মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কোরআনে বর্ণিত ত্বীন ফলের বাগান দিনাজপুরে!

প্রকাশিত: ০৬:০৪ এএম, মার্চ ২, ২০২১

কোরআনে বর্ণিত ত্বীন ফলের বাগান দিনাজপুরে!

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার ৪ বিঘা পতিত জমিতে চাষ করা হচ্ছে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত মরুভূমির মিষ্টি ফল ত্বীণ। উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের কৃষক মতিউর মান্নান সরকার প্রথমবারের মত এই ফল চাষ শুরু করেছেন। এরইমধ্যে মরুভূমির মিষ্টি ফল ত্বীণ বাগান করে এলাকায় হইচই ফেলে দিয়েছেন তিনি। পতিত জমিতে মরুভূমির এই ফল চাষের মাধ্যমে নিজের স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নবুনছেন কৃষক মান্নান। বাগান মালিক সুত্রে জানা যায়, উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নে মালার পাড়া গ্রামের মতিউর মান্নানের ছোট বোনের পরামর্শে ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে গাজীপুর থেকে ৯শ চারা নিয়ে চার বিঘা পতিত জমিতে ত্বীণ ফলের চাষ শুরু করেন। বর্তমানে ওই বাগানে অধিকাংশ গাছে ফল এসেছে। ফলের পাশাপাশি এরই মধ্যে চারা তৈরীর কাজও শুরু করা হয়েছে। বাগানে ৫টি জাতের ৯শটি চারা রোপণ করা হয়েছে। সোমবার (০১ মার্চ) দুপুরে সরেজমিনে বাগানে গিয়ে দেখা যায়,বাগান মালিক মতিউর রহমান বাগানের গাছগুলোর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। গাছগুলোকে পোকা মাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে আড়া আড়ি ভাবে বাঁশের খুটি দিয়ে উপরের অংশে সাদা সুতোর জাল ব্যবহার করা হয়েছে। বাগানের সারি সারি গাছের ডগায় দোল খাচ্ছে ত্বীণ ফল। দেখতে অনেকটা ডুমুর ফলের মত। গাছগুলোর গোড়ায় মাটির উপরিভাগে প্লাসটিকের কাগজ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। এলাকায় এই ফলের চাষ প্রথম হওয়ায় অনেক দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন এক নজর দেখার জন্য। বাগানে প্রায় ১০ জন শ্রমিক পরিচর্যার কাজ করছেন। বাগান পরিচর্যার কাজ করা শ্রমিক হাসেম আলী বলেন,‘বাগানে কাজ করে প্রতিদিন ৪শ টাকা করে আয় হয়। এতে আমাদের সংসার ভালো চলে। এই বাগান যদি এই এলাকায় অন্য ব্যক্তিরাও করে তাহলে আমার মত অনেক শ্রমিকের কর্মস্থান সৃষ্টি হবে।' বাগান দেখকে আসা পাশ্ববর্তী গ্রামের জুলহাজ নামের এক ব্যক্তি বলেন,‘আমি শুনলাম আমাদের মালার পাড়া গ্রামের মতিউর রহমান নামে একব্যক্তি ত্বীণ ফলের বাগান করেছেন। তিনি কোথা থেকে এনেছেন সেই বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আসলে আমি শুনলাম এটি নাকি খেতে সুস্বাদু পুষ্টিকর এবং অনেক রোগের ওধুষ হিসেবে কাজ করে। আমি আশা করছি এটি এই এলাকায় ছড়িয়ে যাবে। বাগান করেতে আগ্রহী দাউদপুর গ্রামের জসিম উদ্দিনের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, 'আমি শুনেছি মরুভুমির মিষ্টি ফল ত্বীণের বাগান করা হয়েছে। আমিও বাগান করতে আগ্রহী হয়ে দেখতে এসেছি কিভাবে বাগান করতে হয়। ভালো লাগল, আমি জেনেছি খুব শিগগিরই আমি বাগানের কার্যক্রম শুরু করব।' ত্বীণ ফলের বাগানের মালিক মতিউর রহমান বলেন,‘করোনার কারনে আগের ব্যবসার পুজি হারিয়ে চিন্তাই পড়ে ছিলাম। এর পরে আমার ছোট বোনের পরামর্শে এবং তারই অনুপ্রেরণায় আমি বেশ কিছু ফলের বাগান পরিদর্শন করি। পরিদর্শন করে আমার কাছে এই ত্বীণ ফলের বাগানটি ভালো লেগেছে। কারণ এই ফলগুলো সবচেয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে উচ্চফলনশীল ফল হিসেবে মনে হয়েছে সেই কারনে ত্বীণ ফলের বাগান করার সিদ্ধান্ত নেই। তার পরে আমি গাজীপুর থেকে নয়শ চারা সংগ্রহ করি। আমার ৪ বিঘা পতিত জমি চিল যে খানে কোন আবাদ হতো না। রোপণ করার মোটামুটি ৪৫ দিনের মাথায় ফল আসতে শুরু করেছে।' তিনি বলেন,‘এখন পুরোপুরি নয়শ গাছেই ফল এসেছে। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেএটি বাজারজাত করা সম্ভব হবে। এই পর্যন্ত এই বাগানে প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা করচ হয়েছে। এখন আমার খুব আনন্দ লাগছে,যে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এখান থেকে আমার টাকা আসা শুরু হবে। ত্বীণ ফলগুলো স্থানীয় বাজারেই প্রায় ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রয় করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি কিছু কলম করতেছি যাতে করে বাগানটি আরো সম্প্রসিত হয়।' জানতে চাইলে নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,‘ত্বীণ ফলটি আমাদের উত্তরবঙ্গের মধ্যে এই প্রথম চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে নবাবগঞ্জ উপজেলায় এই প্রথম। মতিউর সাহেব অনেক আগ্রহ করে এই বাগানটি শুরু করেছেন। বাগানটিতে প্রায় ৯শ ফলের গাছ আছে। প্রত্যেকটি গাছ এখন পর্যন্ত ভালো আছে। এটির জন্য নবাবগঞ্জ কৃষি অফিস সার্বিক সহোযোগিতা করছে এবং করবে। ত্বীণ ফলটি মুলত অপ্রচলিত ফল। অত্যন্ত সুস্বাদু, শরীরের জন্য অনেক উপকারী গুনাগুণ রয়েছে। ব্রেস্ট ক্যান্সার রোধে এই ফল খুবই উপকারী। এ ছাড়া নানা রোগ নিরাময়ে বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ত্বীণ। এতে আছে প্রচুর পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়াম। পুষ্টি চাহিদা পূরণেও ত্বীণ গুরুত্বপূর্ণ। ত্বীণ ফল বাংলাদেশে ড্রাই ফুড হিসাবে আমদানি করা হয়ে থাকে। বাণিজ্যিকভাবে এর উৎপাদন বাড়ানো গেলে দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণে তা সহায়ক হবে।
Link copied!