শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চিনি ও ভোজ্যতেলের মজুত কার কাছে কত

প্রকাশিত: ১১:৪৫ এএম, মার্চ ২০, ২০২৩

চিনি ও ভোজ্যতেলের মজুত কার কাছে কত

দেশে বছরজুড়ে অস্থির ভোজ্যতেল ও চিনির বাজার। দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য দুটির দাম এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোক্তাই হারিয়েছে তার ক্রয়ক্ষমতা। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে প্রায়ই বলা হতো, দেশে পণ্যগুলোর ঘাটতি আছে। এর বিপরীতে চাহিদা বেশি। কতটা সত্য ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর এই বক্তব্য। যদি হয়েও থাকে রমজানের আগে কি পাল্টেছে সেই পরিস্থিতি। কতটা বাড়ল পণ্যগুলোর মজুত নিরাপত্তা। এ সম্পর্কিত হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত হাতে এসেছে। রোববার দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির ষষ্ঠ বৈঠকে প্রতিবেদন আকারে ভোজ্যতেল ও চিনির এই মজুত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির ষষ্ঠ বৈঠকে উপস্থাপিত প্রতিবেদন পর্যালেঅচনা করে দেখা যায়, বর্তমানে দেশে ভোজ্যতেলের মজুত আছে ৩ লাখ ২ হাজার ১৬৩ টন। সিটি, মেঘনা, এস আলম, টিকেসহ ৬ শিল্প গ্রুপের কাছে এ পরিমাণ ভোজ্যতেল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া এসব গ্রুপের আমদানি প্রক্রিয়ায় বা পাইপলাইনে রয়েছে আরও ২ লাখ ৭৫ হাজার ৮৪৫ টন ভোজ্যতেল। অন্যদিকে বর্তমানে চিনি মজুত আছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৫৬৩ টন। সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, আব্দুল মোনেম এবং দেশ বন্ধু সুগার এই শীর্ষ পাঁচ শিল্প গ্রুপের কাছে এ পরিমাণ চিনি মজুত রয়েছে। এর বাইরে পাইপলাইনে আরও রয়েছে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৫০ টন চিনি। বৈঠকে উপস্থাপিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেশে এসব শিল্প গ্রুপের কার কাছে কী পরিমাণ ভোজ্যতেল ও চিনি মজুত রয়েছে, সেটিও স্পষ্ট হওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, ভোজ্যতেল ও চিনি সব থেকে বেশি মজুত রয়েছে এস আলম গ্রুপের কাছে। এ গ্রুপটির কাছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ২৬৯ টন ভোজ্যতেল এবং ৮৬ হাজার ৯৮ দশমিক ৬৮ টন চিনি মজুত আছে। এর বাইরে ১ লাখ ৮ হাজার টন ভোজ্যতেল এবং ৩ লাখ ৮৫ হাজার টন চিনি পাইপলাইনে রয়েছে। সিটি গ্রুপের কাছে ২৩ হাজার ৮৬৪ টন ভোজ্যতেল এবং ৬৬ হাজার ৮৬৫ টন চিনি মজুত আছে। এ গ্রুপের কাছে পাইপলাইনে ভোজ্যতেল আছে ৩২ হাজার টন এবং চিনি ৫৩ হাজার ৫৫০ টন। মেঘনা গ্রুপের কাছে ভোজ্যতেল মজুত আছে ৪৬ হাজার ২৩৯ টন। পাইপলাইনে আছে ২২ হাজার টন ভোজ্যতেল। এ শিল্প গ্রুপের কাছে চিনি মজুত আছে ৫০ হাজার টন। আর পাইপলাইনে আছে ৬০ হাজার ৫০০ টন চিনি। এ ছাড়া টিকে গ্রুপের কাছে ২১ হাজার ৭৫০ টন, বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের কাছে ২৩ হাজার ৯৪১ টন এবং বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে ২ হাজার ১০০ টন ভোজ্যতেল মজুত আছে। এর বাইরে টিকে গ্রুপের কাছে ৪৬ হাজার টন, বাংলাদেশ এডিবল অয়েলের ৩২ হাজার ৮৪৫ টন এবং বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে ৩৫ হাজার টন ভোজ্যতেল পাইপলাইনে রয়েছে। আব্দুল মোনেম গ্রুপের কাছে বর্তমানে চিনি মজুত আছে ১৯ হাজার ১০০ টন। এদের কাছে ৬০ হাজার টন চিনি পাইপলাইনে রয়েছে। এ ছাড়া দেশবন্ধু সুগার লিমিটেডের চিনি মজুত আছে ৩ হাজার ৫০০ টন এবং পাইপলাইনে আছে ৪০ হাজার টন। এই বৈঠকে উপস্থাপিত তথ্য থেকে সরকার ও বেসরকারি খাতের অংশীজন নিশ্চিত হয়েছে চাহিদার তুলনায় ভোজ্যতেল ও চিনির মজুত বেশি। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি দাবি করেন, আমাদের যা প্রয়োজন তার মিনিমাম দেড়গুণ তাদের কাছে মজুত রয়েছে। তাদের হাতে আছে ও পাইপলাইনে আছে। ফলে রমজানে তেল ও চিনির কোনোভাবেই কোনো সমস্যা হবে না। চিনি ও ভোজ্যতেলের চাহিদা: বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যমূল্য মনিটরিং সেলের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ভোজ্যতেলের (সয়াবিন, পাম ও সরিষা) বার্ষিক চাহিদা ২০ লাখ টন, স্থানীয় উৎপাদন ২ লাখ ৩ হাজার টন। বছরে ২০ লাখ টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পাম তেল আমদানি করা হয়। এই খাতে কয়েক ধাপে শুল্ক প্রত্যাহারের পর বর্তমানে মাত্র ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপিত আছে। প্রতি মাসে ১ লাখ ৪০ হাজার টন থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। তবে রোজার মাসে তা দ্বিগুণ বেড়ে ৩ লাখ টন হয়। দেশে বছরে ২০ লাখ টন চিনির চাহিদার বিপরীতে দেশীয় আখ থেকে আসে মাত্র ৩০ হাজার টন। প্রতি বছর ২০ লাখ থেকে ২২ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি করা হয়। সেখান থেকে পরিশোধনকালে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ সিস্টেম লস হয়। চিনি আমদানিতেও প্রতি টনে তিন হাজার টাকা সিডি, ৩০ শতাংশ আরডি, ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৪ শতাংশ এটি রয়েছে। সব মিলিয়ে চিনিতে ৬১ শতাংশ শুল্ক ছিল। প্রতি মাসে চিনির চাহিদা ১ লাখ ৬৪ হাজার টন। রমজানে চাহিদা দেড় থেকে দ্বিগুণ হয়। যার পরিমাণ ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টন।
Link copied!