বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্মভিত্তিক দলকে টানছে আ.লীগ

প্রকাশিত: ০১:০২ পিএম, মার্চ ১৮, ২০২৩

ধর্মভিত্তিক দলকে টানছে আ.লীগ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভোটের হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। সে ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো উভয় পক্ষের কাছে বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। দলগুলোকে নিজেদের পক্ষে রাখতে মরিয়া চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। যদিও বিষয়টি নিয়ে দ্বিধা ও মতভিন্নতা আছে দলের মধ্যেই। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির দিকে ঝুঁকে থাকা ইসলামপন্থী দলগুলোর সমর্থন পেতে জোর তৎপরতা শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল। এরই মধ্যে খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোটসহ নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত ও নিবন্ধনহীন অন্তত অর্ধডজন ইসলামপন্থী দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়েছে। এসব দলকে পক্ষে টানতে নানা রকম প্রস্তাবও দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে নির্বাচনে আসন ছাড় দেওয়ার বিষয়ও আছে। যদিও এসব নিয়ে কোনো পক্ষই প্রকাশ্যে কিছু বলছে না। আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফার দাবি, নির্বাচন নিয়ে ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে সেভাবে কোনো আলোচনা এখনো শুরু হয়নি। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ইসলামপন্থী দলগুলোকে আমাদের পক্ষে আনতে পারলে ভোটের রাজনীতিতে একটা বিরাট ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। আগামী নির্বাচনে সেখানে একটা ভোটব্যাংক তৈরি হবে।’ দেশে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ইসলামপন্থী দল হলো ১০টি। সেগুলো হলো—জাকের পার্টি, তরীকত ফেডারেশন, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ও খেলাফত মজলিস। এ ছাড়া ২০টির বেশি অনিবন্ধিত ইসলামপন্থী দল আছে। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মধ্যে তরীকত ফেডারেশন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক। অন্যদিকে জামায়াতের নিবন্ধন স্থগিত আছে। আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়ে ইসলামপন্থী কয়েকটি দলের নেতারা জানান, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে নির্বাচনী মহাজোটে যেতে। তা যদি না-ও হয়, বিএনপির জোটে না গিয়ে মাঝামাঝি অবস্থানে থাকার অনুরোধ করা হয়েছে। দুটির একটি করলেই নির্বাচনী আসন ছাড়ের প্রতিশ্রুতি আছে। তবে ওই নেতাদের দাবি, এসব আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক সদস্যও জানান, নির্বাচনে ইসলামপন্থী দলগুলোর ভোট যাতে বিএনপির বাক্সে না পড়ে, এর জন্য তৎপরতা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি দলের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনাও হয়েছে। যেসব এলাকায় এ দলগুলোর সংগঠন শক্তিশালী, নির্বাচনে সেখানে তাদের ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। প্রাথমিকভাবে চিন্তা আছে বৃহত্তর বরিশাল, বৃহত্তর সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চার-পাঁচটি আসন ছাড় দেওয়ার। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ভোটের আগে জোটের পরিধি আরও বাড়তে পারে। দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে যে কেউ জোটে আসতে পারে। তবে ইসলামপন্থী দলগুলোর ১৪ দলীয় জোটে আসার সুযোগ নেই বলে জানান তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। তিনি বলেন, নির্বাচনী কৌশল হিসেবে আওয়ামী লীগ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মহাজোট করতেই পারে। তবে ১৪ দলীয় জোট আদর্শিক জোট। এর সংখ্যা বাড়বে না। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, ‘বাজারে তো অনেক রকম কথা শোনা যায়। আমাদের কাছে কেউ আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব আনেনি। আমরাও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করছি না।’ তিনি জানান, ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে কোনো প্রস্তাব এলে সেটি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা হাফেজ আতাউল্লাহ। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে কোনো প্রস্তাব এলে সেটি নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আলাদা ফ্রন্ট গড়ার চিন্তা ইসলামপন্থী কয়েকটি দলের নেতারা জানান, তারা বড় দুই দলের নেতৃত্বাধীন কোনো জোটে না গিয়ে আলাদা নির্বাচনী ফ্রন্ট গড়ার কথা ভাবছেন। ইসলামী আন্দোলন নির্বাচনী জোট নিয়ে এরই মধ্যে সংলাপও করেছে খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিস এবং জমিয়তে উলামা ইসলামের সঙ্গে। এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনূস আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা নিজেরা আলোচনা করেছি। নির্বাচনের বিষয়ে কথা হয়েছে। তবে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।’ জামায়াতকে বাদ দিয়ে নির্বাচন নিয়ে ইসলামপন্থী দলগুলোর ঐক্য হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। একই মত খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদেরেরও। তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস অপেক্ষার পরে বুঝতে পারব, আমাদের কোন দিকে যাওয়া উচিত।’ তিনি জানান, ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। আওয়ামী লীগেই ভিন্নমত নির্বাচন সামনে রেখে ইসলামপন্থী দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টার সমালোচনাও আছে আওয়ামী লীগের মধ্যে। সমালোচক নেতাদের দাবি, মামলা-গ্রেপ্তার এড়াতে ইসলামপন্থী দলগুলোর অনেক নেতা এখন ক্ষমতাসীনদের কথায় সায় দিতে পারেন। কিন্তু সুযোগ পেলেই তারা আসল রূপ দেখাবেন। ওই নেতারা বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকায় হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের সময় সরকার কঠোর হলে মামলা থেকে বাঁচতে তারা সরকারের সঙ্গে বোঝাপোড়া করার চেষ্টা করে। আবার ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদে তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতা চালায়। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম যেমন আচরণ করেছে ইসলামপন্থী অন্য দলগুলোও সুযোগ পেলে সেটাই করবে। সুবিধা দেখলে থাকবে, না হলে আমাদের আরও বেকায়দায় ফেলবে। তাই এদের বাদ দিয়েই চিন্তা করা উচিত।’ তিনি আরও বলেন, ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে সখ্য সৃষ্টির চেষ্টা করা মূলত আদর্শচ্যুত হওয়া। আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক সদস্য বলেন, ইসলামপন্থী দলগুলোকে যত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হোক, তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার কথা মুখে বললেও ভেতরে তাদের সমর্থন থাকবে বিরোধী জোটের দিকে। এরা সুবিধা ও পরিস্থিতি অনুযায়ী সঙ্গ দেবে, সঙ্গ ছাড়বে। তবে তাদের ভোট নৌকার পক্ষে আসার কল্পনা করা যায় না।
Link copied!