শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তিরস্কারে কাজ হয় না তাই ১০ লাখ টাকা জরিমানার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ১২:০২ পিএম, জুন ১৬, ২০২২

তিরস্কারে কাজ হয় না তাই ১০ লাখ টাকা জরিমানার উদ্যোগ

সাংবাদিকদের নীতি-নৈতিকতা ও শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল। সাংবাদিকরা অন্যায় বা অনৈতিক কিছু করলে আইন অনুযায়ী তাদের সর্বোচ্চ ভর্ৎসনা করতে পারে তারা। তবে এই ভর্ৎসনার বিধান সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধানে পরিণত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম। তবে বর্তমান আইনের এমন সংশোধনী আনার আগে তা জানানো হয়নি সাংবাদিক ইউনিয়নকে। প্রেস কাউন্সিল এমন দণ্ড দিতে পারে কি না, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে বিতর্ক। সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, সাংবাদিকদের চাপে রাখতেই আইনের এমন সংশোধনীর উদ্যোগ। গত মঙ্গলবার (১৪ জুন) রাজশাহী সার্কিট হাউসে ‘প্রেস কাউন্সিল আইন ও আচরণবিধি এবং তথ্য অধিকার আইন অবহিতকরণ’ শীর্ষক সাংবাদিকদের দিনব্যাপী এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক নাসিম বলেন, ‘সাংবাদিকরা অন্যায় করলে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রেখে একটি আইনের সংশোধনী হচ্ছে। আইনের খসড়া এখন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আছে। আগামী সংসদেই তা পাস হতে পারে।’ এ ব্যাপারে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি সিনিয়র সংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘সাংবাদিকরা অন্যায় করলে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সর্বোচ্চ ভর্ৎসনা করার বিধান আছে। এই আইন সংশোধন করে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান করার উদ্যোগের ব্যাপারে প্রেস কাউন্সিল আমাকে কিছু জানায়নি। জানালে এমন উদ্যোগের ব্যাপারে অবশ্যই ভেটো দিতাম।’ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘প্রেস কাউন্সিল সাংবাদিকদের নীতি-নৈতিকতার দেখভাল করে। সাংবাদিকরা অন্যায় করলে প্রেস কাউন্সিলের ভর্ৎসনা করার বিধান। এটা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার বিধান হচ্ছে। অথচ প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান এ বিষয়ে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নকে কিছুই জানায়নি। এটা হলে সাংবাদিকদের হয়রানির শিকার হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাছাড়া প্রেস কাউন্সিলের এমন দণ্ড দেওয়ার এখতিয়ারও নেই। কারণ তারা কোনো জুডিশিয়াল বডি নয়।’ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন বলেন, ‘আইনের এমন সংশোধনীর ব্যাপারে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। এমন সংশোধনী চূড়ান্ত হতে পারে না। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন এটা হতে দেবে না। কারণ সাংবাদিকরা হেনস্থা বা হয়রানির শিকার হতে পারে, এমন কোনো আইন আমরা হতে দিতে পারি না।’ এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘এমন একটা সংশোধনী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আছে। এটা সংসদে পাস হওয়ার আগে অনেকগুলো ধাপ পার হতে হবে। আমি তো আগেই বলেছি, সাংবাদিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন এমন কোনো আইন দেশে হবে না। এই সংশোধনীর বিষয়টিও আমার কাছে এলে দেখব, চিন্তার কিছু নেই।’ প্রেস কাউন্সিল সাংবাদিকদের দণ্ড দিতে পারে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রেস কাউন্সিল কোয়াসি জুডিশিয়াল বডি। এ ধরনের জরিমানার দণ্ড দেওয়ার এখতিয়ার তারা রাখেন। কিন্তু আমি তো বললাম, আমার কাছে সংশোধনীটি আসুক, তখন দেখব কী করা যায়।’ আইনের সংশোধনী নিয়ে সাংবাদিক নেতাদের না জানানো প্রসঙ্গে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নিজামুল হক বলেন, ‘এটা বর্তমান আইনের একটা সংশোধনী। নতুন আইন করা হচ্ছে না। তাই সাংবাদিক নেতাদের জানানো হয়নি।’ ১০ লাখ টাকা দণ্ডের বিধান কেন করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলকে সবাই বলে নখদন্তহীন বাঘ। এটা ঘোচানোর জন্যই শুধু ভর্ৎসনার পরিবর্তে ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে। এর মানে এই নয় যে, কোনো সাংবাদিক অন্যায় করলেই ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে দিলাম। সর্বনিম্ন ভর্ৎসনার বিধান তো থাকছেই। সেটাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রয়োগ হবে। জরিমানা হলেও তা হতে পারে সামান্যই। ১০ লাখ টাকা জরিমানা তো সর্বোচ্চ। সাংবাদিকদের এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু দেখছি না।’
Link copied!