণ জানতে চাইলে সিলেট সওজের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘সুনামগঞ্জ জেলায় কোটি কোটি টাকার কাজ নির্বাহী প্রকৌশলী নিজের কবজায় রেখেছেন। সুনামগঞ্জ কাচিরগাতি-বিশম্বরপুর ও সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কে ৬টি এবং মদনপুর-দিরাই-শাল্লা রাস্তার মেরামত কাজ নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। এই কাজের মূল ঠিকাদার নওগাঁর আমিনুল হক প্রাইভেট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি মূলত সরাসরি এই টেন্ডারে অংশ নেয়নি। তার লাইসেন্সটি ভাড়া আনা হয়েছে এমটি এন্টারপ্রাইজের নামে।’ সুনামগঞ্জ সড়ক বিভাগে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘নির্বাহী প্রকৌশলী নিজেই ৪ কোটি ২২ লাখ টাকার এই কাজ করাচ্ছেন। আগাম সতর্কতার অংশ হিসাবে স্থানীয় ঠিকাদারকে সঙ্গে রেখেছেন। মুস্তাফিজ ও নির্বাহী প্রকৌশলী মিলে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করেছেন। ওই কর্মকর্তারা আরও বলেন,‘দুর্নীতি দমন কমিশনের উচিত এই দুই কর্মকর্তার নামে-বেনামে গড়ে তোলা সম্পদের অনুসন্ধান করা। না হলে ভবিষ্যতে যারা আসবেন তারাও একই কাজ করবেন। প্রকৃত কাজ থেকে বঞ্চিত হবে জেলার মানুষ। তারা এই অঞ্চল থেকে কোটি কোটি টাকা সামারি করে নিয়ে গেছেন। যা চোখে দেখা না গেলেও মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে গেছে। ‘আলোচিত ঠিকাদারির লাইসেন্স: এমটি এন্টারপ্রাইজের মালিক মূলত মোস্তাফিজুর রহমান। তার পিতার নাম মো. শাহাজান প্রধানীয়া। বাড়ি চাঁদপুর সদরের আশিকাঠি রালদিয়া গ্রামে। ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে প্রথম শ্রেণির ঠিকাদারি ও সরবরাহকারীর লাইসেন্সটি তার নামে ইস্যু হয় ২০১৬ সালের ৮ মে। ট্রেড লাইসেন্সটিতে ঢাকার গুলশানের ৪০/২ ইউনিকর্ন প্লাজায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দেয়া হয়। সেখানে এই নামে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। চাঁদপুরের ঠিকানায় যোগাযোগ করে জানা যায়, এই মোস্তাফিজুর রহমান সওজের সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলামের আপন ছোট বোন আফরোজা বেগমের স্বামী। জহিরুল ইসলামের বাড়িও ওই এলাকার পার্শ্ববর্তী পাইকগাছা গ্রামে। মোস্তাফিজ প্রকৌশলী জহিরুলের আপন খালাতো ভাইও। তিনি যেখানে চাকরি করেছেন সেখান থেকেই সড়ক ও জনপথের কোটি কোটি টাকার জরুরি মেরামতের কাজ এই প্রতিষ্ঠানের নামে নিয়েছেন। গত বছরের ২৮ জানুয়ারি সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে যোগ দেন জহিরুল ইসলাম। বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী ২০০৮ সালে সুনামগঞ্জে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে ছিলেন। তাই এই জেলার ক্ষেত্রগুলো তিনি জানেন। যে কারণে জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ভয়াবহ সব অভিযোগ থাকার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উল্টো বদলির আদেশটাও স্থগিত করা হয়েছে। যে কারণে জহিরুল ইসলাম সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতি করেই যাচ্ছেন। এ কারণে এই সেক্টরের লুটপাটের টাকা কোন কোন ঘাটে যায় তারও অনুসন্ধান প্রয়োজন। এমন দাবি সংশ্লিষ্টদের। তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রতি টেন্ডারেই একজন ঠিকাদারের পক্ষে সরাসরি অবস্থান নেন জহিরুল ইসলাম। কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে গোপনে পরিচালনাও করেন তিনি। অনলাইনে টেন্ডার (ইজিপি) আহ্বানের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় আগ থেকে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দরদাতার তথ্য পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দরপত্র খোলার পর যখন দেখেন তার পছন্দের ঠিকাদার সর্বোচ্চ দরদাতা তখন নিয়ম অনুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দিতে গড়িমসি শুরু করেন। এক পর্যায়ে নানা কৌশলে দরপত্রের পুরো প্রক্রিয়াই বাতিল করে পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করেন। প্রতিবেদকের কাছে জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে এ ধরনের কয়েকটি কাজের নথিপত্র এসেছে। এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথের প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুস সবুরের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। যত অনিয়ম: গত বছরের ১১মে টেন্ডারের শেষ দিন নির্ধারণ করে এসফল্টের (রাস্তা মেরামতের ফিনিশিং জিনিসপত্র) সরবরাহের ২০ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করেন নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম। যার আইডি নম্বর ৪৫৪৭৭৩। টেন্ডার নথিপত্র বাছাইকালে দেখতে পান নিজের পছন্দের ঠিকাদার এমটি এন্টারপ্রাইজ সর্বোচ্চ দরদাতা হয়। নিয়মানুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দেয়ার কথা। তা না করে এই নির্বাহী প্রকৌশলী কালক্ষেপণ করতে থাকেন। পরে গত বছরের জুন মাসের শেষের দিকে সর্বনিম্ন দরদাতা সিলেটের রনি এন্টারপ্রাইজকে বাদ দেয়া হয়। নিজের পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সর্বোচ্চ দরদাতা মেসার্স এমটি এন্টারপ্রাইজকে কাজ দিতে কাগজপত্র তৈরি করেন। এরপর নথিটি সিলেটের তৎকালীন তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনোয়ারুল আমিনের অনুমোদনের জন্যে পাঠানো হয়। প্রকৃত তথ্য গোপন করে সর্বোচ্চ দরদাতাকে কাজ দেয়ার এই প্রক্রিয়ার বিষয়টি জানতে পারে সর্বনিম্ন দরদাতা রনি এন্টারপ্রাইজ। পরে বঞ্চিত এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়। বিষয়টি বিধিসম্মত না হওয়ায় তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অনুমোদন না দিয়ে নথিটি নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে ফেরত পাঠান। এরপর নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম ফের মেসার্স এমটি এন্টারপ্রাইজের পক্ষেই অবস্থান নেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সিলেট সড়ক সার্কেলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অনুমোদন না দিয়ে নথিটি আবারও সুনামগঞ্জে পাঠান। এমন চিঠি চালাচালির মধ্যে টেন্ডার আহ্বানের সময় শেষ হয়ে যায়। নিয়ম হচ্ছে দরপত্র বাতিল বা সময় শেষ হয়ে গেলে সম্পূর্ণ টাকা সরকারি ফান্ডে ফেরত পাঠাতে হয়। অথচ নির্বাহী প্রকৌশলী তা না করে ৪৫৪৭৭৩ আইডি নম্বরে টেন্ডার আহ্বানের ২০ লাখ টাকা থেকে ৮ লাখ টাকার জরুরি মেরামত দেখিয়েছেন। গত বছরের ৩০ জুন ২১৭৬ নং স্মারকে ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা ফেরত দেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সড়ক বিভাগের একজন নির্বাহী প্রকৌশলী পদাধিকারবলে প্রতিটি ডিপিএমে ১ লাখ টাকার কাজ সরাসরি অনুমোদন দিতে পারেন। সেই ক্ষমতা অপব্যবহার করে জরুরি কাজের নামে সরকারি টাকা লোপাটের আয়োজন করা হয়। নিরপেক্ষভাবে তদন্ত হলেই বিস্তারিত জানা যাবে। ওই কর্মকর্তা বলেন, এসফল্ট (রাস্তার জরুরি মেরামত কাজে যাবতীয় যা লাগে) সরবরাহের এই টেন্ডারের জন্য বরাদ্দ ২০ লাখ টাকা সওজের কোষাগারে ফেরত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সে টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত না দিয়ে ডিপিএমের মাধ্যমে প্রায় ৮ লাখ টাকা বিভিন্ন নামে-বেনামে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এসফল্ট সরবরাহ না পেলে জরুরি কাজ করবে কী দিয়ে? এসব কাজ তো আর পানি বা মাটি দিয়ে তো করা যায় না। অর্থাৎ ডিপিএমে ভাঙাচোরা রাস্তা মেরামতসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় দেখিয়েছেন তিনি। এসফল্ট সরবরাহই যখন পেলেন না, কাজ করলেন কীভাবে? অভিযোগ করেন ওই কর্মকর্তা। এ ছাড়া ৪৬২২৮১ নং আইডিতে ২০ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয় সাপেক্ষে ব্রিজ ও কালভার্ট রং করার একটি কাজ টেন্ডার আহ্বান করা হয় গত বছরের ১৯ মে। ওই দরপত্রে ৪ জন ঠিকাদার অংশ নেয়। এই কাজটিও এমটি এন্টারপ্রাইজকে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম। জনবল ও সরঞ্জামাদি পর্যাপ্ত নেই বলে অসত্য তথ্য দিয়ে তিনি কৌশলে ২টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ননরেসপনসিভ (অযোগ্য) করে দেন। এরপর এমটি এন্টারপ্রাইজকে কাজ দিতে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কাছে নথি পাঠান। তখন ভুক্তভোগী মহল থেকে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়া হলে তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফাইলে অনুমোদন দেননি। এরপর ভয়াবহ জালিয়াতির আশ্রয় নেন নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম। তিনি গত বছরের ১৪ জুন তারিখ উল্লেখ করে তত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দপ্তরের ১২৪২ নং স্মারক জালিয়াতি করে এমটি এন্টারপ্রাইজকে ২০ লাখ ৪০ হাজার টাকার কাজের কার্যাদেশ প্রদান করেন। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত প্রধান প্রকৌশলীকেও অবহিত করা হয়। এরপর বাধ্য হয়ে এই কার্যাদেশ বাতিল করা হলেও অভিযুক্ত নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে জালিয়াতির কোনো শাস্তি দেয়া হয়নি। এমনকি এই টাকাও আর সরকারি কোষাগারে ফেরত দেয়া হয়নি। রাস্তা জরুরি মেরামত দেখিয়ে ওই টাকাও আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ২৪ জানুয়ারি ৫২৭১৫৫ নং আইডিতে সিলেট-সুনামগঞ্জ রোডে ১ কোটি ৪০ লাখ ব্যয়ে পাগলাবাজারে বাস বে নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এই কাজের ক্ষেত্রে নির্বাহী প্রকৌশলী অন্য একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অবস্থান নেন। ইজিপি টেন্ডারে দাখিলকৃত নথিপত্র দেখে তিনি বুঝতে পারেন তার পছন্দের ঠিকাদার শর্ত অনুযায়ী কাজটি পাচ্ছে না। এরপর সিলেটের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর কাছে দরপত্র বাতিল করতে চিঠি লেখেন। হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই টেন্ডার বাতিলের চিঠি পেয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। তিনি টেন্ডারটি বাতিল না করে পুনঃমূল্যায়ন করে তুলনামূলক বিবরণী (সিএস) পাঠাতে পাল্টা চিঠি লেখেন। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এমন নির্দেশনা অগ্রাহ্য করে এক মাসের মাথায় ২৪ ফেব্রুয়ারি ৫৫০৫৩৭ নং আইডিতে এই কাজের জন্য পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। এমন ঘটনা জানতে পেরে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর কাছে এ বিষয়ে একটি আবেদন করা হয়। এতে বলা হয়, একই কাজের জন্য দুবার দরপত্র আহ্বানের বিষয়টি বোধগম্য হয়নি। দ্বিতীয়বার টেন্ডার আহ্বান করায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত’এরপর নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলামকে শোকজ করেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তুষার কান্তিসাহা। এই শোকজের কপি পাঠানো হয় প্রধান প্রকৌশলীর কাছে। এরপর গত ১১ মার্চ তাকে মাদারীপুরে বদলি করা হয়। ২৮ মার্চ ভেঙে পড়ে কুন্দানালা ব্রিজের ৫টি গার্ডার। ১৬ মার্চ ওই আদেশ আবার স্থগিত করে ৩০ জুন পর্যন্ত তাকে সুনামগঞ্জে বহাল রাখা হয়। এ আদেশ বহাল থাকলে জুন ফাইনালে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাটের সম্ভাবনা দেখছেন কর্মকর্তারা। এদিকে গত ১০ জানুয়ারি ৫৩৫৩১৯ নং আইডিতে সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়কের ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রিজ নির্মাণের জন্য মাটি পরীক্ষা কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে দুজন ঠিকাদার অংশ নেয়। পরের মাসে ১৬ ফেব্রুয়ারি ৫৪৯৪১২ আইডিতে পুনরায় একই কাজের ওপর আরেকটি দরপত্র আহ্বান করেন। এ খবর পেয়ে আরেকটি অভিযোগ দেয়া হয়। তত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর কাছে পাঠানো ওই আবেদনের এক স্থানে বলা হয়, ‘আমার ধারণা নির্বাহী প্রকৌশলী কোনো হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে দ্বিতীয়বার একই কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করেন।’ এই অভিযোগের পর দ্বিতীয়বার টেন্ডার আহ্বানের আইডি বাতিল করেন নির্বাহী প্রকৌশলী। অভিযোগ সঠিক নয়: এসব অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম। এমটি এন্টারপ্রাইজের মালিককে জানতে চাইলে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘মালিক আছে একজন। আপনার সাথে দেখা করে বলব। লাইসেন্সটি তো আপনি নিজেই পরিচালনা করেন, প্রশ্ন করা হলে জবাবে বলেন, আমি দেখা করে সব বলব। একটু সময় দেন, আমি অসুস্থ। সূত্র: যুগান্তর
Link copied!