মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা দক্ষিণ সিটিকর্পোরেশনের খোকনের ৫ বছরের তথ্য দুদকে

প্রকাশিত: ১১:১০ এএম, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২

ঢাকা দক্ষিণ সিটিকর্পোরেশনের খোকনের ৫ বছরের তথ্য দুদকে

ডেইলি খবর ডেস্ক: ঢাকা দক্ষিণ সিটিকর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের ৫ বছরের নানারকম তথ্য দুদকে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বিগত ৫ বছরের শতাধিক বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বরাদ্দকৃত অর্থের লুটপাট, কাজ সম্পন্ন না করেই বিল উত্তোলন এবং মোটা অংকের কমিশন ভাগাভাগির চাঞ্চল্যকর তথ্য এখন দুনীতি দমন কমিশনের (দুদক) দপ্তরে। সুত্র জানায়, দুদকের নজরদারিতে রয়েছে ডিএসসিসির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী, সাবেক ও বর্তমান অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী,তও¦াবধায়ক প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী,উপ সহকারী প্রকৗশলী এবং ডজন খানিক ঠিকাদারসহ বিভিন্ন বিভাগের অর্ধশতাধিক সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা। তাদেরকে পর্যায়ক্রমে অনুসন্ধানের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হবে বলে জানা যায়। ডিএসসিসির বিভিন্ন সুত্রের সাথে আলাপ করে জানা গেছে,ডিএসসিসিতে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের আমল থেকে বিগত ৫ বছরের উন্নযনের নামে নানা কার্যক্রমে অনিয়মের নানা তথ্য বেরিয়ে আসছে। এরমধ্যে কয়েক শত কোটি টাকায় এলিডি লাইট ক্রয়, নতুন গাড়ী, বড় বড় যন্ত্রপাতি ক্রয়, মশার ওষুধ ক্রয়, এসিআই কোম্পানি থেকে বিনা টেন্ডারে কয়েক কোটি টাকার মশার ওষুধ ক্রয়, দৈনিক মজুরিভিত্তিক সহস্রাধিক কর্মচারী নিয়োগ,পদায়ন এবং কর্মকর্তাদের বদলির নামেও মোটা অংকের বাণিজের অভিযোগ বেশ আলোচিত। এছাড়াও ডিএনসিসির মাতুয়াইল ল্যান্ডফিন্ডের উন্নয়ন প্রকল্প, নতুন এলাকায় বেড়াইত,শ্যামপুর, মাতুয়াইল, বাসাবো, মেরাদিয়া, ডেমরাসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদারদের কাজে অগ্রীম কোটি কোটি টাকার বিল প্রদান করে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমিশন ভাগাভাগি এবং নিম্মমানের কাজ করে পুরো বিল পরিশোধের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ৭০ শতাংশ রেকর্ড এবং তথ্য দুদকের অনুসন্ধানী কর্মকর্তার দপ্তরে। অভিযোগ রয়েছে সাঈদ খোকনের সাথে থাকা মোহাম্মদ সুমন নামের এক কর্মচারি এসব কমিশন বাণিজ্যের সাথে জড়িত ছিলেন। তার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার কমিশন আদয় করা হয়। সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ হিসাবে চিহ্নিত এবং দুদকের মামলার আসামী ছিলেন সাঈদ খোকনের ঘনিষ্ট আস্থাভাজন বিএনপির আসাদুজ্জামান দুলুর ভাই এডিশনাল চিফ ইন্জিনিয়ার আসাদুজ্জামান আসাদ। যিনি ওয়ান এলেভেন সরকারের সময় ১০ কোটি কালো টাকা সাদা করেছেন। ডিএসসিসির নির্ভরযোগ সূত্রগুলো জানায় সরকারের মন্ত্রী মর্যাদায় ডিএসসিসির বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপসের নির্দেশে পরিচালিত আভ্যন্তরীণ তদন্ত টিমের নিবিড় অনুসন্ধানে জনস্বার্থে গ্রহণ করা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ না করেই অগ্রীম কোটি কোটি টাকার বিল ঠিকাদারদের প্রদান, ঘুষ ও মোটা অংকের কমিশন লেনদেনের আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটিত হয়েছে। বিগত ৫ বছর ফ্রি স্টাইলে ডিএসসিসিতে ঘুষ গ্রহণ, রাজস্ব আদায়ে অনিয়ম, বদলি বাণিজ্য, বিভিন্ন মার্কেটে দোকান বরাদ্দ ব্যবস্থাপনায় অনিয়মসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে সরকারি অর্থ আত্মসাতের গোপন ঘটনা এবার প্রকাশিত হচ্ছে।সূত্র মতে,গত ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত ডিএসসিসিতে জনস্বার্থের নামে গ্রহণ করা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে, রাজস্ব বিভাগের বাজার শাখায় নতুন মার্কেট নির্মাণ ও দোকান বরাদ্দে অনিয়ম অর্থ আত্মসাৎ, বিজ্ঞাপনী বিলবোর্ড খাতের শত শত কোটি টাকা লুটপাট এবং পুরনো মার্কেটে শত শত দোকান বরাদ্দ দিয়ে কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। এছাড়া ক্রয়-ভান্ডার বিভাগে হাজার হাজার কোটি টাকার কিনা কাটায়ও অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এমনকি সম্পত্তি বিভাগের অস্থায়ী কোরবানী পশুর হাট ইজারায় অনিয়ম ও সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকা। কাঁচা বাজার, গাড়ি পাকিং ইজারায় অনিয়ম করে লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। পরিবহন এবং বাস টার্মিনাল ইজারার সিংহভাগ অর্থ ভাগাভাগি হয়েছে। এসব অভিযোগ সঠিকভাবে অনুসন্ধান ও তদন্ত হলে ডিএসসিসির সাবেক এবং বর্তমানে কর্মরত শতাধিক কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের রাতারাতি অঢেল সম্পদের মালিক হবার আসল রহস্য রেবিয়ে আসবে। ইতিমধ্যে ঘুষ ও দুর্নীতির অপরাধে বরখাস্তের পর বেশ কয়েকজন আত্মগোপনে চলে গেছেন। সুত্র জানায়, গত ১৪ জুলাই দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপ পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম ডিএসসিসির বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাৎসহ কর্মকর্তাদের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ যাচাই বাছাইয়ের স্বার্থে নির্বাহী প্রকৌশলী ও ঠিকাদারসহ ১২জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলবি নোটিশ পাঠান।নোটিশ প্রাপ্তরা হলেন-মেসার্স নওয়াল কনস্ট্রাকশন ও মেসার্স জিকে এন্টারপ্রাাইজের মালিক, ডিএসসিসির আঞ্চলিক অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী মো. আবুল হাসেম ও তানভীর আহমেদ, হারুন অর রশীদ, সহকারী প্রকৌশলী মো. পারভেজ রানা, সাইফুল ইসলাম, নির্মল চন্দ্র দে, প্রেম ধন রুদ্রপাল এবং উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মেজবা উদ্দিন রাসেল, মোল্লা আব্দুল মান্নান ও মো. দিদার আলম। তলবি নোটিশের পর নির্ধারিত সময়ে অনেকেই হাজির হয়েছেন। উল্লেখিতদেরকে অন্যান্য প্রকল্পের সংশ্লিষ্টতায় পুনরায় তলব করার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া কর অঞল-৩ এর মিজানের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে। দুদক থেকে ইতিমধ্যে প্রকল্প পরিচালক, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী দুর্নীতির বরপুত্র আসাদুজ্জামান, সাবেক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদার, রাজস্ব কর্মকর্তা শাজাহান আলী, কর কর্মকর্তা আলীম আল রাজি, সাবেক মেয়রের পিএস ও কর কর্মকর্তা শেখ কুদ্দুস আহমেদ সহ বিভিন্ন পদ মর্যাদার কর্মকর্তাদের একাধিকবার তলব করেছে দুদক। এরমধ্যে অনেকই দুদকের হাজির হয়েছেন। এছাড়াও বিভিন্ন তারিখে দুদকের পক্ষ থেকে আরো কয়েক দফা ডিএসসিসির সাবেক ও বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রয়োজনে আরও অনেককে জিজ্ঞাসাবাদের তালিকা তৈরি করেছেন দুদক। খোজ নিয়ে জানা গেছে-গত ৬ মার্চ দুদকের উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে সাবেক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদারের বিরুদ্ধে প্রায় দেড় কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছেন। মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে। বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস ২০২০ সালের ১৬ মে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম কর্মদিবসেই ঘুষ গ্রহণ, রাজস্ব আদায়ে অনিয়ম, নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, বিভিন্ন মার্কেটে দোকান বরাদ্দ ব্যবস্থাপনায় অনিয়মসহ বিভিন্ন প্রকল্প বা বায়নের নামে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে অতিরিক্ত প্রধন প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান, সাবেক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সরদারকে চাকরি থেকে স্থায়ী বরখাস্তের মাধ্যমে চমক সৃষ্টি করেন।এরপর আরও বেশ কয়জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন মেয়র। বরখাস্তদের মধ্যে রয়েছেন; কর কর্মকর্তা আতাহার আলী, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাবশালী সহকারী প্রকৌশলী এ.এইচ.এম আব্দুল্লাহ হারুন, নির্বাহী প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ (সাময়িক বরখাস্ত), পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তা ফারুখ আহমেদ, বাজার শাখার কর্মচারী জাকির হোসেন, সম্পত্তি বিভাগের কর্মচারী ইসহাক (সাময়িক বরখাস্ত)। এছাড়া পরিচ্ছন্নতা বিভাগের ৩ ডজর্নেরও বেশি কর্মচারীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে ডিএসসিসির উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত নির্বাহী প্রকৌশলীসহ কর্মকর্তারা সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে প্রকল্পের পরিচালক ও তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মো. বোরহান বলেন এসব অভিযোগ সঠিক না।ডিএসসিসিতে ৪/৫ বছরের আগের মেরামত করা রাস্তবায়ন ড্রেন এখন তো খারাপ হবেই। ওই সময় রাস্তা এবং ড্রেন ভাল ছিল। এসব যাচাই বাছাই করে ঠিকাদারদের পুরো বিল প্রদান করা হয়েছে। ওইসব রাস্তায় বড় বড় গাড়ি এবং মালবাহী ট্রাক চলছে। প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই অগ্রীম বিল প্রদানের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই ধরনের অভিযোগ কাল্পনিক। কাজ শেষ করার পরই বিল প্রদান করা হয়েছে।প্রকল্পের রেকর্ডে সবকিছু উল্লেখ রয়েছে, কি কি কাজ হবে, কি পরিমান কাজ হয়েছে, কাজের মান, অর্থ বরাদ্দ, ঠিকাদারের নাম এবং বিল তৈরি ও পরিশোধ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য রয়েছে। প্রকল্পের কাজে কোন অনিয়ম, দুর্নীতি হয়নি। রেকর্ডপত্রেই তো সব কিছু আছে। প্রকল্পের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ অর্থ ‘টপ টু বটম’ কমিশনের নামে ভাগাভাগির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন,এসব অভিযোগের বিষয়ে তার কাছে কোন তথ্য নেই। তবে একটি সুত্র জানায় দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে দুর্নীতির তথ্য আসছে।  
Link copied!