বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চাকরিটা খণ্ডকালীন, ছাত্রলীগ পূর্ণকালীন

প্রকাশিত: ১২:৪২ পিএম, অক্টোবর ৩, ২০২২

চাকরিটা খণ্ডকালীন, ছাত্রলীগ পূর্ণকালীন

কক্ষ নম্বর ২৬৪। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল। সেখানেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এস্টেট অফিসের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী আমানুল্লাহ আমানের বাস। বাড়ি ঝালকাঠির রাজাপুরে। ছাত্রত্ব চুকলেও আমান একাই বসতি গেড়েছেন ওই কক্ষে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয়ের সঙ্গে তাঁর রসায়ন দহরম-মহরম। তাই চলাফেরা হরদম। ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিতে জয়ের সঙ্গে কখনও উড়াল দেন উড়োজাহাজে, কখনও দাপিয়ে বেড়ান দামি গাড়িতে, মাঝেসাঝে ঘোরেন মোটরসাইকেলে। নিয়মিত দলীয় কর্মসূচিতে যাওয়ার সেসব ছবি আবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দেয়ালে ছড়িয়ে দেন আমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করলেও নিয়মিত অফিসের পথে হাঁটেন না, তবে দলীয় কর্মসূচিতে থাকেন নিয়মিত। শোভন-রাব্বানীর কমিটিতে কোনো পদ না পেলেও জয়-লেখক ভারমুক্ত হওয়ার পর জয়ের এলাকায় হওয়ায় কপাল খোলে তাঁর। তিনি পান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা উপসম্পাদক পদ। এ নিয়ে অন্য নেতাদের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা যায়, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন আমান। গত ২৮ জুলাই তিনি এস্টেট অফিসের সিকিউরিটি শাখায় তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী সমমানের স্যানিটারি সুপারভাইজার (নিম্নমান সহকারী) হিসেবে যোগ দেন। চাকরি দুই মাস পার হলেও অফিস করেছেন হাতেগোনা কয়েকদিন। গতকাল রোববার এস্টেট অফিসে গিয়েও তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সহকর্মীরা জানান, গতকালও তিনি অফিসে আসেননি। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সিকিউরিটি শাখার জন্য অফিসার পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। চাকরির শর্তাবলি পূরণ না হলেও আমান সেখানে আবেদন করেছেন। পদটি পেতে এরই মধ্যে তিনি বিভিন্ন জায়গায় তদবিরে নেমেছেন। ছাত্রলীগের বর্ধিত কমিটিতে আমানকে সহসভাপতি পদে পদায়ন করা হয়েছে- এমন একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ঝালকাঠি ও রাজাপুর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তবে বর্ধিত কমিটির সবাইকে সাদাকালো প্যাডে পদ পাওয়ার খবর জানানো হলেও আমানের সহসভাপতি হওয়ার বিজ্ঞপ্তিটি রঙিন। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। অন্য যাঁরা পদ পেয়েছেন কেউই রঙিন প্যাডে পাননি। আমান ফেসবুকে অনেককে পদ পাওয়ার জন্য অভিনন্দন জানিয়ে পোস্ট দিলেও নিজের বিষয়টি স্পষ্ট করেননি। এ ব্যাপারে ছাত্রলীগ সভাপতি আল-নাহিয়ান খান বলেন, 'আমানকে সহসভাপতি মনোনীত করার চিঠিটি ভুয়া।' যদিও ওই সরকারি চাকরিজীবী গত শনি ও রোববার ছাত্রলীগ সভাপতির সঙ্গে মৌলভীবাজার ও গাজীপুরে গিয়েছিলেন। এদিকে গতকাল আমানুল্লাহ আমানকে ফোন করা হলে তিনি 'প্রোগ্রামে আছি' বলে ফোন কেটে দেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি আর ফোন ধরেননি। কক্ষ দখল করে রাখার বিষয়ে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবদুর রহিম বলেন, 'ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেলে হলে থাকা নিয়মবহির্ভূত। আমি বিষয়টি জেনেছি এবং অফিসকে দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। আমরা ইতোমধ্যে অবৈধদের সিট ছাড়তে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। শিগগির অবৈধদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
Link copied!