শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুই জঙ্গি ছিনতাই: জিজ্ঞাসাবাদে ২০ অর্থদাতার নাম

প্রকাশিত: ১২:৩৩ পিএম, ডিসেম্বর ৩, ২০২২

দুই জঙ্গি ছিনতাই: জিজ্ঞাসাবাদে ২০ অর্থদাতার নাম

ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পaনা বাস্তবায়নে অর্থের জোগানদাতা হিসেবে অন্তত ২০ জন ধর্মীয় রাজনৈতিক নেতার নাম এসেছে। রিমান্ডে থাকা এক আসামি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে যুক্ত সূত্র জানায়, এখন তাaর দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। গত ২০ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। প্রায় দুই সপ্তাহ হতে চললেও এখনো তারা ধরা পড়েননি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার দুজনকে হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁরা হলেন মেহেদী হাসান ওরফে অমি ওরফে রাফি ও ঈদী আমিন। তদন্তসংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিসহ এই কাজে তাদের অর্থের জোগানদাতাদের যেকোনো মূল্যে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তাঁরা বারবার জায়গা বদলের কারণে এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। পুলিশকে মারধর ও চোখে পিপার স্প্রে করে নিষিদ্ধ সংগঠন আনসার আল ইসলামের দুই সদস্যকে ছিনিয়ে নিয়ে যান জঙ্গিরা। তারা হলেন মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ও আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব। আলোচিত এই ঘটনার তিন দিনের মাথায় জামিনে থাকা মেহেদী হাসান অমিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ওই দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তদন্তের এ পর্যায়ে অর্থের জোগানদাতাসহ পরিকল্পনাকারীদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। মেহেদীকে জিজ্ঞাসাবাদকারী সিটিটিসির কর্মকর্তা বলেন, দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় মেহেদী সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে এই হামলা পরিকল্পনার নেপথ্যে অনেক কুশীলব রয়েছেন। যারা ইসলামী রাজনৈতিক দলের সামনের সারির নেতা। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ের ঘটনায় ২০ জনের বেশি অর্থদাতার তথ্য জানা গেছে। গ্রেপ্তার মেহেদীকে প্রথম দফায় সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। তাঁদের পরিকল্পনা ছিল চার জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া। তবে ছয় মাসের পরিকল্পনার পর তারা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই সহযোগীকে ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হন। জিজ্ঞাসাবাদে যুক্ত সূত্র জানায়, জঙ্গি ছিনতাইয়ে সহযোগিতা করতে মেহেদী পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে আদালত এলাকায় যান। পালানোর পর জঙ্গিরা যাতে খরচ চালাতে পারেন এ জন্য পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সুযোগ বুঝে তিনি এই টাকা জঙ্গিদের হাতে তুলে দেন। এই অর্থের জোগানদাতাদের মধ্যে তাঁদের আদর্শের অনেক শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা রয়েছেন বলেও জানান তিনি। এই নেতারা নিয়মিত তাঁদের সংগঠনে (জঙ্গি) অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছেন। জিজ্ঞাসাবাদকারী সিটিটিসি সূত্র জানায়, মেহেদী হিযবুত তাহ্রীরের সদস্য ছিলেন। পরে আনসার আল ইসলামে যুক্ত হন এবং এর প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার ও দণ্ডিত জঙ্গিদের সঙ্গে কারাগারেও যোগাযোগ রক্ষা করতেন তিনি। যখন জঙ্গিদের কারাগার থেকে আদালতে আনা হতো, তখন তাদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করতেন। তাঁদের সঙ্গে কৌশলে কথা বলে সংগঠনের পরিকল্পনার কথা জানাতেন। জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, পুলিশ সদর দপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘শিগগিরই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। এটি পাওয়া গেলে কার দায়িত্বে কী অবহেলা ছিল তা জানা যাবে। ’ ঈদী আমিন-মেহেদী ফের রিমান্ডে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামি মেহেদী হাসান অমি ও ঈদী আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবার রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। মেহেদী হাসানের জন্য পাঁচ দিন ও ঈদী আমিনের জন্য ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। শুক্রবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোশাররফ হোসেন শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে মেহেদীকে সাত দিন ও ঈদী আমিনকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ২৭ নভেম্বর ঈদী আমিন আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সাইবার জগতে সক্রিয় তারা সিটিটিসি সূত্র জানায়, জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত পাঁচজন চিকিৎসককে আটক করে তারা জানতে পেরেছে, ঘরে বসেই বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের জঙ্গিবাদের সঙ্গে সমন্বয় করতেন তাঁরা। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাতে সিটিটিসি জানায়, ‘কাটআউট’ সিস্টেমে চলছে তাদের কার্যক্রম। তাই তাদের ধরতে অনেক বেগ পেতে হয়। তারা ‘আত তামকিন মিডিয়া’, ‘আল মুনাছির’, ‘আল আদালাহ ফাউন্ডেশন’, ‘আল হক এজেন্সি’, ‘আল হিম্মাহ মিডিয়া’সহ নানা অনলাইন মিডিয়া ব্যবহার করে প্রচারণা চালান। ২০১৬ সাল থেকে চলতি বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত সিটিটিসি ৬৫২ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের মধ্যে নব্য জেএমবির সদস্য ২২৩ জন, আনসার আল ইসলামের ১৪৫ জন, পুরনো জেএমবির ১১৭ জন, হিযবুত তাহ্রীরের ৫৫ জন উল্লেখযোগ্য।
Link copied!