বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন কমিটি দিতে সবুজ সংকেতের অপেক্ষা

প্রকাশিত: ০৬:১৬ এএম, মে ৪, ২০২১

নতুন কমিটি দিতে সবুজ সংকেতের অপেক্ষা

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার পর নতুন কমিটি নিয়ে বিভিন্ন গুঞ্জনের মধ্যেই গত রবিবার রাতে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন হেফাজতের একটি অংশের চার নেতা। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর (প্রয়াত) অনুসারী এই নেতারা ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আছেন। আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর তাঁর এসব অনুসারী বিগত (সদ্যোবিলুপ্ত) কমিটিতে বাদ পড়েন। বর্তমান আহ্বায়ক কমিটিতেও তাঁরা কেউ স্থান পাননি। সাক্ষাতের ব্যাপারে নেতারা বলছেন, হেফাজত ও ইসলামী ঐক্যজোটের ব্যানারে তাঁরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে মাদরাসা খোলা, নির্দোষ নেতাদের গ্রেপ্তার না করাসহ কিছু দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা চান, আল্লামা শফীর নেতৃত্বাধীন হেফাজতে ইসলামের যে কমিটি ছিল, তা সংস্কার করে ঈদের পর কমিটি গঠন করবেন। এসব ব্যাপারে মন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। তবে সংগঠন ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, হেফাজতের সদ্যোবিদায়ি আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর সরকারবিরোধী গ্রুপের বাইরে আরেকটি শক্তিশালী শফীপন্থী গ্রুপ আছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারী নেতারা। নাশকতার অভিযোগে হেফাজতের নেতাদের গ্রেপ্তার এবং সংগঠনটির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠার আগে থেকেই পাল্টা কমিটির ঘোষণা দিচ্ছিলেন তাঁরা। আহ্বায়ক কমিটিতেও এসব নেতাকে রাখা হয়নি। সরকারের সমর্থন পেলে তাঁরা সরকারবিরোধী রাজনীতি ও নাশকতার বলয় থেকে বের হয়ে হেফাজতকে পুনর্গঠন করতে চান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁদের কথা শুনলেও কোনো আশ্বাস দেননি। সূত্রগুলো বলছে, আল্লামা শফীর দুই ছেলে ও ইসলামী ঐক্যজোটের নেতারা মিলে হেফাজতের নেতৃত্ব দিতে চাইছেন। তবে রাজনৈতিক উচ্চাবিলাসে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্রের কারণে হেফাজতকে রাজনীতিক নেতামুক্ত করতে চাইছে সরকার। অরাজনৈতিক সংগঠনের ঘোষণা দেওয়া হেফাজত কিভাবে পুরোপুরি রাজনীতির বাইরে থাকতে পারে, সে ব্যাপারে ভাবা হচ্ছে। এ কারণে শফীপন্থী নেতাদের সরাসরি সবুজ সংকেত না দিয়ে কিছু নির্দেশনা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। গত রবিবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ঢাকার ধানমণ্ডির বাসভবনে সাক্ষাৎ করেছেন ইসলামী ঐক্যজোটের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী, মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী ও মাওলানা মো. আলতাফ। রাত ১০টার পর থেকে প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী তাঁদের সঙ্গে মন্ত্রীর বৈঠক চলে। ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় এসব নেতা আলামা শফীর আমলে হেফাজতের কেন্দ্রীয় ও ঢাকার মহানগর কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব ও আলামা শফীর অনুসারী মাওলানা মঈনুদ্দিন রুহী গতকাল বলেন, ‘আমরা হেফাজতে ইসলাম থেকে না, ইসলামী ঐক্যজোটের পক্ষ থেকে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছি। চলমান ধর-পাকড়ে যেন আলেম-উলামা, কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ নিরীহ-নির্দোষ কেউ যাতে গ্রেপ্তার না হয়, সে ব্যাপারে অনুরোধ করেছি। রমজান ও ঈদের পর কওমি মাদরাসা খুলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। এরই মধ্যে যাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে যাঁরা নির্দোষ তাঁদের মানবিক কারণে মুক্তি দেওয়ার জন্য বলেছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এসব ব্যাপারে আমরা সতর্ক রয়েছি। বিনা অপরাধে কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।’ অন্য এক প্রশ্নের জবাবে রুহী বলেন, ‘শিগগিরই অর্থাৎ ঈদের পর আল্লামা শাহ আহমদ শফী আমির থাকাকালীন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যে কেন্দ্রীয় কমিটি ছিল তা সংস্কার করে ঘোষণা করা হবে। এ লক্ষ্যে আমাদের কাজ চলছে। সারা দেশে আলেম-উলামাদের সঙ্গে কথা বলছি।’ ইসলামী ঐক্যজোটের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগর শাখার সাবেক সেক্রেটারি মাওলানা আবুল হাসনাত আমিনী বলেন, ‘আমরা হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে মন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছি।’ কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো এখন বলা যাবে না।’ সম্প্রতি চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ব্রাক্ষণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডব-নাশকতার পর গত মাসের শুরু থেকে হেফাজত নেতারা গ্রেপ্তার হতে থাকেন। এরই মধ্যে অর্ধশত কেন্দ্রীয় নেতাসহ প্রায় ৫০০ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। গত ১৮ এপ্রিল সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক গ্রেপ্তারের পর গত ২০ এপ্রিল হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা নূরুল ইসলাম জিহাদীর নেতৃত্বে সংগঠনের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছে। এরপর গত ২৫ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। একই রাতে জুনাইদ বাবুনগরী আহ্বায়ক ও নূরুল ইসলাম জিহাদীকে সদস্যসচিব করে দুই দফায় পাঁচ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি করেছেন। তবে এ কমিটিতেও শফীর অনুসারীদের না রাখায় আরো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বাবুনগরীবিরোধী নেতারা। সূত্র জানায়, আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর তাঁদের নতুন কমিটি ঘোষণা করা কথা হতে পারে। এ জন্য তাঁরা বিভিন্ন মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। সরকারের সবুজ সংকেত পেতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পুরো বিষয় অবহিত করেছেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তার অভিযানে আগের কমিটিতে থাকা শফীপন্থী কয়েকজন নেতাও রয়েছেন। তাঁদের মুক্তির দাবি জানিয়ে সমঝোতাও চেয়েছেন নেতারা। সার্বিক ব্যাপারে জানতে আল্লামা শফীর ছোট ছেলে ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক প্রচার সম্পাদক আনাস মাদানীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি রমজানের আগে দুবাই গেছেন। বর্তমানে সেখানে অবস্থান করছেন। তাঁর পাশাপাশি আরো কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাবেক নেতা এখন দেশের বাইরে রয়েছেন। তাঁরা এলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানা গেছে। গতকাল একাধিক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, হেফাজতের শফীপন্থী গ্রুপে ইসলামী ঐক্যজোটসহ রাজনীতিক নেতা আছে। কয়েকজন শফীপন্থী নেতা এরই মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এসব কারণে শফীপন্থীদের ওপরও পূর্ণ আস্থা নেই। শফীপন্থী নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার আগেও পুলিশের গোয়েন্দাদের কাছে তাঁদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁদের পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। মামুনুল হক, ইসলামাবাদীসহ রাজনীতিক নেতাদের বাদ দিয়ে হেফাজতের আহ্বায়ক কমিটি কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে তাও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তিন নেতা ফের রিমান্ডে : এদিকে গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম মাসুদুর রহমানের আদালত শুনানি শেষে হেফাজতের তিন নেতার রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাঁরা হলেন—হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, সহকারী মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন ও সংগঠনটির ঢাকা মহানগরীর সহসভাপতি মাওলানা জুবায়ের আহমদ।
Link copied!