শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খুনের আসামি থেকে জনপ্রতিনিধি মুক্তা

প্রকাশিত: ০১:২১ পিএম, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২

খুনের আসামি থেকে জনপ্রতিনিধি মুক্তা

সাবিনা ইয়াসমিন মুক্তা। পুলিশের খাতায় হত্যা মামলার আসামি। স্বামী পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির বিভাগীয় প্রধান শিমুল ভূঁইয়া। এসব ছাপিয়ে এখন তিনি 'জনপ্রতিনিধি'। গত সোমবার খুলনা জেলা পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য পদে তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। খুনের আসামিকে বিজয়ী করতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন। প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণা চালালেও গ্রেপ্তার না করার পেছনে পুলিশ 'পলাতক' অজুহাত দিয়েছে। সবই হয়েছে শিমুলের ভয়ে। জানা গেছে, এবার নির্বাচনে সাধারণ সদস্য পদে ওয়ার্ডগুলোতে পাঁচজনও আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু ৫ নম্বর ওয়ার্ডে মুক্তার বিরুদ্ধে কেউ প্রার্থী হননি। কেয়া খাতুন দাঁড়ালেও শেষ মুহূর্তে তাঁরই ভোট করার ঘোষণা দেন। ফলে রিটার্নিং অফিসার একক প্রার্থী হিসেবে মুক্তাকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। মুক্তার স্বামী পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী শিমুল ভূঁইয়ার বাড়ি ফুলতলার দামোদর গ্রামে। উপজেলায় তাঁর কথাতেই চলে আওয়ামী লীগ-বিএনপির রাজনীতি। তিনি ভাই শরীফ মোহাম্মদ ভূঁইয়া শিপলুকে ইউপি চেয়ারম্যান বানিয়েছেন। এবার স্ত্রীকে করলেন জেলা পরিষদের সদস্য। অভিযোগ রয়েছে, শিমুলের ভয়েই আওয়ামী লীগের কোনো নেতা মনোনয়নপত্র জমা দেননি। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ থাকলেও আওয়ামী লীগ নেতারা নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। এখানে গত বারের প্রার্থী ফুলবাড়িগেট থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবিদ হোসেন বলেন, এবার ভোট করার কোনো আগ্রহ ছিল না। উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মৃণাল হাজরা বলেন, দীর্ঘদিন পর এলাকায় ফিরে কাজ করতে চাইছেন মুক্তা। তাঁর সম্মানে কেউ প্রার্থী হননি। ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেন বলেন, নির্বাচনে টাকার খেলা বেশি হয়। তার ওপর শিমুলের স্ত্রী প্রার্থী হওয়ায় সবাই চেপে গেছেন। শিমুল প্রতিপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে বিএনপির মার্শাল ভূঁইয়াসহ আমাদের লোকজনও ছিল। পরে তাঁরাই আমাকে বলেছেন, আপনি মাথা ঘামাবেন না। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য হাসনাত রিজভী মার্শাল বলেন, প্রার্থী আমার এলাকার পুত্রবধূ। তিনি ডেকেছেন, কথা বলেছি। এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। ২০১৭ সালের ২৫ মে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে খুন হন ফুলতলা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলাউদ্দিন মিঠু। তাঁর ছোট ভাই রাজ সরদার হত্যা মামলা করেন। ২০১৮ সালে শিমুলকে প্রধান ও মুক্তাকে চার নম্বর আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। বাদী নারাজি দিলে আদালত তদন্তভার পিবিআইকে দেন। গত ১০ মে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পিবিআই। এতে শিমুল প্রধান আসামি থাকলেও মুক্তার অবস্থান ৭। পলাতক থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়। বাদীপক্ষ এবারও নারাজি দিলে আদালত শুনানির জন্য আগামী ২৭ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন। হলফনামায় মুক্তা এ মামলার তথ্য দিয়েছেন। পুলিশের কাছে 'পলাতক' মুক্তা সশরীরে প্রচারণাসহ নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে ফুলতলা থানার ওসি ইলিয়াস তালুকদার বলেন, মিঠু হত্যা মামলায় থানায় কোনো পরোয়ানা আসেনি। পরোয়ানা ছাড়া কীভাবে গ্রেপ্তার করব? মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, অভিযোগপত্র জমার দিন পর্যন্ত আসামিরা পলাতক ছিলেন। মিঠুর বড় ভাই সেলিম সরদার বলেন, আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ ধরছে না। ভাই হত্যার বিচার আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি।
Link copied!