বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্রদল করা সন্তানের জনক হলেন থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি

প্রকাশিত: ০৭:৫৯ এএম, মে ২০, ২০২২

ছাত্রদল করা সন্তানের জনক হলেন থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি

এক সময়কার ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ঢাকা মহানগর পশ্চিম ছাত্রদলের মিছিল-মিটিংয়েও নিয়মিত অংশ নিতেন তিনি। রাতারাতি ভোল পাল্টে হয়ে যান ছাত্রলীগ নেতা। বাগিয়ে নেন পল্লবী থানা ছাত্রলীগের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সহসভাপতির পদ। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙের কারণে ২০২০ সালের ২৮ জুন একবার বহিষ্কারও হন। এবার ছাত্রলীগের আরও বড় পদ বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী থেকে ছাত্রলীগ নেতা বনে যাওয়া ব্যক্তিটির নাম সরদার মো. রুবেল রানা। ছাত্রলীগের রাজনীতির পাশাপশি একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলও রয়েছে তার। প্রতিষ্ঠিানটির মালিক ও প্রধান শিক্ষক তিনি। বিবাহিত এই ছাত্রলীগ নেতা এক কন্যাসন্তানের জনক। তিনি সদ্যঘোষিত পল্লবী থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। এদিকে গতকাল (বুধবার) সহসভাপতি নির্বাচিত হয়ে কমিটির একটি কাগজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন ছাত্রলীগ নেতা রুবেল রানা। মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতাদের উদ্দেশে ফেসবুকে রুবেল লেখেন, ‘ছাত্রলীগের একেবারে শেষ দিকে এসে রাজনৈতিক বড় ভাইরা আমাকে যে সম্মান দিয়েছে তার জন্য আমি তাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ, ছাত্রলীগের বিদায় বেলা আপনাদের ভালোবাসাগুলো আমার সারা জীবন মনে থাকবে। ছাত্র রাজনীতিতে আমার ভুলত্রুটিগুলো আপনারা সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ’ এ ব্যাপারে পল্লবী থানা ছাত্রলীগের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি কামাল পাশা বলেন, ‘রুবেল এক সময় ৫নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিল। সে ছাত্রদলের মিছিল মিটিংয়ে নিয়মিত অংশ নিত। আমরা কয়েকটি ছবি হাতে পাই আর ওই ঘটনার সত্যতাও মেলে। তাকে বহিষ্কার করি। গতকাল (বুধবার) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি সে থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছে। কমিটির কাগজ ফেসবুকে ছেড়েছে। অবশ্য আমরা তার বহিষ্কারাদেশ এখনো প্রত্যাহার করিনি।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে পল্লবী থানা ছাত্রলীগের এক সহসভাপতি বলেন, ‘পল্লবী থানা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। ওই কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনই বিবাহিত। গত কয়েক বছরেও তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে পারেনি।গত ৩-৪ দিন ধরে কয়েকজনকে থানা কমিটির ছাত্রলীগের পদ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রুবেল রানাও রয়েছে। সে এক সময় ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিল। ওই সময় ছাত্রদলের হয়ে বিএনপির মিছিল-মিটিংয়ে নিয়মিত অংশ নিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ছবি ভাইরাল হলে তাকে ৫নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারও করা হয়।’ ওই সহসভাপতি আরও বলেন, ‘পল্লবী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আপন হোসেন সেলিম সম্পর্কে রুবেলের চাচা শ্বশুর হন। সে সুবাদে রুবেল হয়ত থানা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদটি বাগিয়ে নিয়েছে। রুবেল বিবাহিত। তার একটি মেয়ে রয়েছে। একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলের মালিক ও প্রধান শিক্ষকও সে।’ এদিকে কমিটি ঘোষণার পর রুবেল রানার কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিতে দেখা যায়, ঢাকা মহানগর পশ্চিম ছাত্রদলের সাবেক এক সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বিএনপির দলীয় কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছাত্রলীগ নেতা রুবেল। এ ব্যাপারে ছাত্রলীগ নেতা রুবেল রানা বলেন, ‘আপনাদের দোয়ায় আমি গতকাল (বুধবার) পল্লবী থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছি। এর আগে আমাকে বিনা অপরাধে শত্রুতা বশত ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্রদলের সঙ্গে আমার ও আমার পরিবারের কারো সম্পর্ক নেই। ছাত্রদলের কোনো প্রোগ্রামে আমি যাইনি। যে ছবির কথা বলা হয়েছে- তা দেখতে আমার মতো হলেও ওটা আমি না। নেতারা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি স্কুলের প্রধান শিক্ষক আর শেষ সময়ে ছাত্রলীগের নেতা হয়েছি। বিবাহিত হওয়ায় বেশি দিন ছাত্ররাজনীতি করব না। আওয়ামী লীগের অন্য সংগঠনে যোগ দিব। এটা নিয়ে না লেখাই ভালো।’ পল্লবী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি জুম্মান বলেন, ‘রুবেলকে থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি করা হয়েছে। গতকাল (বুধবার) কমিটির কাগজ দেওয়া হয়েছে। ওর বিরুদ্ধে ছাত্রদল করার অভিযোগ শুনেছি। ছাত্রলীগ থেকে একবার বহিষ্কারও হয়েছে। কীভাবে ওকে পদ দেওয়া হলো- এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছি। ভবিষ্যতে আর যাতে এ ধরনের ভুল না হয়।’
Link copied!