শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গ্রীন ডেল্টার শতকোটি টাকা আত্মসাৎ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯ পিএম, অক্টোবর ১৬, ২০২০

গ্রীন ডেল্টার শতকোটি টাকা আত্মসাৎ

সুক্ষ কৌশলে সুনিপুণ মেধা দিয়ে তিন অর্থ বছরে শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন গ্রীন ডেল্টা ইনস্যুরেন্স কোম্পানীর এমডি ফারজানা চৌধুরী। জালিয়াতির মাধ্যমে গত ২০১৫-২০১৬, ২০১৭-১৮ সালে সাধারণ বীমা কোম্পানীর নামে রি-ইন্স্যুরেন্সের চেক ইস্যু করে সেই চেক নিজেরাই ভাঙ্গীয়ে এই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন তিনি। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখতে ও প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে অর্থ মন্ত্রনালয়ের আর্থিক প্রতিষ্টান বিভাগ বীমা শাখার উপসচিব কামরুর হক মারুফ স্বাক্ষরিত এক চিঠি ২৩ সেপ্টেম্বর-২০২০ ইং তারিখে দিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট সুত্রগুলো জানায়,জালিয়াতি করা চেকের মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত টাকা যা কয়েকটি চেকের কপি মিলিয়ে দেখা যায় যার মধ্যে ২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর সাধারণ বীমা কোম্পানীর নামে ইস্যু কৃত ২৪০৫০৫০,২৪০৫০৫১,২৪০৫০৫২,২৪০৫০৫৩,২৪০৫০৫৪ নম্বরের চেকগুলোর প্রত্যেকটির মাধ্যমে ২ কোটি টাকার বেশি প্রদান করে। বাস্তবে এসব চেকের একটিও সাধারণ বীমা করপোরেশনের হিসাবে জমা হয়নি। প্রাপ্ত তথ্যপ্রমানের হিসেবে শুধু সাধারণ বীমার নামে চেক ইস্যু করেই গ্রীন ডেল্টা ইনস্যুরেন্সের এমডি ফারজানা চৌধুরীসহ কোম্পানীর একটি অসাধু চক্র এ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এজন্য সাধারণ বীমা করপোরেশনের সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করতে কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তাকে বিভিন্ন সুবিধাও দেয়া হয়েছে। এমডির এমন স্বেচ্ছাচারিতায়,দেশের প্রথম সারির একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানী “গ্রীন ডেল্টা”বেশ আর্থিক সংকটে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে,এমডির এমন স্বেচ্ছাচারিতার বিরোধীতা করায়,বেশ কিছু পুরনো দক্ষ কর্মীদের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে, চাকরিচ্যুতও করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির এমন একাধিক সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা বহুবছর যাবত গ্রীন ডেল্টা ইনস্যুরেন্স কোম্পানীতে কর্মরত ছিলেন,আছেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমন কয়েকজন কর্মকর্তা জানান,২০১৪ সালের পরই কোম্পানীটি নিয়ম বহির্ভূত ভাবে কর্মকান্ড শুরু করে। যা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা চৌধুরী এবং তার অনুগত কয়েকজন কর্মকর্তার পরামর্শ মতে ঘটতে থাকে নানা অপকর্ম দুর্নীতি। এদিকে অপর একটি সুত্র জানায়,ইনস্যুরেন্স কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে বসতে হলে,কমপক্ষে ১০ বছরের ইনস্যুরেন্স ক্যরিয়ার থাকার বাধ্যবাধকতা থাকা নির্দেশনা থাকলেও ফারজানা চৌধুরীর বেলায় তা মানা হয়নি। সংশ্লিষ্ট সুত্র আরও জানায় সাধারন বীমা কর্পোরেশনের নামে চেক ইস্যু করে সেই চেকের অর্থ নিজেরাই উত্তোলন করেছে গ্রীন ডেল্টা ইনসুরেন্স কোম্পানি। ২০১৫-২০১৬, ২০১৬-২০১৭, ২০১৭-২০১৮ এই তিন অর্থ বছরে এভাবে বহু চেক কেলেঙ্কারির মাধ্যমে প্রায় শত কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমান মিলেছে। এছাড়াও মেরিন কার্গো নামক একটি কোম্পানির নামে ২০১৭-১৮ সালের প্রথম প্রান্তিকে একটি ভুয়া হিসাব বিবরনী দাখিল দেখানো হয়েছে,যা সাধারণ বীমা কর্পোরেশন আদৌ অবগত না বা রাষ্টায়াত্ব এই প্রতিষ্ঠানটি হাতেও পায়নি। ভুয়া ওই হিসাব বিবরনীর মাধ্যমেও ১০ কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ করেছে গ্রীন ডেল্টা ইনসুরেন্স কর্তৃপক্ষ। এরও লিখিত প্রমান দিয়েছে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন। এসব বিষয়ে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন,গত বেশ কয়েক বছর ধরেই গ্রীন ডেল্টা ইনস্যুরেন্সের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অনিয়ম দুর্নীতি থাকার পরও, গ্রীন ডেল্টা ইনসুরেন্স কোম্পানি কি ভাবে ত্রিপল এ রেটিং পেল বলে তিনি প্রশ্ন করেন? সাধারন বীমা কর্পোরেশনের রিইনস্যুরেন্স বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন,অভিযোগ বা এর প্রমান পাওয়া গেলেও গ্রীন ডেল্টা ইনস্যুরেন্স কর্তৃপক্ষ অদৃশ্য ক্ষমতা বলে বার বারই পার পেয়ে যায়। এসব বিষয়ে,সরাসরি এবং মোবাইল ফোনে গ্রীন ডেল্টা ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা চৌধুরীর বক্তব্য জানতে একাধিকবার চেষ্ঠা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
Link copied!