মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জেমিকে অব্যাহতি দায়িত্বে ব্রুজন

প্রকাশিত: ০৯:৪৭ এএম, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১

জেমিকে অব্যাহতি দায়িত্বে ব্রুজন

গুঞ্জনটা শোনা যাচ্ছিল বেশ কিছু দিন ধরে। শুক্রবার সেটাকে সত্যি প্রমাণ করল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। জাতীয় দলের পারফরম্যান্স আশানুরূপ না হওয়ায় প্রধান কোচের পদ থেকে দুই মাসের জন্য জেমি ডে-কে অব্যাহতি দিয়েছে সংস্থাটি। তার জায়গায় বসানো হয়েছে বসুন্ধরা কিংসের সফল কোচ অস্কার ব্রুজনকে। মূলত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপকে ভাবনায় রেখেই কোচের চেয়ারে এই বদল আনা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশ্বকাপ বলা হয় সাফ চ্যাম্পিয়শিপকে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স তথৈবচ। সবশেষ তিন আসরের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে। ঘরের মাঠে হওয়া সবশেষ আসরে কোচ ছিলেন জেমি। সেবার তিন ম্যাচের দুটোতে ড্র আর একটি হেরে গ্রুপ পর্ব পেরুতে পারেনি জেমির শিষ্যরা। এরপর এসএ গেমসেও ভালো করতে পারেনি দল। তবু এই ইংলিশ কোচের সঙ্গে ২০২২ সাল পর্যন্ত চুক্তি নবায়ন করে বাফুফে। অর্থাৎ জেমির ওপর পূর্ণ আস্থাই রেখেছিল দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাটি। কিন্তু বিশ্বকাপ আর এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইয়ের পর কদিন আগে কিরগিজস্তান সফরে দলের ব্যর্থতায় টলে গেছে আস্থা। তাই আগামী মাসের প্রথম দিন থেকে মালদ্বীপে শুরু হতে যাওয়া এবারের সাফের জন্য ব্রুজনকে বেছে নিয়েছে বাফুফে। এ প্রসঙ্গে জাতীয় দল কমিটির প্রধান কাজী নাবিল আহমেদ বলেছেন, ‘আমরা সবশেষ নেপাল আর কিরগিজস্তানে দুটো টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়েছিলাম। দুটি টুর্নামেন্টের ফলাফল আশানুরূপ হয়নি। এ নিয়ে আমরা একাধিকবার জেমির সঙ্গে আলোচনা করেছি। কিন্তু তার ব্যাখ্যা আমাদের মনঃপুত হয়নি।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আজ আমাদের ন্যাশনাল টিম কমিটির সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সর্বসম্মতিক্রমে আমরা জেমিকে দুই মাসের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থায় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। এই সময়ে বসুন্ধরা কিংসের কোচ অস্কার ব্রুজন দায়িত্ব পালন করবেন।’ সাফের পর আগামী দুই মাসের মধ্যে হতে যাওয়া যুব এশিয়ান কাপ বাছাই ও শ্রীলঙ্কায় চারজাতির একটি টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলের কোচ থাকবেন ব্রুজন। নির্দিষ্ট করে বললে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত তাকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বাফুফে। কিন্তু এই স্প্যানিয়ার্ড তো বসুন্ধরা কিংসের কোচ, তিনি জাতীয় দলের দায়িত্ব নেবেন কী করে? জানা গেছে, কিংসের সঙ্গে তার চুক্তির মেয়াদ আপাতত শেষ। নতুন করে চুক্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত ব্রুজন মুক্ত। দায়িত্ব নিতে তার কোনো সমস্যা নেই। তবে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ শুরুর মাত্র ১৫ দিন আগে কোচ বদল, জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের কিছু সমস্যা তো হওয়ারই কথা। সেই ২০১৮ সালের জুন থেকে জেমির কোচিংয়ে খেলে আসছেন জামাল-সাদরা। সেটিতেই তারা অভ্যস্ত। এই অল্প সময়ে জামালরা ব্রুজনের কৌশলের সঙ্গে কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই। তবে সুবিধাজনক একটা দিকও আছে। যেহেতু জাতীয় দলের বেশিরভাগ ফুটবলার ব্রুজনের অধীনে বছরতিনেক ধরে বসুন্ধরা কিংসে খেলছেন, তাদের ক্ষেত্রে কাজটা খুব সহজই হবে। কাজী নাবিলও তেমনটাই বললেন, ‘গত তিন বছরে ব্রুজন বাংলাদেশে সবথেকে সফল কোচ। লিগে, ফেডারেশন কাপে তার ফল সবথেকে ভালো। তার কোচিং আমরা লক্ষ্য করেছি। নিজের খেলোয়াড় এবং প্রতিপক্ষ সম্পর্কেও তার ভালো অভিজ্ঞতা আছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে তাকে বেছে নিয়েছি আমরা।’ দুই মাসের জন্য অব্যাহতি দেওয়া হলেও চুক্তি অনুযায়ী এই সময়ে জেমি বেতন-ভাতা পাবেন। তবে এরপর তাকে আর দায়িত্বে ফেরাবে কি না বাফুফে, সেটা নিয়েও কিছু কিন্তু রেখে দিলেন কাজী নাবিল, ‘আপাতত দুই মাসের জন্য তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পরে তার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ এর আগেই অবশ্য কোচিং স্টাফের কিছু সদস্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাফুফেকে। কাজী নাবিল জানালেন, সেসব সিদ্ধান্ত ব্রুজনের সঙ্গে আলোচনা করেই নেওয়া হবে, ‘বর্তমান কোচিং স্টাফে যারা আছে, তাদের রাখা হবে কি না- নতুন কোচের সঙ্গে আলোচনা করেই সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা নতুন এই কোচের অধীনে সাফে ভালো ফল আশা করছি। ফাইনালে খেলা আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’ দায়িত্ব নিয়ে সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশকে ব্রুজন পৌঁছে দিতে পারবেন কি না সেটা সময় বলবে। তবে দুই মাসের জন্য জাতীয় দলের কোচ হওয়া নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি এ স্প্যানিয়ার্ড। তা জেমির সঙ্গে বাফুফের অপেশাদার আচরণের কারণেই কি না কে জানে! তবে বাফুফের এমন অপেশাদার সিদ্ধান্তে স্বাভাবিকভাবেই অবাক হয়েছেন জেমি।
Link copied!