শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গি ছিনতাইকাণ্ড: আনসার আল ইসলামের ‘দায় স্বীকার’

প্রকাশিত: ১২:৫৪ পিএম, নভেম্বর ২৭, ২০২২

জঙ্গি ছিনতাইকাণ্ড: আনসার আল ইসলামের ‘দায় স্বীকার’

আদালত আঙিনায় জঙ্গি ছিনতাইকাণ্ডের দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। ‘দাওয়ালিল্লাহ’ নামে ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, আলহামদুলিল্লাহ, প্রকাশক দীপনকে হত্যাকারী দুই মুজাহিদ ভাইকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে অপর দুই মুজাহিদ ভাই মুরতাদ বাহিনীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। আল্লাহ তাদের রক্ষা করুন, হাফিজাহুল্লাহ তালা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের উপকমিশনার (ডিসি) এসএম নাজমুল হক বলেন, জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় 'দাওয়ালিল্লাহ' নামে ওয়েবসাইটে আনসার আল ইসলামের বিবৃতির কথা আমরাও জানতে পেরেছি। জঙ্গি কর্মকাণ্ডের খোঁজখবর রাখেন এমন একাধিক কর্মকর্তা জানান, 'দাওয়ালিল্লাহ' আনসার আল ইসলাম পরিচালিত একটি ওয়েবসাইট। ওই সাইটে এর আগেও বিভিন্ন সময় আনসার আল ইসলাম তাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে বিভিন্ন লেখা পোস্ট করেছিল। গত আগস্টে আল কায়দার শীর্ষ নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি ড্রোন হামলায় নিহত হন। জাওয়াহিরি নিহত হওয়ার পর প্রতিশোধের হুমকি দাওয়ালিল্লাহের বিবৃতির মাধ্যমে দেওয়া হয়। তবে সংগঠনের গোপন কর্মকাণ্ড নিয়ে কখনও 'ওপেন সাইটে' উগ্রপন্থিরা কোনো পোস্ট দেন না। এ ছাড়া নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য তারা বিশেষ কিছু অ্যাপ ব্যবহার করে। পুলিশের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ২০১৫ সালের আগে 'দাওয়ালিল্লাহ' একটি ব্লগভিত্তিক সাইট ছিল। এর পর এটিকে পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইটে রূপ দেওয়া হয়। এতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন আনসার আল ইসলামের নেতা বাকী বিল্লাহ ওরফে আবু সামির ওরফে জাফর ওরফে ফয়সাল। আইসল্যান্ডভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিট কয়েনের মাধ্যমে এই সাইটের ডোমেইন কেনা হয়েছিল। সাইটটি পরিচালনায় তিন থেকে চারজন অ্যাডমিন থাকেন। তাদের সবার ওপরে থাকেন সুপার অ্যাডমিন। গোয়েন্দারা বলছেন, এই সাইটের অন্যতম একজন অ্যাডমিন হলেন মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া। পুলিশের আরেক কর্মকর্তা জানান, বাকি বিল্লাহ আনসার আল ইসলামের তথ্যপ্রযুক্তি ও নজরদারি প্রতিরোধ বিভাগের প্রধান ছিলেন। বাকীর ব্যাপারে পুলিশের ভাষ্য- জিয়ার মাধ্যমে ২০১৪ সালে তিনি এই সংগঠনে যোগ দেন। প্রথমে তাকে মিডিয়া বিভাগে কাজ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। দক্ষতা ও জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে অল্প সময়ের মধ্যে তাকে আনসার আল ইসলামের আইটি ও নজরদারি প্রতিরোধ বিভাগের প্রধান করা হয়েছিল। তিনি আনসার আল ইসলামের প্রধান মিডিয়া ফোরাম তৈরি করাসহ সংগঠনের সদস্যদের যোগাযোগের নিরাপত্তার জন্য একটি এনক্রিপটেড যোগাযোগমাধ্যম তৈরি করেন। অধিকতর নিরাপত্তার জন্য টেইলস নামে একটি অপারেটিং সিস্টেমও নিজেদের ব্যবহার উপযোগী করে দেন। বাকী বিল্লাহ নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। জঙ্গিবাদে জড়ানোর কারণে দ্বিতীয় বর্ষের পর আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। বাকীর পর আনসার আল ইসলামের আইটি বিভাগের দায়িত্ব নেন সেনাবাহিনী থেকে বহিস্কৃত জিয়া। এর আগে দীর্ঘ সময় তিনি সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান ছিলেন। গত বছরের এপ্রিলে সিটিটিসির অভিযানে বাকী বিল্লাহ ও তার আরেক সহযোগী আরিফুল ইসলাম জাহেদ ওরফে আইমান ওরফে আরাহান ওরফে রেহানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়। পুলিশ বলছে, ২০০৮ সালে জামায়াতুল মুসলিমিন নামে একটি সংগঠনে যোগ দেন। পরে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রশাসনে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় জিয়ার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এর পর আনসার আল ইসলামে যোগ দেন। গত ২০ নভেম্বর পুরান ঢাকার আদালত চত্বর থেকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেলকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তবে শামীম ও সোহেলের আরও দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া আরাফাত রহমান ও মো. সবুরকে ছিনতাই করতে ব্যর্থ হয় তাদের সহযোগীরা। জঙ্গি ছিনতাইয়ের এক সপ্তাহ পার হলেও শামীম ও সোহেলের খোঁজ মেলেনি। ধরা পড়েনি তাদের মূল সহযোগীরা। পুলিশের ভাষ্য, তারা দেশের ভেতরে কোথাও লুকিয়ে থাকতে পারে। এ ব্যাপারে সিটিটিসির প্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ছিনতাইকাণ্ডে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন জঙ্গিকে আমরা শনাক্ত করেছি। তাদের নাম-পরিচয়ও পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, পালানো দুই জঙ্গি সীমান্ত ডিঙাতে পারেনি।
Link copied!