শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডিএসসিসির অপচয় ২০ কোটি টাকা,জলাবদ্ধতার সমাধান হয়নি

প্রকাশিত: ০৯:০৮ এএম, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১

ডিএসসিসির অপচয় ২০ কোটি টাকা,জলাবদ্ধতার সমাধান হয়নি

ডেইলি খবর ডেস্ক: রাজধানীর বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য বিভিন্ন সড়কে পাইপলাইন নির্মাণ করা হলেও জলবদ্ধতা কোনো কোনো সড়কে নিত্যদিনের দৃশ্যই থেকে যাচ্ছে। ধানমন্ডি-২৭ নম্বর সড়কে দুটি পাইপলাইন (নর্দমা) ছিল। সেখানে ২০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন পাইপলাইন নির্মাণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এরপরও ওই সড়কের জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হয়নি,বরং বেড়েছে দুর্ভোগ। চলতি বর্ষা মৌসুমেও সামান্য বৃষ্টিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানিতে তলিয়ে ছিল রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক। বিভিন্ন পত্রিকা, টেলিভিশন ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে এ সড়কের দুর্ভোগের চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সমালোচনার ঝড় ওঠে। ফলে ডিএসসিসির এমন উন্নয়ন কাজ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জানা যায়,প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কের এক পাশের ফুটপাতের নিচে ও মিডিয়ানে দুটি পানি নিষ্কাশন পাইপলাইন ছিল। নতুন করে অপর পাশের ফুটপাতে আরও একটি লাইন নির্মাণ করেছে ডিএসসিসি। তিনটি পাইপলাইন নির্মাণে খরচ হয়েছে অন্তত ৫০ কোটি টাকা। এ সবের একটিই উদ্দেশ্য, তা হলো-সড়কের পানি পাইপলাইনের মাধ্যমে সরিয়ে নেওয়া। এ তিনটি পাইপলাইনের সংযোগ দেওয়া হয়েছে সাত মসজিদ রোডের নিচের ঢাকা ওয়াসা নির্মিত গভীর ড্রেনে। যেটা নির্মিত হয়েছে ১৯৯১ সালে। ওই ড্রেনের সংযোগ কাঁটাসুর খালে। বর্তমানে ড্রেনটির পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। যে কারণে তিনটি পাইপলাইন নির্মাণ করা হলেও পরিষ্কার ও সংস্কারের অভাবে এর সুফল ভোগ করা যা”েছ না। বৃষ্টি হলেই ওই সড়কে জলাবদ্ধতায় নাকাল হচ্ছে রাজধানীবাসী। লালমাটিয়ার বাসিন্দা সায়েদুল ও মনিরুল হক বলেন, ১০ বছরে এ সড়কে তিনবার পানি নিষ্কাশন ড্রেন নির্মাণ করতে দেখলাম। প্রতিবারই শুনেছি, এবার সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু চলতি মৌসুমেও সামান্য বৃষ্টিতে এ সড়কে জলাবদ্ধতার ধকল সামলাতে হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসার পরিচালক প্রকৗশলী একেএম সহিদ উদ্দিন বলেন, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কে তিনটি পানি নিষ্কাশন পাইপলাইন নির্মিত হয়েছে। এর কারণ কী, সেটা আমারও প্রশ্ন। এতকিছু করা হলেও সেখান থেকে সুফল মিলছে না। কেননা এর গোড়ায় গলদ রেখে কাজ করা হয়েছে। একটি পাইপলাইনও সঠিক চিন্তায় করা হয়নি,তাই সুফল মিলছে না। সুফলের কোনো সম্ভাবনাও দেখি না। তিনি বলেন, তিনটি লাইনের সংযোগ দেওয়া হয়েছে সাতমসজিদ রোডের গভীর ড্রেনে। কিš‘ ওই ড্রেনের তো সেই সক্ষমতা নেই। সেটা কেউ ভাবেনি। এজন্য প্রয়োজন একটি লাইন সরাসরি কাঁটাসুর খালে সংযোগ দেওয়া। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ও নগর বিশেষজ্ঞ ম. ইনামুল হক বলেন, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়ক বৃষ্টি হলে তলিয়ে যায়, এটা সবার জানা। এ সমস্যার সমাধানে কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও সমাধান মিলছে না। তিনি বলেন, একেকটি পাইপলাইন করতে তারা অন্তত ১০-১৫ কোটি টাকা করে খরচ করেছে। সেটা না করে প্রথম পাইপলাইনটি ১০-১৫ লাখ টাকায় পরিষ্কার ও সংস্কার করলেই কাক্সিক্ষত সুবিধা পাওয়া যেত। অথচ নতুন করে ২০ কোটি টাকার বেশি খরচ করা হয়েছে, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তিনি আরও বলেন, এটা হচ্ছে মূলত প্রকৌশলীদের দুর্নীতিপ্রবণ মানসিকতার কারণে। পাশাপাশি তাদের অদক্ষতা, উদাসীনতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীন মনোভাবও দায়ী। অনুসন্ধানে জানা যায়,কয়েক বছর ধরে সচিবালয় ও ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কের জলাবদ্ধতা নিয়ে বেশি সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে (ডিএসসিসি)। এ কারণে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। ডিএসসিসির তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের বিশেষ নির্দেশনায় সচিবালয়ের জলাবদ্ধতা নিয়ে কাজ শুরু করে ডিএসসিসি। ওই সময় ডিএসসিসির প্রকৌশলীরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে দুটি উপায় অবহিত করে। প্রথমত, সচিবালয়ের চারপাশে বক্স ড্রেন নির্মাণ করে পানি নিষ্কাশনের গভীর ড্রেনের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করা। দ্বিতীয়ত,সচিবালয় থেকে সরাসরি ধোলাইখালে সংযোগ স্থাপন করা। এখানে ডিএসসিসির প্রকৌশলীদের গভীর মনোনিবেশ ও সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে কঠোর তদারকি থাকায় সুফল মিলেছে। আর ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কের ক্ষেত্রে সরকারের উ”চ পর্যায়ের কোনো চাপ ছিল না। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী নিজের খেয়ালখুশিমতো কাজ করেছে-এমন অভিযোগ করছেন অনেকে। যে কারণে ২০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা খরচ করেও ন্যূনতম সফলতা মেলেনি। জানা যায়, ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের নতুন পাইপলাইন স্থাপন কাজের দরপত্র আহবান করা হয় ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। এ দরপত্রে মাত্র একটি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। পুনঃদরপত্র না করে কার্যকর প্রতিযোগিতা ছাড়াই ওই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দরপত্রের ক্রয়চুক্তি করার পরও কাজের ধরন পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রথমে আরসিসি ড্রেন করার কথা থাকলেও পরে পাইপ ড্রেন করা হয়েছে। এগুলোর পেছনে দায়িত্বপ্রাাপ্ত প্রকৌশলীর বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএসসিসির পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থপনা সার্কেলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. খায়রুল বাকের বলেন, সচিবালয়ের জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজটি আমি করেছি, সেটা শতভাগ সফল হয়েছে। আর ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের কাজটিও আমি করেছি। সেখানে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেটা সমাধানে কাজ করা হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমের শুরুতে যতটা জলাবদ্ধতা ছিল, পরে অনেকাংশে কমে এসেছে। দুটি পাইপলাইন থাকার পরও নতুন পাইপলাইন করা হলো কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,ওই দুটো লাইন তেমন কার্যকর নয় বলে নতুন করে করা হয়েছে। আশা করি বিদ্যমান পাইপলাইন সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে জলাবদ্ধতা থাকবে না।সুত্র-যুগান্তর
Link copied!