শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষমতাকে জনগণের ভাগ্য বদলের সুযোগ মনে করি

প্রকাশিত: ১১:১৪ এএম, নভেম্বর ২৫, ২০২১

ক্ষমতাকে জনগণের ভাগ্য বদলের সুযোগ মনে করি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ক্ষমতাকে আমরা জনগণের সেবা করার সুযোগ মনে করি, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের সুযোগ মনে করি। দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছি আমরা। করোনা মহামারি না এলে ১৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারতাম। বিশ্বব্যাপী মন্দার মধ্যেও দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ বাংলাদেশ। বিশ্বের ৪১টি অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি।’ গতকাল বুধবার স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে জাতীয় সংসদে বিশেষ আলোচনার জন্য সাধারণ প্রস্তাব উপস্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনের শুরুতে স্মারক বক্তব্য দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পরে বৈঠক শুরু হলে সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ১৪৭ বিধিতে প্রস্তাব তোলেন সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তারুণ্যদীপ্ত বাংলাদেশ সব চ্যালেঞ্জে উত্তরণ ঘটিয়ে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, শোষণ ও বৈষম্যহীন, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তর করে দেশকে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০৪১ সালে বাংলাদেশকে কিভাবে দেখতে চাই, সেই পরিকল্পনাও আমরা করে রেখেছি। জলবায়ু পরিবর্তন থেকে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন বেঁচে থাকতে পারে, সে লক্ষ্যে এই বদ্বীপকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ গ্রহণ করে আমরা বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছি। তিনি বলেন, করোনা অতিমারির সংকট উত্তরণে ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ অর্থনীতির চালিকাশক্তি সচল রেখেছে। মেট্রো রেল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কর্ণফুলী টানেলসহ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ বিশ্বে বাংলাদেশের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি ক্ষেত্রে যখন কোনো কাজ করতে যাই, দেখতে পাই সেটার ভিত্তি জাতির পিতা তৈরি করে দিয়ে গেছেন। আমার কাছে বিস্ময় মনে হয়, এত অল্প সময়ে কিভাবে এত কাজ করে যেতে পারলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, যখন তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলছিলেন তখন কিছু লোক অস্থিরতায় ভুগছিলেন। দেশ স্বাধীন হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবে, তা পাকিস্তানি দোসররা মানতে পারেনি।’ বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময় নানা ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘চক্রান্ত মোকাবেলা করেই জাতির পিতা দেশকে গড়ে তুলছিলেন। যেন কারো কাছে হাত পাততে না হয় তার জন্য তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি দেন। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দূর করতে ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করেন। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করেন। বঙ্গবন্ধু যে কাজগুলো করতে চেয়েছিলেন আরো পাঁচ বছর হাতে পেলে বাংলাদেশ উঠে দাঁড়াত।’ সরকারপ্রধান বলেন, যারা স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে যাক চায়নি, তারা এটা সহ্য করতে পারেনি। নানা অপপ্রচার চালিয়েও তারা যখন জনগণের সহায়তা পেল না, তখনই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়। দেশে প্রত্যাবর্তনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৮১ সালের ১৭ মে নির্বাসন শেষে আমি আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সভাপতি হয়ে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করি। এরপর গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, এ দেশের মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ আইনের শাসন ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করি। ফলে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় গণতন্ত্র।’ তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়। বিচার করা হয় যুদ্ধাপরাধীদের। ২০২১ সালের রূপকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি অর্জন করে। ২০০৮ সালের ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তবতা। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা যে সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন, সেই সংবিধানের ভিত্তিতে আমাদের নির্বাচন ও আজকের এই সংসদ। সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সফল বাস্তবায়ন ও প্রত্যাশা পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখছে জাতীয় সংসদ।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের রূপকল্প অর্জন করতে পেরেছি। জনগণ ভোট দিয়েছে বলে আমরা সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করতে পারছি। রজতজয়ন্তী উদযাপনের সময়ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। এটাই আওয়ামী লীগের বড় প্রাপ্তি।’ এর আগে ১৪৭ বিধিতে উত্থাপিত প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সংসদের অভিমত এই যে ২০২১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন বাঙালির জাতীয় জীবনে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশ আজ এক ‘উন্নয়ন বিস্ময়’।”
Link copied!