শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টিনের ঘরে অঢেল ঋণ

প্রকাশিত: ০১:৪৭ পিএম, অক্টোবর ৪, ২০২২

টিনের ঘরে অঢেল ঋণ

ইটের দেয়ালঘেরা নড়বড়ে টিনের ঘর। কে বলবে এই ঘরই রূপকথার গল্পের মতো আলাদিনের চেরাগ হয়ে আপসে নিয়ে এসেছে কয়েক হাজার কোটি টাকা! এই ঘর ঘিরেই সব রূপকথাকে হার মানানো এক রাক্ষুসে গ্রুপ এখন দৃশ্যপটে। রাজশাহী বিসিকের নামসর্বস্ব নাবিল গ্রুপই হল-মার্ক-বিসমিল্লাহ গ্রুপকেও পেছনে ফেলে, এবার শরিয়াভিত্তিক তিন ব্যাংক থেকে বের করে নিয়েছে ৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। ঘর নড়বড়ে হলেও এটিই হাজার কোটি টাকা খসিয়ে নেওয়া নাবিল গ্রুপের প্রধান কার্যালয়। প্রধান কার্যালয় যা-ই হোক, রাজধানীতে থাকা করপোরেট অফিস অবশ্যই জৌলুশপূর্ণ হবে বলে মনে হতে পারে। না, সরেজমিনে তেমন কিছুই পাওয়া যায়নি। ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা নিলেও রাজধানীর বনানী আবাসিক এলাকায় গ্রুপটির মাত্র কয়েক শ বর্গফুটের একটি নামমাত্র অফিসের অস্তিত্ব মিলেছে। প্রতিষ্ঠানের এমডি মাঝেমধ্যে সেখানে গেলেও কিছুক্ষণ গল্প করে, পিয়ন-দারোয়ানদের কয়েক হাজার টাকা করে বকশিশ দিয়ে হাওয়া হয়ে যান। তবে আমের মৌসুমে এ করপোরেট অফিস জমজমাট হয়ে ওঠে। তখন কিছু অচেনা মানুষের আনাগোনা বাড়ে। তাঁরা ক্যারেটভর্তি রাজশাহীর আম নিয়ে খুশিমনে ফিরে যান। এর বাইরে অফিসটিতে তেমন কোনো কাজ নেই। অথচ পর্ষদবিহীন এমন একটি গ্রুপই নিজস্ব ১৭টি কোম্পানির কাগুজে গল্প ফেঁদে চূড়ান্ত চতুরতার আশ্রয় নিয়ে বোকা বানিয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংককে। জানা যায়, ভুঁইফোড় এই গ্রুপকে সামনে রেখে আড়ালে মধু খাচ্ছেন প্রভাবশালী দুই ‘গডফাদার’। ব্যাংকিং নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নতুন করে সামনে আসা অখ্যাত নাবিল গ্রুপের ঋণ অনিয়মের তথ্য জানা গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন এবং গ্রুপের রাজশাহী ও ঢাকায় করপোরেট অফিস ঘুরে। একের পর এক ঋণ কেলেঙ্কারিতে পুরো ব্যাংকব্যবস্থা যখন খাদের কিনারে, তখনই ভুঁইফোড় নাবিল গ্রুপকে নিয়ম ভেঙে বিপুল অঙ্কের ঋণ দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক পর্ষদ পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সীমা বেঁধে দেওয়া আছে। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে পুরো ব্যাংকব্যবস্থার জন্য তা ক্ষতিকর হবে। বিশেষ করে ঋণ দেওয়া ব্যাংকগুলোর জন্য তা নিজের রশিতে নিজেরই ফাঁসি হওয়ার শামিল।’ বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, নিয়ম ভেঙে নাবিল গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক—এসআইবিএল। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক দিয়েছে ৪ হাজার ৫০ কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং এসআইবিএল দিয়েছে ১ হাজার ১২০ কোটি টাকা। ব্যাংক তিনটি বিগত ৬ মাসে জামানত ছাড়াই শর্ত শিথিল করে ঋণ দিয়েছে গ্রুপটিকে। গত ২১ মার্চ রাজশাহী ও গুলশান শাখার গ্রাহক নাবিল গ্রুপ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের জন্য যথাক্রমে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা এবং ৯৫০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দেয় ইসলামী ব্যাংক। আর চলতি বছরের ২৩ জুন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক একই গ্রুপের শিমুল এন্টারপ্রাইজসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ অনুমোদন দেয় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার। এ ছাড়া গত ৩০ মে নাবিল গ্রুপ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের জন্য ১ হাজার ১২০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন দেয় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। এ ঋণের পরিমাণ বৈধ সীমার প্রায় ৫ গুণ। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে এত টাকা নিয়ে নাবিল গ্রুপ কী করল সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর উত্তর খুঁজতে গিয়েই পরিদর্শন করা হয় গ্রুপটির রাজশাহীর প্রধান কার্যালয়। রাজশাহী বিসিকে পাওয়া যায় নাবিল গ্রুপের একটি অস্থায়ী কার্যালয়। ইটের দেয়ালঘেরা টিনের ঘর। নগরীর সপুরা আহমদনগরে এটিই নাবিল গ্রুপের প্রধান কার্যালয়। জানা যায়, রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠান বলতে নাবিলের আছে একটি গরুর খামার, একটি মুরগির খামার এবং একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। এই পার্কের ভেতরে আছে একটি কোল্ড স্টোরেজ, অটোরাইস মিল, ডাল মিল, ফ্লাওয়ার মিল এবং গরু, মাছ-মুরগির খাবারের মিল। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কটি রাজশাহীর পবা উপজেলার ভেড়াপাড়া গ্রামে। নাবিল গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান নাবা ডেইরি অ্যান্ড ক্যাটল ফার্মটি পবার মাহেন্দ্রা এলাকায়। মুরগির খামার গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট এলাকায়। এটির নাম নাবা ফার্ম লিমিটেড। গত রোববার সকালে ডিম বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে লেয়ার মুরগির কিছু লাল ডিম দেখা যায়। বাকি জায়গা ফাঁকা। কর্মচারীরা জানান, কয়েক বছর আগে কাঁকনহাটে জায়গা কিনে মুরগির খামার করা হয়। আছে গরুর খামারও। খামারের ভেটেরিনারি চিকিৎসক সারোয়ার জাহান জানান, ফার্মে প্রায় ৬০০ গরু আছে। এ ছাড়া আছে ২৬টি ছাগল ও ৮টি গাড়ল। দুই বছর আগে ২২ বিঘা জমি কিনে ফার্মটি করা হয়েছে। তবে ভেতরে ঢোকার অনুমতি না পাওয়ায় এসবের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জানা যায়, নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলামের বাড়ি পবায়। তাঁর বাবার নাম হাজি জান বক্স। তেকাটাপাড়ার পাশের গ্রাম ভেড়াপাড়া। এই গ্রামেই একটা রাইস মিল ছিল হাজি জান বক্সের। সেটিই এখন নাবিল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। হাজি জান বক্স এখন নাবিল গ্রুপের চেয়ারম্যান।রোববার সকালে ভেড়াপাড়া গ্রামে গেলে রাস্তার পাশেই নাবিল গ্রুপের একটি রাইস মিল এবং এর সঙ্গে একটি গুদাম দেখা যায়। সেখানে মালিকপক্ষ কিংবা শীর্ষ কোনো কর্মকর্তা না থাকায় কর্মচারীরা ভেতরে ঘুরে দেখার অনুমতি দেননি। তবে একাধিক কর্মচারী জানান, এখানে মাছ, মুরগি ও গরুর ফিডের একটি কারখানাও আছে। একটি রাইস মিলে সেদ্ধ ও আতপ চাল প্রস্তুত করা হয়। আছে ফ্লাওয়ার ও ডাল মিল। ভেতরে আছে একটি কোল্ড স্টোরেজ। সেখানে দেড় লাখ বস্তা আলু মজুত করা যায়। স্থানীয় বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, হাজি জান বক্স জামায়াতের লোক হিসেবে পরিচিত। তাঁর ছেলে আমিনুল ইসলাম এলাকায় স্বপন নামে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি শিবির করতেন। এখনো তিনি এলাকায় জামায়াতের লোক হিসেবে পরিচিত। তবে তাঁর এখন ওঠাবসা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে। এখন বিপুল টাকার মালিক হলেও দুই দশক আগেও তেমন কিছুই ছিল না। পড়াশোনা শেষ করেই তিনি শিবিরের প্রতিষ্ঠান কনটেস্ট কোচিং সেন্টারের পরিচালক হয়েছিলেন। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শিবিরের পক্ষ থেকেই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মনোনীত করা হতো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কনটেস্ট কোচিং সেন্টার বন্ধ হয়ে যায়। তখন আমিনুল ইসলাম ভেড়াপাড়া গ্রামে গিয়ে বাবার রাইস মিলের ব্যবসায় মনোযোগ দেন। এরপর ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ পেতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে তাঁর ব্যবসার পরিধি বাড়তে থাকে। তিনি বিভিন্ন পণ্য আমদানির সঙ্গেও যুক্ত। গত মে মাসে সাগরে জাহাজডুবি হলে নাবিল গ্রুপের ফ্লাওয়ার মিলের প্রায় ৭ কোটি টাকার ১ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন গম নষ্ট হয়ে যায়। নাবিল গ্রুপের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. বাবলু জানান, কাঁকনহাটে প্রায় ৩৫ বিঘা জায়গা কিনে মুরগির খামার করা হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের জমি ৬০-৭০ বিঘা হতে পারে। ক্যাটল ফার্মের জায়গা ২২ বিঘা। ডিম বিক্রয়কেন্দ্রের জায়গা কতটুকু তা তিনি জানেন না। তবে প্রধান কার্যালয়ের জায়গাটি তাঁদের নয়। সেটি বিসিকের কাছ থেকে নেওয়া। আমিনুল ইসলাম রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য। তাঁর স্ত্রী ইসরাত জাহান এখন চেম্বারের পরিচালক। রাজশাহীর পর রাজধানীতে নাবিল গ্রুপের করপোরেট অফিসের খোঁজে গিয়ে বনানীতে একটি আবাসিক ভবনে নামমাত্র অফিস স্পেসের অস্তিত্ব মেলে। গত রোববার গিয়ে দেখা গেছে, আবাসিক ভবনের নাম ব্লিক্সিং জুঁই, যার হোল্ডিং নম্বর ১৩ এবং রোড নম্বর ১৭, ব্লক ডি। ভবনের চার তলার (লেভেল-৩) সামনেই অফিস কক্ষ। সেখানে সাত-আটজন কর্মকর্তার কাজ করার ব্যবস্থা রয়েছে। আর প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাঝেমধ্যে সেখানে অফিস করেন। তবে খুব একটা যাওয়া-আসা করেন না ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আবাসিক এলাকায় হওয়ায় ভবনের বাইরে কোথাও নাবিল গ্রুপের ‘নেমপ্লেট’ বা লোগো বা কোনো নিশানা ছিল না। শুধু তাদের অফিস স্পেসের সামনের দেয়ালে ইংরেজিতে নাবিল গ্রুপ লেখা দেখতে পাওয়া যায়। ভবনে প্রধান নিরাপত্তাকর্মীর দায়িত্বে থাকা মো. ইদ্রিস আলীর কাছে সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে জানতে হওয়া হলে তিনি বলেন, ‘নাবিল গ্রুপের এখানে তেমন কিছু নেই। একটা ছোট অফিস রয়েছে। সেখানে সাত থেকে আটজন লোক বসতে পারেন। এখানে মাসে সাধারণত দুই থেকে তিনবার এমডি স্যার আসেন। তিনি অনেক ভালো মানুষ। সবার সঙ্গে কথা বলেন। যাওয়ার সময় আমাদের বকশিশ হিসেবে সাধারণত ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা দেন। তিনি এলে তখন কিছু অচেনা লোকের আগাগোনা দেখা যায়। তবে তাঁদের বেশির ভাগই বিভিন্ন ব্যাংকের লোক বলে শুনেছি। আমের মৌসুমে এখানে ট্রাকে ট্রাকে আম আসে। পরে তা ক্যারেট ধরে বণ্টন করা হয়।’ মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ‘এখানে অফিস দেখে তাদের সম্পর্কে কিছুই বোঝার সুযোগ নেই। তাঁদের অর্থের বড় উৎস হলো ব্যাংকের ঋণ। তাঁরা নাকি শত শত কোটি টাকা ব্যাংকের ঋণ নেন। ব্যাংক নিজেই ঋণের সব বন্দোবস্ত করে দেয়।’ গুলশানে নাবিল গ্রুপের এমডির ৩ কোটি টাকার ফ্ল্যাট রয়েছে বলেও জানান তিনি। জানা যায়, ১৭টি কোম্পানির গ্রুপ হলেও এর কোনো পরিচালনা পর্ষদ নেই। ঋণ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যাংক একক কোনো প্রতিষ্ঠানকে ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড মিলিয়ে তার সংশোধিত ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দিতে পারে। এর মধ্যে ফান্ডেড (নগদ) ১৫ শতাংশ এবং নন-ফান্ডেড ২০ শতাংশ। আর এই ব্যাংক ৩টির পরিশোধিত মোট মূলধন ৩ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে গ্রুপগুলোকে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারার কথা। কিন্তু এসব ব্যাংক ঋণ বিতরণে করেছে ৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, যা বৈধ সীমার প্রায় ৫ গুণ। এটি রীতিমতো ব্যাংকিং নিয়মের বরখেলাপ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নাবিল গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানকে ইসলামী ব্যাংকের ঢাকার গুলশান শাখা থেকে ৯৫০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। অথচ হালনাগাদ সিআইবির (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এর আগে ওই কোম্পানি মাত্র সাড়ে ৮ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে, ইসলামী ব্যাংকের গুলশান শাখার নতুন গ্রাহক নাবিল গ্রেইন ক্রপসের অনুকূলে যে ৯৫০ কোটি টাকা নন-ফান্ডেড ঋণ দেওয়া হয়েছে, এর বিপরীতে প্রচলিত ব্যাংকিং নীতিমালা অনুযায়ী অন্তত ২৩০ কোটি টাকা জামানত রাখার কথা। আর ঋণের শর্তে ১১০ কোটি টাকার আমানত বা লিয়েন থাকার কথা বলা হয়েছে। অথচ তার কিছুই মানা হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, প্রতিষ্ঠানটিকে এত বিপুল অঙ্কের ঋণ দেওয়ার কোনো কারণই নেই। প্রতিষ্ঠানটির এত বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যবহারের সক্ষমতাও নেই। আর তা যাচাই না করেই ব্যাংকগুলো ঋণ ছাড় করেছে। ওই প্রতিবেদনে নাবিল গ্রুপের ঋণকে ব্যাংকটির পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে বেনামি ঋণ হিসেবে সন্দেহ করা হয়েছে। আবার একই গ্রুপের নামে এত পরিমাণ ঋণ বিতরণ, যা ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ‘একক গ্রাহকের অনুকূলে দেওয়া ঋণের সীমা (সিঙ্গেল পার্টি এক্সপোজার লিমিট) লঙ্ঘন। বিষয়গুলোর অনিয়মের গভীরতা জানতে এখন আরও বিশদ অনুসন্ধান করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফসাইড সুপারভিশন বিভাগ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৬ সালে রাজশাহীতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে নাবিল গ্রুপ। একটি অখ্যাত প্রতিষ্ঠানকে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এত বিপুল অঙ্কের ঋণ দেওয়ার বিষয়ে কথা বলার জন্য ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মুহাম্মদ মুনিরুল মওলার সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এমডিকে কয়েকবার কল করা হয় এবং খুদে বার্তা দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে ব্যাংকটির জনসংযোগ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, গ্রুপটিকে ঋণ দিতে কোনো নীতিমালাই মানা হয়নি। তা ছাড়া গ্রুপটির নেই ঋণ শোধ করার সক্ষমতাও। এত বিশাল ঋণের পেছনে দুজন প্রভাবশালী ‘গডফাদারের’ কথা জানা যায় বিভিন্ন সূত্র থেকে। তাঁরাই নেপথ্যে বিপুল অঙ্কের ঋণের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কি না সে প্রশ্নও সামনে এসেছে। ঋণসংক্রান্ত অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইল নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আমিনুল ইসলাম ঋণপ্রাপ্তির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ভালো চলছে। আমরা নিয়ম মেনেই ঋণ পেয়েছি। সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের কাগজপত্রের কোনো ঘাটতি নেই। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণে বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য তদন্ত করছে। এর বেশি তথ্য পেতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।’ সূত্র: আজকের পত্রিকা
Link copied!