মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কোভিডে নয়া আতঙ্ক ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’

প্রকাশিত: ০৮:৫৭ এএম, মে ২৬, ২০২১

কোভিডে নয়া আতঙ্ক ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নামক রোগ ভারতে বেশ আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। কারণ হলো যারা কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছে তাদের মধ্যে অনেকে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশে এটা নিয়ে একটু আতঙ্কের সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, বাংলাদেশেও এই রোগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গিয়েছে। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগের মূল নাম মিউকরমাইকোসিস। এটি একটি ছত্রাকঘটিত খুবই দুর্লভ রোগ। ছত্রাক কী সেটা অনেকে জানেন না। ছত্রাক দিয়ে অনেক অনেক রোগ হয় আবার আমরা ছত্রাক খাবার হিসেবেও খেতে পারি (মাশরুম এক ধরনের ছত্রাক)। মিউকরমাইকোসিস খুবই ক্ষুদ্র, আণুবীক্ষণিক ছত্রাক দিয়ে হয়। যেহেতু এই রোগে সংক্রমণ হলে কালো রঙয়ের প্রদাহ নাকে-মুখে দেখা যায় এজন্য এটাকে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা কালো ছত্রাক’ নামে ডাকা হয়। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে হঠাৎ করে এটা কোথা থেকে আসলো। আসলে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আমাদের প্রকৃতিতে অনেক জায়গায়ই থাকে। এটা সবসময়ই আছে। কিন্তু এটার একজন সুস্থ মানুষকে আক্রান্ত করার ক্ষমতা খুব একটা নেই। এটা আক্রান্ত করে তাদেরকেই যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব কমে যায়। কাদের হতে পারে? • যারা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন এবং সে কারণে স্টেরয়েড দিতে হয়েছে। • যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই। • যাদের ক্যান্সার আছে। যেহেতু ডায়াবেটিস আক্রান্ত ও ক্যান্সার আক্রান্তদের মধ্যে আগে এই রোগ দেখা যায়নি সেহেতু বলা যায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সঙ্গে এই রোগগুলো আছে এবং যাদের স্টেরয়েড থেরাপি দেয়া লাগছে তারা এই সংক্রমণের স্বীকার হতে পারেন। এ ছাড়া আরো কিছু মানুষ এই রোগের রিস্কে থাকেন, করোনা প্রেক্ষাপটে তাদের নিয়ে আলোচনায় গেলাম না। ব্ল্যাক ফাঙ্গাস/কালো ছত্রাক সংক্রমণের লক্ষণ: • অনেক ধরনের লক্ষণ হতে পারে। করোনা প্রেক্ষিতে শুধু নাক-মুখ ও ফুসফুসের সংক্রমণের কথা বলছি- • নাক বন্ধ লাগা • নাকের ভেতর, মুখে কালো রঙের প্রদাহের সৃষ্টি হওয়া। • নাক থেকে কালো রঙের রক্ত বেরিয়ে আসা। • মুখমণ্ডলের একপাশ ফুলে যাওয়া, অবশ হয়ে যাওয়া। • চোখে দেখতে সমস্যা হওয়া। • শ্বাস কষ্ট হওয়া। • বুকে ব্যথা। • জ্বর ও কাশি। এটা থেকে বাঁচবেন কীভাবে: • যেহেতু এই রোগ বর্তমানে করোনা আক্রান্তদের সংক্রমিত করছে সেজন্য এটা প্রতিরোধে করোনা থেকে বেঁচে থাকা সবচেয়ে কার্যকর উপায়। এ ছাড়া- • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন। • মাস্ক ব্যবহার করুন বিশেষ করে ধুলোবালি পূর্ণ জায়গায়। • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের স্টেরয়েড নেয়ে থেকে বিরত থাকুন। • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন। • মুখের যত্ন নিন। ব্রাশ করুন, মাউথওয়াস ব্যবহার করুন। • আপনার যদি কোভিড হয়ে থাকে আর উপরিউক্ত লক্ষণগুলো দেখেন তাহলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসককে জানান। মনে রাখুন (শ্বাস কষ্ট হওয়া, বুকে ব্যথা, জ্বর ও কাশি) এই লক্ষণগুলো করোনায়ও দেখা যায়। • পচা পাউরুটি, ফল, সবজি ইত্যাদিতে বিভিন্ন ছত্রাক থাকে। এগুলো যেখানে সেখানে ফেলে রাখবেন না। • ফ্রিজ পরিষ্কার রাখবেন। • যাদের করোনা হয়েছে এবং ডায়াবেটিস আছে তারা বিশেষ সতর্ক থাকবেন। মাটি নিয়ে কাজ করার সময় (যেমন বাগানে কাজ করা) গ্লাভস ব্যবহার করবেন এবং কাজ শেষে ভাল করে পরিষ্কার হবেন। কী করবেন না: • নাকে-মুখে কোন লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা করবেন না। • লক্ষণ দেখা দিলে আতঙ্কিত হবেন না। • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের ওষুধ খাওয়া যাবে না। • কবিরাজি বা হোমিওপ্যাথি জাতীয় চিকিৎসা করাতে যাবেন না। • যেসব টেস্টের প্রয়োজন হবে সেগুলো করতে দেরি করবেন না। • আপনার চিকিৎসক যদি আপনার এই রোগ আছে বলে নিশ্চিত হোন, তাহলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে অবহেলা করবেন না। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই রোগ নিয়ে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই আপাতত। কিন্তু চিকিৎসক ও বিভিন্ন জনস্বাস্থ্য সংস্থার উচিত সক্রিয়ভাবে এই রোগের খবর রাখা এবং এটার বিস্তার রোধে সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থা নেয়া। লেখক: সিনিয়র লেকচারার, মাইক্রোবায়োলজি, নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ। মাস্টার্স স্টুডেন্ট, ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিজ, দ্য ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরা।  
Link copied!