বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গ্রীন ডেল্টা ইনসুরেন্স থেকে দু’শ কোটি টাকা লুপাটের ঘটনা

প্রকাশিত: ০৫:২৫ এএম, নভেম্বর ৮, ২০২০

গ্রীন ডেল্টা ইনসুরেন্স থেকে দু’শ কোটি টাকা লুপাটের ঘটনা

গ্রীন ডেল্টা ইনসুরেন্স থেকে ২শ কোটি টাকা লুপাটের অভিযোগ উঠেছে। ফলস বা ভুয়া ক্লেইম দেখিয়েও ২০১৪ সাল থেকে গত সাত বছরে কম করে হলেও ২’শ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন,সাধারণ বীমা করপোরেশনের উচ্চ পদে কর্মরত ও সাবেক গ্রীন ডেল্টা ইনসুরেন্স কোম্পানীর এক পরিচালক। হাতে আসা কোম্পানীর কাগজপত্র পর্যারোচনা করে ঘটনার বিবরণে জানা গেছে। নানা অনিয়ম দূর্নীতির মাধ্যমে গত ২০১৪ সাল থেকে শত কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে গ্রীন ডেল্টা ইনসুরেন্স কোম্পানীতে। দুর্নীতির ঘটনা ফাসের অভিযোগ তুলে অন্যয় ভাবে বিদায় দেয়া হয়েছে বেশ কয়েক জন দক্ষ এবং অভিজ্ঞ পরিচালক ও কর্মকর্তাদের। আর এসব অনিয়ম দুর্নীতি চাপা দিতে কোম্পানীর শীর্ষ কয়েকটি পদে বসানো হয়েছে ইনসুরেন্স অভিজ্ঞতাহীন কয়েকজনকে। যাদের বিরুদ্ধ নানা সময়ে আর্থীক অনিয়ম,নারী কেলেঙ্কারীর মতো অভিযোগও আছে। কাগজ ঘেটে দেখা গেছে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা চৌধুরী এসব করয়েছেন,করাচ্ছেন। এমন বহু অভিযোগের দালিলিক প্রমানপত্র ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর ডট কমের হাতে পৌঁছেছে। জানা গেছে, ২০১৯ সালের ব্যলেন্স সিটের ৯ নম্বর নোটে গ্রীন ডেল্টা ইনসুরেন্স কোম্পানীকে ৯৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা দেনা দেখানো হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে কোম্পানী আরো বেশি দেনা আছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রীন ডেল্টা ইনসুরেন্স কোম্পানীর অর্থ বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, কোম্পানীর ব্যলেন্স সিটে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা দেখানো হয়েছে ৩১৯ কোটি টাকা। কৃত্রিম ভাবে ব্যলেন্স সিটকে শক্তিশালী দেখানোর জন্য প্রকৃত পাওনা থেকে অনেক বেশি পাওনা দেখানো হয়েছে। আর দেনা দেখানো হয়েছে প্রকৃত দেনার থেকে অনেক কম বলেও ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন। গ্রীন ডেল্টা ইনসুরেন্স কোম্পানীর লেজারে রাষ্ট্রায়াত্ব বীমা প্রতিষ্ঠান-সাধারণ বীমা করপোরেশনকে যে পরিমান পরিশোধ দেখানো হয়েছে, আর সাধারণ বীমা করপোরেশন যে পরিমান রি-ইনসুরেন্সের অর্থ পেয়েছে, সে হিসাবেও বড় ধরনের ঘাপলা আছে বলে, সদ্য সাবেক একজন অর্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করায় যাকে অপমান করে ওএসডি করে রাখা হয়েছে। চাকরি থেকে অব্যহতি পত্রও গ্রহন বা কার্যকর করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ তার। ফলস বা ভুয়া ক্লেইম দেখিয়েও ২০১৪ সাল থেকে গত সাত বছরে কম করে হলেও ২’শ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন, গীন ডেল্টা ইনসুরেন্স কোম্পানীর সাবেক পরিচালক, বর্তমানে যিনি রাষ্ট্রায়ত্ব সাধারণ বীমা করপোরেশনের উচ্চ পদে কর্মরত। তিনি জানান, ক্লেমের নামে যত চেক ইস্যু করা হয়েছে, এর মধ্যে যতগুলো ক্যাশ চেক প্রদান করা হয়েছে-এর সবগুলোই আত্মসাৎ করা হয়েছে। অথচ কোম্পানীর রেজিস্ট্রারে এগুলোকে এ্যকাউন্ট পে-চেক দেখানো হয়েছে। তবে, ব্যাংকে জমা পড়েছে, ক্যাশ পে চেক। এছাড়াও গ্রাহকের সাথে ক্লেইম সেটেল করার সময় গ্রাহককে সম্পূর্ণ টাকা না দিয়ে দু’টি চেক ইস্যু করে, একটি গ্রাহকের অজান্তে নিজেরাই রেখে দেয়ার অভিযোগও আছে বলে জানিয়েছেন সাবেক এক সিএফও। গ্রীন ডেল্টা ইনসুরেন্সের হিসাব বিভাগের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, কোম্পানীর ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খাতুনগঞ্জ ব্রাঞ্চে কর্মরত দেখিয়ে গত ১০ বছর ধরে ১৭৫ থেকে ২’শ জন ভুয়া কর্মচারীর নামে বেতন তুলেও আত্মসাৎ করা হয়েছে। বাস্তবে, ভুয়াএসব কর্মীদের কোম্পানীর মানবসম্পদ বিভাগে নিয়োগপত্র বা বেতনের ব্যাংক হিসাবও নেই। অথচ, গত ১০ বছর ধরে কোম্পানীর এ্যকাউন্ট থেকে জন প্রতি ২৫ থেকে ৩০ হাজার করে টাকা একক সাক্ষরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা চৌধুরী তুলে নিয়েছেন। এভাবে মাসে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা আত্মাসাতের অভিযোগ করেন ওই কর্মকর্তা। এসব অপকর্মে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সহযোগী বর্তমান কোম্পানী সচিব মঈন উদ্দিন আহম্মেদ ও সিএফও আলিউল আবাব, বলে জানান সাবেক ওই সিএফও। ইনসুরেন্স ডেভলপমেন্ট এন্ড রেগুলেটরি অথরিটি- ইডরা ইতি মধ্যেই এসব বিষয়ে অবহিত হয়েছেন এবং তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে ইডরা চেয়ারম্যান। আর,সাধারণ বীমা তাদের নামে ইস্যু দেখিয়ে রি-ইনসুরেন্সের চেক জমা না দেয়ার বিষয়ে ইডরাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান। এছাড়া, সরকারের শত কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে গ্রীন ডেল্টা ইনসুরেন্স কোম্পানীর বিরুদ্ধে ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করে ভ্যাট ইনটেলিজেন্স একটি মামলা করে এলটিইউতে পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছেন, ভ্যাট ইনটেলিজেন্স। একই সঙ্গে, এখনো আদায় না হওয়া উৎসে করের বিষয়ে গ্রীন ডেল্টা ইনসুরেন্স কোম্পানীকে তিন দফা নেটিশ পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভ্যাট ইনটেলিজেন্সের এক শীর্ষ কর্মকর্তা। এছাড়াও, মার্কেন্টাইল ব্যংক মহাখালী শাখার গ্রীন ডেল্টা ইনসুরেন্স কোম্পানির নামে হিসাব থেকে বিপুল পরিমান অর্থ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা চৌধুরী, কোম্পানি সচিব মঈন উদ্দিন আহম্মদ, জিডিএসএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াফি মেহনাজ খান সিন্ডিকেট আত্মসাৎ করেছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুর্নীতি দুজন কমিশন দুদক এ বিষয়ে তদন্তের জন্য মার্কেন্টাইল ব্যংক কর্তৃপক্ষকে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত লেনদেনের হিসাব চেয়ে চিঠি দিয়েছে। ব্যংক কর্তৃপক্ষ হিসাব বিবরণী দিয়ে চিঠির জবাবও দিয়েছে। যাতে অনিয়ম দুর্নীতির সুস্পষ্ট প্রমাণও পাওয়া গেছে। এসব বিষয়ে,গ্রীন ডেল্টা ইনসুরেন্স কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা চৌধুরীর বক্তব্য জানতে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায। তার অফিসে গিয়েও পাওয়া যায়নি। আর কোম্পানী সচিব মঈন উদ্দিন আহম্মেদও ফোন ধরেননি। এদিকে, গ্রীন ডেল্টা ইনসুরেন্স কোম্পানির এসব অনিয়ম দুর্নীতি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে ইডরাকে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রনালয়। অভিযোগ আসছে প্রতিষ্টানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দুর্নীতির মাধ্যমে লুপাট করা অর্থ বিদেশে পাচার করছেন। নিয়মিত অফিসেও তিনি যান না। প্রতিষ্টানটির কার্যক্রমও ঝিমিযে পরেছে।
Link copied!