বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

দেশেই আরেক পিকের সন্ধান,নাম মোশাররফ হোসেন

প্রকাশিত: ১০:২০ এএম, জুন ২৩, ২০২২

দেশেই আরেক পিকের সন্ধান,নাম মোশাররফ হোসেন

ডেইলি খবর ডেস্ক: দেশেই আরেক পিকের সন্ধান,নাম মোশাররফ হোসেন। তিনি কর্মক্ষেত্র ও এর বাইরে সর্বত্র দুর্নীতিতে রেকর্ড সৃস্টি করেছেন। তিনি হলেন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান ড.এম মোশাররফ হোসেন। ক্ষমতার অপব্যবহার,প্রতারণা,দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি অঢেল অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে তাঁর বিরুদ্ধে আমলযোগ্য সব তথ্য মিলছে।তাঁকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। সূত্রগুলো জানায়,ড.এম মোশাররফ হোসেন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পদের যাবতীয় হিসাব চেয়ে ১ জুন নোটিশ পাঠিয়েছে দুদক। নোটিশ পাওয়ার ২১ কার্যদিবসের মধ্যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব জমা দিতে বলা হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে তিনি ১৫ জুন চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধান করছেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহা.নূরুল হুদা। আর অনুসন্ধান কার্যক্রম তদারক করছেন দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।অভিযোগ সম্পর্কে কথা বলতে ড.ম মোশাররফ হোসেনের মোবাইল ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হয়। তবে তিনি ফোন না ধরায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বলেন,আইডিআরএর সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানে আমলযোগ্য তথ্য-উপাত্তও মিলছে। তাঁর ও পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছে। তাঁদের সম্পদ বিবরণী পাওয়া গেলে সেগুলো যাচাই করা হবে।দুদকের অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন-২০১০-এর ১২ নং ধারা লঙ্ঘন করে ড.এম মোশাররফ হোসেন নিজের মালিকানাধীন লাভজনক কোম্পানির পদে থেকে সেটার সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। বীমা আইনের ৭(৩)(খ) ধারায় বলা হয়,কোনো ব্যক্তি বীমা মধ্যস্থতাকারী বা কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো সংস্থার বা বীমা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অধীন সংস্থা সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, কর্মকর্তা বা কর্মচারী হন বা তিনি সরকারি-বেসরকারি কোনো কোম্পানির পরিচালক বা অন্য কোনো পদে নিযুক্ত থাকলে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বা সদস্য হওয়ার যোগ্য হবেন না। অথচ ড.মোশাররফ চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকাকালে চারটি ফান্ডের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়া তিনি লাভস অ্যান্ড লিভস অর্গানিক লিমিডেটের (এলএলওএল),গুলশান ভ্যালি অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (জিভিএআইএল),কোয়ান্টাম প্লাস ফাউন্ডেশন, কাশফুল ডেভেলপারস লিমিটেড (কেডিএল) ও বিএসএম ইন্টারন্যাশনালের এমডির পদে ছিলেন। এ কারণে বীমা আইন অনুযায়ী ড.মোশাররফ হোসেন আইডিআরএর চেয়ারম্যান পদে থাকার অযোগ্য ছিলেন। ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ১৬৫ ধারার লঙ্ঘন করে তিনি এলএলওএল ও জিভিএআইএলের আয়কর রিটার্নে ভুয়া তথ্য দেন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দুদক সূত্র আরও জানায়, গত বছরের ৩০ জুনের অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী ড.মোশাররফ হোসেনের মালিকানাধীন কোম্পানি লাভস অ্যান্ড লিভস অর্গানিক লিমিডেটের (এলএলওএল) সম্পদ ২ কোটি ৪৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা মূল্যের কৃষি জমি, চলতি সম্পদ ১ লাখ ৫২৬ টাকার। এনআইএল সিকিউরিটিজের অধীনে দুটি বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এগুলো হলো-এলএলওএল এমপ্লয়িজ কন্ট্রিবিউটিং প্রভিডেন্ট ফান্ড ও এলএলওএল গ্র্যাচুইটি ফান্ড। এর মধ্যে একটিতে বিনিয়োগ ১ কোটি ৫২ লাখ ৩৩ হাজার ও অন্যটিতে ১ কোটি ৯২ টাকা বিনিযোগ দেখানো হয়েছে। গুলশান ভ্যালি অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের অধীনে (জিভিএআইএল) দুটি বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে। জিভিএআইএল এমপ্লয়িজ কন্ট্রিবিউটিং প্রভিডেন্ট ফান্ড ও জিভিএআইএল গ্র্যাচুইটি ফান্ড। তাঁর মালিকানাধীন ব্রোকারেজ হাউস ইউনিক্যাপ সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ ৭৭ লাখ ১০ হাজার ও পপুলার লাইফ সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ ৭০ লাখ ৯ হাজার টাকা। তাঁর কোম্পানি কোয়ান্টাম প্লাস ফাউন্ডেশনের ব্যাংক হিসাবে ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট টাকা জমা করা হয়। একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর জিভিএআইএল কোম্পানিতে ২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয়। কাশফুল ডেভেলপারস লিমিটেডের (কেডিএল) অধীনে দুটি কোম্পানি গঠন করা হয়। এগুলো হলো কেডিএল এমপ্লয়িজ কন্ট্রিবিউটিং প্রভিডেন্ট ফান্ড ও কেডিএল গ্র্যাচুইটি ফান্ড। এর মধ্যে কেডিএল এমপ্লয়িজ কন্ট্রিবিউটিং প্রভিডেন্ট ফান্ডে ৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা জমা ও উত্তোলন করা হয় ৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। কেডিএল গ্র্যাচুইটি ফান্ডে ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা জমা ও উত্তোলন করা হয় ৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। বিএসএম ইন্টারন্যাশনাল মূলত একট নামস্বর্বস্ব কোম্পানি। এই কোম্পানির কোনো কার্যক্রমের তথ্য মেলেনি। ড. মোশাররফ হোসেন,তাঁর পরিবারের সদস্য ও তাঁদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে প্রাইম, ডাচ্-বাংলা, ব্যাক এশিয়া,প্রিমিয়ারসহ অন্যান্য ব্যাংক মোট ৩০টি হিসাব পাওয়া গেছে। তাঁর নিজের নামে ঢাকার বাড্ডা এলাকায় কোয়ান্টাম প্লাস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কোয়ান্টাম প্লাস এগ্রো,বাড্ডা এলাকায় ফ্যামিলি বাজার, বিভিন্ন এলাকায় ৩০-৪০ বিঘা জমি, ঢাকার মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় ফ্ল্যাটসহ নানা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। মানি লন্ডারিং চ্যানেল তৈরি :দুদক সূত্র জানায়, এলএলওএল ও জিভিএআইএল দুটি কোম্পানি পরিদর্শন করে যৎসামান্য অস্তিত্বের আলামত পাওয়া যায়। জনবলের মধ্যে ২-৪ জন কর্মচারী থাকার তথ্য মিলেছে। স্বল্পসংখ্যক কর্মচারীর প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি ফান্ডের অনুদান পুঞ্জীভূত করে ২-৩ বছরের মধ্যে ৪ কোটির বেশি টাকার তহবিল গঠন একেবারেই অসম্ভব। প্রভিডেন্ট ফান্ডের কন্ট্রিবিউশন ও গ্র্যাচুইটি ফান্ডের কন্ট্রিবিউশনের মাধ্যমে এত বড় তহবিল গঠন করতে হলে দুই বছরে ন্যূনতম ৩৩ কোটি টাকার বেতন-ভাতা পরিশোধিত হওয়ার কথা। একইভাবে ৩৬ কোটি টাকার বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হলে কোম্পানি দুটির টার্নওভার থাকা উচিত ন্যূনতম আড়াইশ কোটি টাকা। বাস্তবে এসবের কিছুই করা হয়নি। ওই দুটি কোম্পানির মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ড. মোশাররফ হোসেন ওই চারটি ফান্ডকে (ট্রাস্ট) মানি লন্ডারিংয়ের চ্যানেল হিসেবে ব্যবহার করছেন। এতে তিনি মানি লন্ডারিং আইনে অভিযুক্ত হবেন। চারটি ফান্ডের আওতায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা হিসেবে যে পরিমাণ টাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেক্ষেত্রে বেতন-ভাতা থেকে নিয়ম অনুযায়ী উৎস কর কর্তন করে সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখবে দুদক।সুত্র-সমকাল
Link copied!