মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

তাঁর এত টাকা! খুলজা সিম সিম

প্রকাশিত: ০৮:৫৬ এএম, জুন ৫, ২০২২

তাঁর এত টাকা! খুলজা সিম সিম

ডেইলি খবর ডেস্ক: তাঁর এত টাকা! খুলজা সিম সিম।নেই কোনো তার বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবু শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক সেলিম খানের।আলাদিনের চেরাগ তার হাতেই ধরা দিয়ছে। যার ২০০৮ সালেও ছিলোনা রিকসায় চরার পয়সা তার হাতে আজ শতশত কোটি টাকা। এলাকায় খোজ নিয়ে জানা যায় চাঁদপুরে তার বসবাস,সেখানেই ১০ নম্বর লক্ষীপুর মডেল ইউনিয়নে করেন চেয়ারম্যানগিরি। প্রতারণা,জালিয়াতি,সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ করেই বিপুল অর্থবিত্তের চূড়ায় উঠেছেন এই জনপ্রতিনিধি। তবে তাঁর শতকোটি টাকা সম্পদের বৈধ উৎস এখনও খুঁজে পায়নি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সেলিম খানের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তালাশে রয়েছে দুদক। পরিপাটি অনুসন্ধানের জন্য সম্প্রতি কমিশন থেকে হিসাব চাওয়া হলে সেলিম খান স্থাবর-অস্থাবর মোট ১৬ কোটি ২৭ লাখ ৮৩ হাজার ৫৪৪ টাকার সম্পদের হিসাব জমা দেন। সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, বহুতল একাধিক পাকা বাড়ি, একাধিক গাড়ি, বিপুল পরিমাণ জমি, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফ্ল্যাট, নদী থেকে বালু উত্তোলনে ব্যবহূত বহু ড্রেজার, আগ্নেয়াস্ত্র, স্বর্ণালংকার ও ব্যাংকে জমানো বিপুল পরিমাণ টাকার মালিক তিনি।দুদকের অনুসন্ধানে তাঁর নামে শতকোটি টাকার বেশি সম্পদের তথ্য-প্রমাণ মিলেছে। এর মধ্যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ১৮ কোটি ৪৯ লাখ ৫৪ হাজার ৫৪০ টাকার। দলিলমূল্য থেকে নির্ধারণ করা হয়েছে এসব সম্পদের দাম। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী ওই সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের দাম আরও বেশি। এ ছাড়া তিনি ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৬৩টি সিনেমা নির্মাণ করেছেন। প্রতিটি সিনেমায় দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হলেও তিনি বিনিয়োগ দেখিয়েছেন ৯৩ থেকে ৯৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া তিনি চারটি সিনেমা আমদানি করেছেন। এ ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। তাঁর নামে আরও সম্পদ রয়েছে বলে ধারণা করছেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা। অনুসন্ধান করে পর্যায়ক্রমে সেসব সম্পদ বের করা হবে।সেলিম খানের বিরুদ্ধ অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগটি অনুসন্ধান করছেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আতাউর রহমান সরকার। এই অনুসন্ধান কার্যক্রম তদারক করছেন কমিশনের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত শাখার পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বলেন, 'ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগটির অনুসন্ধান চলছে। তাঁর নামে অর্জন করা অর্থ-সম্পদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই সব তথ্য যাচাইও করা হয়েছে। শিগগির কমিশনে অনুসন্ধান প্রতিবেদন পেশ করা হবে।এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান সেলিম খান বলেন, 'দুদকে অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এটাই শেষ কথা।' কিছুদিন আগে আপনি দুদকে সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন- এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, 'আমার যা ছিল, তা জমা দিয়েছি। সেটা তদন্তাধীন।' দুদক সূত্র জানায়,অনুসন্ধান করতে গিয়ে বৈধভাবে সম্পদ অর্জনের জন্য সেলিম খানের নামে বড় কোনো প্রতিষ্ঠান বা বাণিজ্যিক কোম্পানি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাঁর মালিকানাধীন যেসব প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে, সেগুলোর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাঁর নামে বৈধ উৎস-বহির্ভূত সম্পদের নানা প্রমাণ মিলেছে। দীর্ঘ সময় পদ্মা ও মেঘনা নদী থেকে অবৈধ উপায়ে বালু উত্তোলন করেই শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি।জানা গেছে, দুদক বর্তমানে শুধু সেলিমের সম্পদের অনুসন্ধান করছে। পরবর্তী পর্যায়ে তাঁর স্ত্রী শাহানারা বেগম, ছেলে শান্তখান, শাহীন খান, মেয়ে সেলিনা খান ও পিংকি আক্তারের নামে থাকা সম্পদের অনুসন্ধান করবে।সেলিম খানের বিরুদ্ধে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণে সরকারি টাকা আত্মসাতের ষড়যন্ত্র, পদ্মা ও মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগটিও আলাদাভাবে অনুসন্ধান করছে দুদক।দুদক সূত্র জানায়, সেলিম খানের নামে চাঁদপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জে পায় ৪০টি দলিলে বিপুল পরিমাণ জমির তথ্য পাওয়া গেছে। রাজধানীর কাকরাইলে সাততলা ভবন, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ভূঁইগড় মৌজায় ১০ তলা ভবন। এই ভবনটির নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ১০ কোটি ১৪ লাখ ১২ হাজার টাকা। কাকরাইলের আজমিন টাওয়ারে চারটি ফ্ল্যাট কেনা হয়েছে। চারটি ফ্ল্যাটের দাম অন্তত সোয়া তিন কোটি টাকা। কাকরাইলের আরেকটি ভবনেও কেনা হয়েছে ফ্ল্যাট। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তাঁর নামে আরও ফ্ল্যাট থাকার তথ্য রয়েছে। এ ছাড়া চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানে কৃষিজমিসহ প্রায় ৪০টি দলিলে জমির নথিপত্র দুদকের হাতে রয়েছে।সূত্র জানায়, চাঁদপুর প্রেস ক্লাব রোডে শহরের বনেদি ব্যবসায়ী সুভাষ রায়ের ঐতিহ্যবাহী একটি বাড়ি সেলিম খান কিনেছেন পাঁচ কোটি টাকায়। লক্ষীপুর মৌজায় বহরিয়া বাজারের পাশে প্রায় এক বিঘা জমিতে সিনেবাজ ফিল্মসিটি নামে দোতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে নির্মাণ করা হয়েছে সুইমিংপুলও। এতে খরচ হয়েছে তিন থেকে চার কোটি টাকা। চাঁদপুরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সঙ্গে প্রায় দুই বিঘা জমিতে সিনেবাজ ফিল্মসিটি নামে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে দোতলা ভবন একটি,একতলা ভবন দুটি। দোকানের সংখ্যা ৩০-৪০টি।রাজধানীর কাকরাইলের ৮০/৩ করিম ম্যানশনে তাঁর নামে শাপলা মিডিয়া হাউস নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি সিনেমা বানাচ্ছেন।সুত্র-সমকাল
Link copied!