মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

জনপ্রতিনিধি-প্রশাসনের ওপর জনমনে ক্ষোভ

প্রকাশিত: ১১:৪৬ এএম, অক্টোবর ১৯, ২০২১

জনপ্রতিনিধি-প্রশাসনের ওপর জনমনে ক্ষোভ

কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগের জের ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মন্দির, পূজামন্ডপ এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর, দোকানপাটে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটছে। গত বুধবার রাতে কুমিল্লার ঘটনার পরপরই চাঁদপুরে প্রথম হামলা হয়। ঘটনার পরপরই সরকারপ্রধান প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেন দেশব্যাপী মন্দির, পূজামন্ডপ এবং সার্বিকভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘটে যাওয়া হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেন। তিনি গত বৃহস্পতিবার দুর্গাপূজার শেষ দিনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এমন শাস্তি দিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে কেউ এই রকম কাজ করার সাহস না দেখায়।’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, গত বুধবারের ঘটনার পর থেকেই দেশের সব জেলায় বার্তা দেওয়া হয়েছে, সাম্প্রদায়িক তৎপরতা রুখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে। বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে¡ একটি বৈঠকও হয়েছে। বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধান, গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলেছেন, দলীয় সভাপতি দলের এমপি, মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ তৃণমূলের সব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে নিজ নিজ এলাকায় দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনায় আরও বলা হয়, আসছে সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক অপশক্তি মাথাচাড়া দেবে। হিন্দুদের ওপর হামলা এবং এ জাতীয় স্পর্শকাতর ঘটনা ঘটানোর জন্য একটি পক্ষ সক্রিয় থাকবে। কাজেই সরকারের পাশাপাশি দলীয়ভাবেও এটি মোকাবিলা করার নির্দেশ দেন তিনি। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জানান, তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল বৃহস্পতিবার কুমিল্লা, চাঁদপুর ও নোয়াখালীতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। নেতাকর্মীদের মন্দির ও পূজাম-প পাহারা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরদিন দেবী বিসর্জন দেওয়া পর্যন্ত নেতাকর্মীরা মাঠে ছিলেন। কিন্তু গতকাল হঠাৎ করে রংপুরের পীরগঞ্জের ঘটনা অপ্রত্যাশিত। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে রয়েছে। আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, এমপিদের সঙ্গে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দূরত্ব এবং দ্বন্দ্বের সুযোগ নিচ্ছে একটি পক্ষ। এ ঘটনায় পুলিশের ঠিক সময়ে দায়িত্ব পালনের মধ্যেও ঢিলেমিভাব দেখা গেছে। পরিদর্শনে যাওয়া প্রতিনিধিদলকে নেতাকর্মীরা বলেছেন, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতার কথা। তাছাড়া এমপিদের প্রতিও বিষোদগার করেছেন এলাকার অনেকেই। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সাম্প্রতিক এ হামলার ঘটনায় তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি এবং এমপিদের ওপর জনরোষ তৈরি হয়েছে। এছাড়া রংপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, রংপুরের পীরগঞ্জ, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য থেকে জানা গেছে, গত বুধবার থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দুদের মন্দির, দোকানপাট, বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় প্রশাসন, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের ওপর ক্ষোভ বাড়ছে। স্থানীয়দের পাশাপাশি দেশব্যাপী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরাও এসব ঘটনায় দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছেন। গতকালও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। এসব সমাবেশ থেকে দাবি উঠেছে, সরকারপ্রধানের নির্দেশনার পরও কেন রংপুরের পীরগঞ্জে এতবড় হামলা হলো। এদিকে গত বুধবার থেকেই সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার নির্দেশ দেওয়া হয়। জেলায় জেলায় সরকারদলীয় নেতাকর্মীদেরও সজাগ থাকতে বলা হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেশের পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি করা হচ্ছিল, তখনই ঘটল পীরগঞ্জের নারকীয় ঘটনা। রবিবার রাতে ফেইসবুকের একটি গুজবেই ভস্মীভূত হয়ে গেলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মাঝিপাড়া। সবকিছু হারিয়ে আহাজারি করছেন তারা। একের পর এক হামলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যেমন অসহায়, তেমনি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন দেশের সাধারণ মানুষ। সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন তারা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রংপুরের ঘটনায় সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সেই সঙ্গে প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি হিন্দুদের ওপর সাম্প্রতিক হামলার স্বাধীন তদন্তেরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় টুইটারে বাংলাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এ আহ্বান জানানো হয়। সম্প্রতি ওই হামলার পর বিদেশি কূটনীতিকদের মধ্যে তিনি প্রথম প্রতিক্রিয়া জানালেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। দেশকে অশান্ত ও অস্থিতিশীল করতেই এ কাজ করা হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীরা সবাই সোচ্চার। এর মধ্যে এ অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দলীয় প্রধানের নির্দেশ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল (আজ) আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল রংপুরের পীরগঞ্জে যাবে।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান বলেন, ‘প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হচ্ছে। তদন্ত দল কাজ করছে। দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।’ সম্প্রীতি বজায় রাখতে সরকার, প্রশাসন, পুলিশের পাশাপাশি নাগরিকদের সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, পীরগঞ্জে হিন্দুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ-লুটপাটের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। এর আগে দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ ঘটনায় সম্পৃক্তদের তাৎক্ষণিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জড়িত সন্দেহে ৪৫ জনকে আটক করা হয়েছে। দুর্গাপূজার মধ্যে কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ অবমাননার কথিত অভিযোগ তুলে সহিংসতা শুরুর পর গত কয়েক দিনে তা ছড়ায় চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজার, ফেনীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে। সেই সাম্প্রদায়িক আগুনে রবিবার রাতে পুড়ে গেছে পীরগঞ্জের মাঝিপাড়া। ফেইসবুকে এক তরুণের ‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগ তুলে সেখানে ২৯টি বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে কোনো জীবনহানি হয়নি, তবে সম্পদহানি হয়েছে, বাড়িঘর পুড়িয়েছে। আমরা মনে করি এই লোকদের আমরা চিহ্নিত করেছি তাৎক্ষণিকভাবেই। এলাকাবাসীর সহায়তায় ৪৫ জনকে ধরেছি এবং আরও কয়েকজনকে ধরার জন্য চেষ্টা চলছে।’ পীরগঞ্জে যা ঘটেছে তাকে ‘আরেকটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘ঘটনার সূত্রপাত এক কিশোরের ফেইসবুকে একটা পোস্ট নিয়ে। ইচ্ছায় দিক বা অনিচ্ছায় বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হোক, স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন এ ঘটনা আঁচ করে ছেলেটি যেখানে থাকত, সেখানে অভিযান চালায়; তবে ছেলেটিকে পাওয়া যায়নি।’ ওই গ্রামের নিরাপত্তা দিতে সেখানে পুলিশ মোতায়েন ছিল জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যারা অগ্নিসংযোগ করেছে তারা দুষ্কৃতকারী। এই দুষ্কৃতকারীরা তখন এই এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় গিয়ে পীরগঞ্জ থানার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামের কয়েকটি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে। আমার কাছে যে তথ্য এসেছে, সেখানে ২৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। দুষ্কৃতকারীরা বাড়িঘর লুট করেছে। ৯০ শতাংশের বেশি বাড়িঘর লুটপাট ও ভাঙচুর করেছে।’ পুলিশ পৌঁছানোর আগেই সেখানে ‘ঘটনা ঘটানো হয়েছে’ মন্তব্য করে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘রাতেই অতিরিক্ত পুলিশ, এপিবিএন, র‌্যাব আর বিজিবি সেখানে গেছে। আমাদের নিরাপত্তার যত ধরনের ব্যবস্থা সেটি আমরা গ্রহণ করেছি। কিন্তু এ ঘটনাটা আকস্মিকভাবেই দুষ্কৃতকারীরা ঘটিয়ে ফেলেছে।’ তিনি জানান, জেলা প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের নগদ অর্থ ও কাপড় বিতরণ করেছে। স্থানীয় এমপি জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীও উদ্যোগ নিয়েছেন। বাড়ি নির্মাণের জন্যও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, যার যা প্রয়োজন হয় দেওয়া হবে। শিগগিরই তাদের বাড়িঘর তৈরি করে দেওয়া হবে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বলি হচ্ছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। ফেইসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ধর্মীয় উসকানি দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার জন্য অপতৎপরতা চালাচ্ছে একটি মহল, যাদের অধিকাংশকেই শনাক্ত করা হয়েছে। অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে রবিবার রাতে রংপুরের তাণ্ডব তাদের তদন্তের সেই অগ্রগতি ম্লান করে দিয়েছে। মাঝিপাড়া তাণ্ডবে বাইরের লোকও ছিল : পীরগঞ্জের মাঝিপাড়ার স্থানীয়দের ভাষ্য, গত কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, মন্দির ভাঙচুর ও বাড়িঘরে লুটপাট চলছিল। এ অবস্থার মধ্যেও স্থানীয় প্রশাসন কিংবা রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে তাদের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। এমনকি যখন গুজবের অভিযোগে লোকজন জড়ো হচ্ছিল তখনো প্রশাসন নির্বিকার ছিল। যার কারণে হামলাকারীরা সহজেই অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। তারা আরও জানান, হামলার সময় আশপাশের লোকজনের সঙ্গে আগুন দেওয়ার জন্য বাইরে থেকেও অনেকে এসেছিল। তাদের মধ্যে তরুণ ও যুবকদের সংখ্যা ছিল বেশি। প্রায় সবার হাতে ছিল লাঠি, রামদা, ছুরি। কারও কাছে ছিল কেরোসিন। হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের অনেকে পরিচিত মুখ। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা : ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগ। প্রতি পরিবারকে দুই হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেন। বেলা ১১টার দিকে করিমপুর গ্রামটি পরিদর্শন করেন বিভাগীয় কমিশনার আবদুল ওয়াব ভূঞা, পুলিশের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার, জেলা প্রশাসক আসিব আহসান ও র‌্যাব-পুলিশের কর্মকর্তারা। পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ইতিমধ্যে ৪০ জনকে আটক করা হয়েছে। নারকীয় এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা কেউ ছাড় পাবে না। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।’ এর সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক বিষয় দেখছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাজনীতির কথা বলতে পারব না। তবে উগ্র একটি গোষ্ঠী এ তাণ্ডব চালিয়েছে।’ নন্দীগ্রামের ইউএনও থেকে রংপুরের ডিসি, দুই জেলার তাণ্ডবকালীন ‘দায়িত্বশীল’ : রংপুরের মাঝিপাড়া যখন জ্বলছিল, তখন থেকেই স্থানীয় পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জেলা প্রশাসক আসিব আহসানের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতার অভিযোগ উঠতে থাকে। স্থানীয়রা জানান, জেলা প্রশাসক আসিব আহসান যখন বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (্ইউএনও) ছিলেন, সে সময়ে সাম্প্রদায়িক হামলা ঠেকাতে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি। একই ঘটনা ঘটেছে মাঝিপাড়ায়, যখন তিনি এই জেলার প্রশাসক। ২০১৩ সালের ৩ মার্চ জামায়াত নেতা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখা নিয়ে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার প্রশাসনিক ভবনসহ ১৬টি ভবন পুড়িয়েছিল জামায়াত-বিএনপি সমর্থিত লোকজন ও ধর্মান্ধরা। সেই সময়ে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সরকারি সম্পত্তি ও সংখ্যালঘুদের জানমালের কিছুই রক্ষা করতে পারেনি। নন্দীগ্রামের তৎকালীন ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন আসিব আহসান। সে সময় তিনি চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছিলেন। স্থানীয়দের জীবন ও সম্পদ রক্ষা না করে তিনি নিজেই পালিয়েছিলেন। একই ঘটনা ঘটল রংপুরে, তিনি যখন এ জেলার প্রশাসক হিসেবে কর্মরত। বরাবরের মতো এবারও তিনি রংপুরের পীরগঞ্জের মাঝিপাড়া রক্ষা করতে পারেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আসিব আহসান মোবাইল ফোনে বলেন, ‘ঘটনার পরপরই প্রথমে ওসি জানতে পারেন। তারপর ইউএনও, এসিল্যান্ডকে অবহিত করা হয়। তারপর সেখানে মানুষজন জড়ো হওয়ার পর এক্সট্রা ফোর্স মোতায়েন করা হয়। এখন বিজিবি, পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।’ বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার সে সময়ের তাণ্ডব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনার সময় আমি সেখানে দায়িত্ব পালন করেছি। তবে সেখানকার পরিস্থিতি আর এখানকার পরিস্থিতি এক নয়। নন্দীগ্রামে সরকারি ভবনে হামলা হয়েছে। আর এখানে মাঝিপাড়ায়।’ এ হামলার বিষয়ে আগাম কোনো তথ্য ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি তদন্তকারী সংস্থার বিষয়, গণমাধ্যমের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ করতে চাচ্ছি না।’ সূত্র: দেশ রূপান্তর
Link copied!