বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দেড় কেজি সোনায় চাকরি গেলো এসপি আলতাফের

প্রকাশিত: ০৮:১৯ এএম, মে ২১, ২০২২

দেড় কেজি সোনায় চাকরি গেলো এসপি আলতাফের

ডেইলি খবর ডেস্ক: দেড় কেজি সোনায় চাকরি গেলো এসপি আলতাফের।সীমান্তজেলা সাতক্ষীরায় পুলিশ সুপার হিসেবে ঝিনাইদহ থেকে বদলি হয়ে যোগদানকারী আলতাফ হোসেন চাকরি থেকে অপসারিত হয়েছেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে তাকে চাকরিচ্যুত করে গত ১৮ মে তারিখে এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।আলতাফ হোসেন সর্বশেষ সিলেট রিজিয়ন টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে আটককৃত ১২০ ভরি স্বর্ণ আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তিনি চাকরি হারিয়েছেন।তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই তারিখে যোগদান করে ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসপির দায়িত্বে থাকাকালে আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে আটক হওয়া স্বর্ণ আত্মসাতের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে।জানা গেছে,২০১৭ সালের ১৩ জানুয়ারি শহরের তুফান মোড়ে আধুনিক জুয়েলার্স ও অদ্রি জুয়েলার্সে ভয়াবহ চুরির ঘটনায় ৩১৫ ভরি স্বর্ণালংকার ও আড়াই লাখ টাকা চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আটক সাতক্ষীরার বকচরা গ্রামের দাগি চোর নবাব আলী আদালতে চুরির বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়ে জানায়,৩১৫ ভরি স্বর্ণ তিনি সাতক্ষীরা সদর থানার এসআই আসাদুজ্জামানের কাছে দিয়ে দিয়েছেন। আদালত আসাদুজ্জামানের কাছ থেকে এই স্বর্ণ আর উদ্ধার করতে পারেনি। সে সময় প্রচার হয়েছিল এই স্বর্ণের বড় অংশ পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেনের পকেটে চলে গেছে।একই বছরের ১৯ মার্চ মানিকগঞ্জের সিংগাইর থেকে দুইজন স্বর্ণ কারিগর সাতক্ষীরার এক জুয়েলার্সের অর্ডার অনুযায়ী ২০০ ভরি স্বর্ণ নিয়ে আসছিলেন। শহরের পলিটেকনিক মোড়ে গোয়েন্দা পুলিশের আবুল কাশেম, মো. বোরহান উদ্দিন ও এসআই নাসির তাদের ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ওই স্বর্ণ কেড়ে নেয়। পরে তারা সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবে এসে সাংবাদিকদের সামনে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। ওই স্বর্ণ তারা ফিরে পাননি।এ বিষয়ে পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন বলেছিলেন, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে ২০১৬ সালের ৭ অক্টোবর খুলনার সোনাডাঙ্গা থেকে বিপ্লব চ্যাটার্জী নামের একজন স্বর্ণ চোরাচালানি ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে সাতক্ষীরা অভিমুখে বাসে চড়ে আসছিলেন। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ঝিনাইদহ জেলার হরিনাকুন্ডু থানার এএসআই আব্দুর রউফ পল্টু (সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটার বাসিন্দা) ও কনস্টেবল মারুফ তাকে পথিমধ্যে আটক করে স্থানীয় সেনেরগাঁতী বাজারে নিয়ে যান। এ সময় তার কাছ থেকে ওই স্বর্ণ ছিনতাই করার চেষ্টা করলে বাজারের লোকজন পুলিশের ওই দুই সদস্যকে গণপিটুনি দিয়ে স্বর্ণ বহনকারী বিপ্লব চ্যাটার্জীসহ ৩ জনকে পাটকেলঘাটা থানায় সোপর্দ করে।চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা এবং বিপ্লব চ্যাটার্জীর কাছে ৩ কেজি স্বর্ণ পাওয়ার ঘটনায় তৎকালীন ওসি মহিবুল ইসলাম পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেনকে অবহিত করেন। সন্ধ্যায় এসপি আলতাফ হোসেন পাটকেলঘাটা থানায় গিয়ে বিপ্লব চ্যাটার্জীর কাছ থেকে জব্দ হওয়া ওই ৩ কেজি স্বর্ণ নিজের কাছে রেখে দেন এবং পুলিশের দুই সদস্যকে বেমালুম ছেড়ে দিয়ে বিপ্লব চ্যাটার্জীকে একদিন পর ২১১ পিস ইয়াবা দিয়ে সাতক্ষীরায় চালান দেওয়ার নির্দেশ দেন।সেনেরগাঁতী বাজারে ছিনতাইকারী পুলিশের কবলে পড়ে বিপ্লব চ্যাটার্জী গ্রামবাসীকে জানিয়েছিলেন,আমার কাছে ৩ কেজি সোনা আছে। এই সোনা ছিনতাই হচ্ছে,আপনারা আমাকে বাঁচান। পুলিশ সুপারের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি স্বর্ণ আটকের বিষয়টি স্বীকার কিংবা অস্বীকার কোনটি না করেই বলেন, আমি তদন্ত করে রিপোর্ট দেব। অথচ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে তিনি সেই রিপোর্ট আর সাংবাদিকদের দিতে চাননি।এ ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় পুলিশের চাকরি থেকে তাকে অপসারণ করা হয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে ৩ কেজি নয়, ১২০ তোলা বা দেড় কেজি স্বর্ণ আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে। এদিকে পুলিশ সুপার হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে আলতাফ হোসেনের সময়ে ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট সাতক্ষীরা শহরতলীর কুখরালির হোমিও ডাক্তার মোকলেসুর রহমান জনি রাত ৯টার দিকে শহরে ওষুধ কিনতে এলে সাতক্ষীরা থানার এসআই হিমেল তাকে ধরে নিয়ে যায়।এ খবর তার বাড়িতে পৌঁছালে বাবা রাশেদ ও জনির স্ত্রী জেসমিন তার সঙ্গে এসে দেখা করে এবং তাকে খাবার দেন। পরপর তিনদিন এ অবস্থায় পরিবারের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে দেখা করে খাবার পৌঁছে দেওয়ার সময় বারবার তাদের কাছে মোটা অংকের টাকা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা তা দিতে পারেননি।চতুর্থ দিন থানায় খাবার নিয়ে গেলে পুলিশ জানিয়ে দেয় তারা মোকলেসুর রহমান জনি নামের কোনো লোককে গ্রেফতার করেনি। এর পর তার স্ত্রী জেসমিন নাহার একটি প্রেস কনফারেন্স করে তার স্বামীর মুক্তি দাবি করেন। এ বিষয়ে থানায় জিডি করার চেষ্টা করলেও পুলিশ তা হ্রহণ করেনি। পরে তিনি হাইকোর্টে রিট করে স্বামী জনির মুক্তি দাবি করেন।হাইকোর্ট দুই সপ্তাহ সময় বেধে দিয়ে জনিকে খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন পুলিশকে। এ সময় এসপি এক রিপোর্টে জানান,মোকলেসুর রহমান জনি আল্লাহর দলের সদস্য। আমরা তাকে খুঁজছি। এ ঘটনার পর থেকে দফায় দফায় তদন্ত হয়ে এসপি আলতাফ হোসেন, ওসি এমদাদ হোসেন ও এসআই হিমেলের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে তদন্ত করে উচ্চ আদালতে রিপোর্ট দেন।এসপি আলতাফ হোসেন এই জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে শিবিরের লোক হিসাবে আখ্যায়িত করে জনির নিখোঁজ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে এই তিন পুলিশ কর্মকর্তার শাস্তিমূলক বদলির পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চললেও নানা কারণে তা থমকে আছে। এদিকে পুলিশ সুপার থাকাকালে আলতাফ হোসেনের সময় ২০১৭ সালের ১২ মার্চ তালায় বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির বিদ্যুৎ বাছাড় ও আবু তালহা পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। একই বছরের ১০ এপ্রিল যুবলীগ নেতা রাসেল কবিরের লাশ রাজারবাগান কলেজমোড়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।অন্যদিকে আশাশুনির আনুলিয়া ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী ইউনুস আলী কথিত বন্দুকযুদ্ধে যশোরের সাগরদাঁড়ি রোডে নিহত হন। এই চারটি ক্রসফায়ার সম্পর্কে সাতক্ষীরায় প্রচার ছিল এসপি আলতাফ হোসেন তাদের আটক করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘুস আদায়ের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত ক্রসফায়ারের নাটক সাজিয়ে তাদের হত্যা করে।সুত্র-যুগান্তর
Link copied!