বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দোয়া করতে হয় যেভাবে

প্রকাশিত: ১০:৩২ এএম, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১

দোয়া করতে হয় যেভাবে

আল্লাহর কাছে বান্দার পছন্দনীয় একটি আমল ‘দোয়া-মোনাজাত’। আল্লাহ চান বান্দা যেন দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে বেশি বেশি তার কাছে প্রার্থনা করে। হজরত আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে অনুগ্রহ প্রার্থনা করো। কেননা আল্লাহ এটা পছন্দ করেন যে, তার কাছে দোয়া ও প্রার্থনা করা হোক।’ (তিরমিজি : ৩৫৭১)। আল্লাহ তায়ালা নবীজি (সা.)-কে বলেছেন, ‘যখন আমার বান্দারা আপনার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, তখন আপনি বলে দিন, আমি নিকটেই আছি; আমি দোয়া কবুল করি, যখন সে আমার কাছে দোয়া করে।’ (সুরা বাকারা : ১৮৬)। বান্দা আল্লাহর কাছে যত বেশি দোয়া করবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে তত বেশি ভালোবাসবেন এবং প্রার্থিত জিনিস দান করবেন। হজরত সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালার সত্তার ভেতর অনেক বেশি লজ্জাশীলতার গুণ রয়েছে। তিনি না চাইতে অনেক বেশি দানকারী। যখন মানুষ চাওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার সামনে হাত ওঠায়, তখন সেই হাতগুলো খালি ও ব্যর্থ হিসেবে ফিরিয়ে দিতে তার লজ্জা হয়।’ (তিরমিজি : ৩৫৫৬) দোয়া কবুল হয় কখন আমরা দোয়ার মাধ্যমে রবের দরবারে আমাদের আশা-আবেগ-আকুতি তুলে ধরি। মনোবাঞ্ছনা পূরণের জন্য কান্নাকাটি করি। দোয়া মুমিনদের হাতিয়ার। দোয়ার মাধ্যমে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। এমনকি দোয়ার ফলে ভাগ্যও ঘুরে যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া ছাড়া আর কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না।’ (তিরমিজি : ২১৩৯)। অন্যত্র নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘দোয়া স্বতন্ত্র একটি ইবাদত।’ (আবু দাউদ : ১৪৮১)। অনেকেই বলেন, মন থেকে চোখের পানি ঝরিয়ে দোয়া করি। অনেক আশা-আবেগ নিয়ে দোয়া করি। কিন্তু কোনো ফল পাই না, দোয়া বুঝি কবুল হয় না। এই ধারণা ঠিক নয়। রাব্বুল আলামিন তিনভাবে আমাদের দোয়া কবুল করে থাকেন। প্রথমত, আল্লাহ তায়ালা বান্দার দোয়া তাৎক্ষণিক কবুল করেন। দ্বিতীয়ত, পরে যখন বান্দার জন্য মঙ্গল হবে তখন ওই দোয়া কবুল করেন। আর তৃতীয়ত, বান্দার মোনাজাত পরকালের শাস্তি লাঘবের জন্য রেখে দেন। সুতরাং আমাদের কারও দোয়া বিফলে যায় না। তাই দুনিয়াতে হোক কিংবা আখেরাতে হোক আমরা মোনাজাতের সুফল অবশ্যই পাব, ইনশাল্লাহ।   তবে প্রচণ্ড আশা ও আত্মবিশ^াস নিয়ে দোয়া করা চাই। আল্লাহর প্রতি প্রচণ্ড রকম আশা নিয়ে দোয়া করার নির্দেশ দিয়েছেন মহানবী (সা.)। তিনি বলেন, ‘তোমরা দোয়া কবুল হওয়ার আশা নিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো। জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ উদাসীন ও অমনোযোগী অন্তরের দোয়া কবুল করেন না।’ (তিরমিজি : ৩৪৭৯) দোয়া শুরু করব যেভাবে দোয়ার আগে আল্লাহর প্রতি ‘হামদ’ প্রশংসা ও রাসুলের প্রতি দরুদ পাঠ করা। হজরত ফাজালা ইবনে উবাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) বসেছিলেন। এমন সময় একজন লোক এলো এবং নামাজ আদায় করল। এর পর সে বলল, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমার প্রতি দয়া করুন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘হে নামাজি! তুমি তাড়াহুড়া করলে। নামাজ শেষে যখন তুমি বসবে, তখন তুমি আল্লাহর উপযুক্ত হামদ এবং আমার প্রতি দরুদ পাঠ করবে। অতঃপর তুমি দোয়া করবে। (তিরমিজি : ৩৪৭৬) দোয়ায় কী চাইব নি‌জের মতো করে নিজের জন্য, আত্মীয়স্বজন ও জীবিত-মৃত সব মুমিনদের জন্য দোয়া করা চাই। দুনিয়া-আখেরাতের সব কল্যাণের জন্য দোয়া করা চাই। তবে অনেক সময় এমন হয় যে, দোয়া শুরু করার পর সব কথা মনে থাকে না। তাই সব কল্যাণ কামনার্থে সব বালা-মুসিবত দূরীকরণে এই দোয়াটা রাসুলুল্লাহ (সা.) খুব বেশি বেশি করতেনÑ ‘আল্লাহুম্মা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও-ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাতাও ওয়া-কিনা আযাবান্নার’, অর্থাৎ, ‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়ার জীবনে কল্যাণ দাও এবং পরকালের জীবনেও কল্যাণ দান করো। আর আমাদেরকে জাহান্নামের আজাব থেকে বাঁচাও।’ (বুখারি : ৪৫২২; মুসলিম : ২৬৮৮) একনিষ্ঠ মনে দোয়া আল্লাহর কাছে দোয়া করা চাই একনিষ্ঠ মনে। একই সঙ্গে দোয়ার পর পূর্ণ বিশ^াস রাখতে হবে যে, আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করবেন। নেতিবাচক কোনো চিন্তা করা যাবে না। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়া না করে আর বলে যে, আমি দোয়া করলাম, কিন্তু আমার দোয়া তো কবুল হলো না। (বুখারি : ৬৩৪০)। অনেক সময় দোয়ায় পূর্ণ মনোযোগ না থাকায় সেটি গৃহীত হয় না। আল্লাহ অবচেতন মনের দোয়া গ্রহণ করেন না। তাই দোয়ার সময় পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে দোয়া করা। রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া কোরো। জেনে রেখ, আল্লাহ অমনোযোগী ও অসাড় মনের দোয়া কবুল করেন না। (তিরমিজি : ৩৪৭৯), মুমিনের দায়িত্ব হলো, আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা। ছোট-বড় সব প্রয়োজনের জন্য দোয়া করা। আল্লাহ প্রার্থনাকারীকে পছন্দ করেন। প্রার্থনা না করলে তিনি রাগ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে না তিনি তার ওপর রাগান্বিত হন। (তিরমিজি : ৩৩৭৩)। আল্লাহ আমাদের বোঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন।  
Link copied!