বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চুরির পর তিন দিন বাসায় গান ও মদের পার্টি

প্রকাশিত: ০২:২৫ পিএম, জুন ৩, ২০২২

চুরির পর তিন দিন বাসায় গান ও মদের পার্টি

ছয় লাখ টাকার একটি এফডিআর ভাঙাতে ৩১ মে শাহ্‌জালাল ইসলামী ব্যাংকের উত্তরা শাখায় যান এক যুবক। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত হতে এফডিআরের মূল মালিক মেজর (অব.) বোরহান উদ্দিনকে ফোন করে। ফোনের ওপার থেকে খবরটি পেয়ে বিস্মিত হন এবং জানান এফডিআর ভাঙানোর জন্য কাউকে পাঠাননি তিনি। অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে ব্যাংক কর্মকর্তার চোখ ফাঁকি দিয়ে সটকে পড়েন ওই যুবক। সস্ত্রীক কানাডায় অবস্থান করা বোরহান দ্রুত বিষয়টি তাঁর বাড়ির আরেক বাসিন্দাকে জানান। তাঁর ফাঁকা ফ্ল্যাটের অবস্থা দেখার অনুরোধ করেন। এরপর দেখা যায়, উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টরের ১৯ নম্বর সড়কের ৫৬ নম্বর বাসায় বোরহানের ফ্ল্যাটের গ্রিল কাটা ও আলমারি তছনছ। তখন নিশ্চিত হওয়া যায়, চোর চক্র ওই বাসায় হানা দিয়েছে। এরপর পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। তদন্তে বেরিয়ে আসে, ওই বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী মো. কবিরুলের নেতৃত্বে পাঁচজন বোরহানের ফ্ল্যাট থেকে নগদ টাকাসহ ৫০ লাখ টাকার এফডিআর ও স্বর্ণালংকার চুরি করেছেন। চুরির পরও তিন দিন ফাঁকা ফ্ল্যাটে গিয়ে তাঁরা গান ও মদের আসর বসান। জানা গেছে, ফ্ল্যাটের মালিক ও তাঁর স্ত্রী ঘর তালাবদ্ধ করে মাস দুয়েক আগে কানাডায় ছেলেমেয়ের কাছে বেড়াতে যান। এই সুযোগে ওই বাসা টার্গেট করেন নিরাপত্তারক্ষী কবিরুল। তিনি পূর্বপরিচিত চার সহযোগীর সঙ্গে পরিকল্পনা করেন। ওই চারজন হলেন মামুন হোসেন, আবু রায়হান, মিলন ও রাজীব। তাঁরা ওই এলাকার পরিচ্ছন্নতাকর্মী। ছক অনুযায়ী ২০ মে রাত ৯টার দিকে দ্বিতীয় তলার গ্রিল কেটে বোরহানের বাসায় ঢোকেন তাঁরা। একে একে সব আলমারি ভাঙতে থাকেন। এরপরই ফ্রিজ থেকে আম-আপেলসহ নানা ধরনের খাবার-দাবার খান। আলমারি থেকে অর্ধকোটি টাকার এফডিআর ছাড়াও ৩০ লাখ টাকা মূল্যের প্রাইজবন্ড, পৌনে ৪ লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন, ট্যাব হাতিয়ে নেন। নির্বিঘ্নে চুরির মিশন শেষ করেই তাঁরা বাসার ভেতরে মদ, গাঁজা ও গানের আসর বসান। ব্লু-টুথের মাধ্যমে গান শোনেন পাঁচ চোর। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক ইয়াছিন গাজী জানান, টেস্ট কেস হিসেবে ৬ লাখ টাকার একটি এফডিআর ভাঙাতে ব্যাংকে যান চক্রের এক সদস্য। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাঁকে চ্যালেঞ্জ করলে তিনি পালিয়ে যান। ব্যাংকের সিসিটিভির ফুটেজে তাঁর ছবি রয়েছে। তদন্ত শুরুর পর ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রথমে নিরাপত্তারক্ষী কবিরুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এলোমেলো উত্তর দেওয়ায় তাঁর প্রতি সন্দেহ বাড়ে। বিশদ জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে কবিরুল স্বীকার করেন, তাঁর নেতৃত্বে চুরির ঘটনা ঘটে। অন্য আসামিদের নামও জানান তিনি। এরপর উত্তরা ও তুরাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে বুধবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্ত-সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চুরি করার পর আরও দু'দিন ওই বাসায় রাতে ঢোকেন চক্রের সদস্যরা। তাঁরা বাসায় গিয়েই মূল দরজা ভেতর থেকে আটকে দিতেন, যাতে বাইরে থেকে কেউ টের পেলে দ্রুত গ্রিলের কাটা অংশ দিয়ে পালাতে পারেন। সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা ফাঁকা বাসাটি নিজেদের মতো ব্যবহার করেছেন। আলমারি ও ফ্রিজ থেকে খাবার খেতেন। আবার ইয়াবা ও গাঁজার আসর বসানোর আলামত বাসায় পেয়েছেন তদন্ত সংশ্নিষ্টরা। গ্রেপ্তাররা পুলিশকে জানিয়েছেন, নগদ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। ওই টাকা তাঁরা খরচ করে ফেলেছেন। আর বাসা থেকে নেওয়া এফডিআর, প্রাইজবন্ড, স্বর্ণালংকার নিরাপত্তারক্ষী কবিরুল তাঁর হেফাজতে রাখেন। এসব ভাঙাতে পারলে তাঁদের ভাগ-বাটোয়ারা করে নেওয়ার কথা ছিল। উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর সোসাইটির পরিবেশ সম্পাদক বজলুর রহমান বলেন, ফ্ল্যাটের মালিক বিদেশে থাকায় তিনি বাদী হয়ে মামলা করেছেন। নিরাপত্তারক্ষীর সহযোগিতায় এ ধরনের চুরির ঘটনায় তাঁরা বিস্মিত। পুলিশের উত্তর বিভাগের ডিসি মোর্শেদ আলম বলেন, চক্রটি উত্তরা, আব্দুল্লাহপুর, কামারপাড়া, টঙ্গী এলাকায় চুরি ও ছিনতাই করে। দিনে তাদের পৃথক পেশা থাকলেও রাতে বদলে যায়। এই চক্রে আর কেউ রয়েছে কিনা, সেটি বের করার চেষ্টা চলছে। তারা অনেক বেপরোয়া। চুরির পাশাপাশি নেশার সঙ্গে জড়িত। চুরির পরও কয়েক দিন ফাঁকা বাসায় তারা আড্ডা জমায়। যাদের নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে নিযুক্ত করা হচ্ছে, তাদের বিষয়ে আরও খোঁজখবর নেওয়া দরকার বলে জানান তিনি।
Link copied!