বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার জন্য বিদেশি ডাক্তার ও উড়ন্ত হাসপাতাল আনা সম্ভব?

প্রকাশিত: ১০:৪৯ এএম, নভেম্বর ২৫, ২০২১

খালেদা জিয়ার জন্য বিদেশি ডাক্তার ও উড়ন্ত হাসপাতাল আনা সম্ভব?

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় এখন বেশি আলোচনা হচ্ছে বিদেশি চিকিৎসক আর উড়ন্ত হাসপাতাল নিয়ে। বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালের দাবি তুলেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। রাজনীতির মাঠে বিষয়টি উত্তাপ ছড়ালেও বিদেশি চিকিৎসক আর উড়ন্ত হাসপাতালের ব্যবস্থা করা কতটা সম্ভব? কেননা উড়ন্ত হাসপাতালের ধারণাটি বিশ্বব্যাপী ব্যয়বহুল। এ ছাড়া বিদেশি চিকিৎসক এনে এখানে চিকিৎসা করানোর ক্ষেত্রে তাকে সরকারের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে- যে প্রক্রিয়া একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এদিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া ফ্যাটি লিভার থেকে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসকদের একজন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশি চিকিৎসক আর উড়ন্ত হাসপাতাল ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ। প্রক্রিয়াটি সহজ নয়। এজন্য নানা আবেদনের মাধ্যমে অনুমতির প্রয়োজন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত বিশ্বের স্বনামধন্য উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতাল অরবিস ১১ বার এসেছে বাংলাদেশে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের নভেম্বরে অরবিস এসেছিল চট্টগ্রামে। এর বাইরে অন্য কোনো চিকিৎসায় উড়ন্ত হাসপাতাল আসার নজির নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদেশি চিকিৎসকরা বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা দিতে চাইলে তাকে অস্থায়ী প্র্যাকটিশনার রেজিস্ট্রেশন নিতে হবে। এই রেজিস্ট্রেশন দেয় চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। ৬ মাসের জন্য অস্থায়ী প্র্যাকটিশনার রেজিস্ট্রশন দিয়ে থাকে সংস্থাটি। এর আগে বিদেশি কর্মী হিসেবে এদেশে কাজ করার সরকারি অনুমতির প্রয়োজন পড়ে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর থেকে পেশাজীবী হিসেবে বাংলাদেশে প্র্যাকটিস করতে ছাড়পত্র নিতে হয়। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সঙ্গে যোগাযোগ করে সময়ের আলো। কাউন্সিল সূত্র জানায়, বিদেশি চিকিৎসকের এদেশে প্র্যাকটিস করার জন্য বিএমডিসির রেজিস্ট্রার বরাবর দরখাস্ত করতে হয়। এই আবেদনের সঙ্গে চিকিৎসকের মেডিকেল ডিগ্রির মূল সনদ জমা দিতে হবে। পাশাপাশি যে দেশ থেকে চিকিৎসক আসবেন, সেই দেশের হাইকমিশন অথবা মিশনের সত্যায়িত মেডিকেল সনদাদি জমা দিতে হবে। এর সঙ্গে আবেদনকারীর ২ কপি ছবি দিতে হবে। এসব কিছুই যাচাই করে বিএমডিসি। প্রতি ৬ মাসের অস্থায়ী প্র্যাকটিশনার রেজিস্ট্রেশনের জন্য ২ হাজার ৫০০ টাকা ফি জমা দিতে হয়। বিষয়টি স্পর্শকাতর, তাই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিদেশি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের বিষয়টি পৃথিবীর সর্বত্রই স্বীকৃত। যারা এ ধরনের পেশাগত কাজ করেন তারা অন্য একটি দেশে গিয়ে প্র্যাকটিস করতে চাইলে সে দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। কারণ তিনি যে ডাক্তার, তিনি যে কাজটি পারেন এটা তো কাউকে জানতে হবে। ওই কর্মকর্তা জানান, বেসরকারি হাসপাতালে বিদেশি ডাক্তাররা এসে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন। আবেদনের পর কাগজপত্র যাচাই করতে হয়। এজন্য কিছুটা সময় লাগে। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল সময়ের আলোকে বলেন, বিদেশি ডাক্তাররা বাংলাদেশে এসে প্র্যাকটিস করার জন্য মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল থেকে অস্থায়ী রেজিস্ট্রেশন নিতে হয়। বিদেশি ডাক্তার আর উড়ন্ত হাসপাতাল সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ। উড়ন্ত হাসপাতালে কেমন ব্যয়- এ প্রশ্নের জবাবে ডা. এহতেশাম বলেন, হাসপাতালটির প্রযুক্তি ও স্বয়ংসম্পূর্ণ সুযোগ-সুবিধার ওপর নির্ভর করে। কোন ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সুবিধাদি সেখানে থাকবে, ওই হাসপাতালের টিম কত বড় হবে- এসব মিলিয়ে ব্যয় নির্ধারিত হয়। এর আগে এ ধরনের উড়ন্ত হাসপাতাল বাংলাদেশে আসার কথা তার জানা নেই। ফ্যাটি লিভার থেকে সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়া : এদিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফ্যাটি লিভার থেকে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন জানিয়েছেন তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক। সময়ের আলোকে ওই চিকিৎসক দুদিন আগে জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসের ঠিক আগের ধাপে আছেন। যাকে বলে ডিকমপেন্স্যাটেড লিভার সিরোসিস। বুধবার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার খবর তিনি নিশ্চিত করেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের অবস্থা একটু অবনতি হয়। এতে চারদিকে উদ্বেগ বেড়ে যায়। দলের নেতাকর্মীরাও এ নিয়ে বিচলিত হওয়ার খবর জানান। তবে মেডিকেল বোর্ডের ওই চিকিৎসকের ভাষ্য, খবর আসলে এত দ্রুত ছড়ায়, অবিশ্বাস্য! অনেক সময় আমরাও অবাক হয়ে যাই কীভাবে এসব খবর বাইরে জেনে যায়। আসল ঘটনা হলো, ম্যাডামের হিমোগ্লোবিন কমে যায়। পরে রক্ত সরবরাহ করলে তা স্বাভাবিক হয়। ওই সময় ম্যাডাম তেমন কথাবার্তা বলেননি। আর তখন রোগীর পক্ষে কথা বলাও সম্ভব হয় না। আর তিনি প্রচণ্ড দুর্বল ছিলেন। প্রধান ইলেকট্রোলাইটগুলো হুট করে কমে যায়। তিনি জানান, বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়নি। স্বাভাবিক কথাবার্তা বলেছেন। তবে রক্ত বের হচ্ছিল। খাদ্যে অরুচি রয়েছে। মেডিকেল বোর্ড এটি বন্ধ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। নিয়মিত চেকআপের অংশ হিসেবে বুধবারও বেশ কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেওয়া হয়েছে। আর মেডিকেল বোর্ড প্রতিদিনই ভার্চুয়াল বৈঠক করে। এদিকে সিসিইউতে চিকিৎসাধীন অসুস্থ খালেদা জিয়ার একটি ছবিও সময়ের আলোর হাতে এসেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, তার গলার দিকে সেন্ট্রাল ভেনাস ক্যাথেটার লাইন লাগানো আছে, যা চিকিৎসকের ভাষায় বলা হয় সিভি লাইন। রোগীর মাল্টিপল ডিজিস সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছলেই এটি সংযুক্ত করা হয়। সিভি লাইনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় রক্তনালিকে সংযুক্ত করা হয়। এর তিন-চারটি চ্যানেল রয়েছে, যার মাধ্যমে একসঙ্গে সব ধরনের ওষুধ খাওয়ানো সম্ভব হয়। চিকিৎসকরা জানান, খালেদা জিয়ার দুর্বলতা রয়েছে। ডায়াবেটিস ১২-১৩-এর মধ্যে ওঠানামা করছে। লিভারের চিকিৎসা করতে গেলে দেখা যাচ্ছে আর্থ্রাইটিস বেড়ে যাচ্ছে। কিনডির ক্রিয়েটিনিন হু হু করে বর্ডার লাইন ক্রস করছে। লিভারের ভালো চিকিৎসা হয় আমেরিকায়। দ্রুত তাকে সেখানে নিয়ে চিকিৎসা করানো দরকার। এদিকে ৭৬ বছর বয়সি বিএনপি নেত্রীর মুক্তি ও বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এর অংশ হিসেবে গত কয়েকদিন গণঅনশন, বিক্ষোভ ও বুধবার সারা দেশের জেলা প্রশাসকদের স্মারকলিপি দিয়েছে বিএনপি। এ ছাড়াও খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিতে বুধবার সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন দেশের ২ হাজার ৫৮২ সাংবাদিক।
Link copied!