শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নারীরা পায়ের ব্যথা নিয়ে গেলেও বুকে হাত দেন ডা.ফেরদৌস, যৌন হয়রানির মামলা

প্রকাশিত: ০৯:৫৫ পিএম, আগস্ট ২১, ২০২১

নারীরা পায়ের ব্যথা নিয়ে গেলেও বুকে হাত দেন ডা.ফেরদৌস, যৌন হয়রানির মামলা

ডেইলি খবর ডেস্ক: করোনাভাইরাসের শুরুর দিকে দেশের মানুষের সেবা করার জন্য নিউইয়র্ক থেকে ঢাকায় আসা সেই ডা.ফেরদৌস খন্দকারের বিরুদ্ধে যৌন হযরানির মামলা হযেছে।নিউইয়র্কের বাঙালি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের চিকিৎসক ডা.ফেরদৌস খন্দকারের বিরুদ্ধে এ যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা করেছেন কুইন্স এলাকার পাঁচ নারী। জানা গেছে বিভিন্ন সময়ে নারী রোগীদের যৌন নির্যাতন,অকারণে বুক স্পর্শ করা,এমনকি ১৪ বছরের কম বয়সী মেয়েদের অযৌক্তিক স্তন পরীক্ষাসহ নানাভাবে নারী রোগীদের হয়রানির অভিযোগে কুইন্স সুপ্রিম কোর্টে এ মামলা দায়ের করা হয়।এ খবর দিয়েছে নিউ ইয়র্কের অনলাইন গণমাধ্যম দ্যা সিটি। সংস্থাটি জানায়,নারীরা পায়ের ব্যথা নিয়ে ওই ডাক্তারের চেম্বারে গেলে বুকের চিকিতসা আগে করতে হবে বলে বুকে হাত দেন। কুইন্স সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা মামলার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে,ডা.ফেরদৌস গত দুই দশক ধরে অকারণে নারী রোগীদের বুক স্পর্শ করাসহ নানাভাবে যৌন হয়রানি করে যাচ্ছেন। পাঁচ নারী অভিযোগ করে বলেন,দুই দশক ব্যাপী ঘটনাগুলিতে খন্দকার ফেরদৌস তাদের বুক স্পর্শ করেছিল। এমনকি সামান্য গলাব্যথার মতো উপসর্গ নিয়ে তার কাছে গেলেও অযাচিতভাবে স্পর্শকাতর অঙ্গে হাত দেয়ার পাশাপাশি অনেক সময় তাদেরকে আংশিক পোশাক খোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন ডা.ফেরদৌস।অভিযোগেডা.ফেরদৌস খন্দকারকে একজন 'সিরিয়াল যৌন শিকারী' হিসেবে অভিযুক্ত করে বলা হয়, যিনি কয়েক দশক ধরে চিকিৎসা সেবা প্রদানের নামে কয়েক ডজন নারী ও তরুণীকে যৌন নিপীড়ন ও হয়রানি করেছেন। গত বছর কয়েকজন মহিলা ডা.ফেরদৌসের অশোভন আচরণের বিরুদ্ধে অনলাইনে পোস্ট দিয়ে প্রতিবাদ করায় তিনি তিন জনের বিরুদ্ধে ১০ লাখ ডলারের মানহানির মামলা দায়ের করেছিলেন। আদালত মামলাটি খারিজ করে দিয়ে বিবাদির আইনজীবীর পারিশ্রমিক পরিশোধ করার জন্য ডা.ফেরদৌস খন্দকারকে নির্দেশ দেন। এদিকে মামলা দায়ের করা পাঁচজন নারীর প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবি ও নারীবাদী লিটিগেশন সংস্থা ক্রুমিলার পিসি'র পরিচালক সুসান ক্রুমিলার জানান,খন্দকার ফেরদৌস ভেবেছিলেন মামলা করলে হয়রানির শিকার নারীরা মুখ বন্ধ করে ফেলবে কিন্তু হয়েছে তার বিপরীত। তারা সামনে এগিয়ে এসে প্রতিবাদী হয়েছেন। তিনি বলেন, মানহানির মামলা করার জন্য খন্দকার ফেরদৌসকে বাকি জীবন অনুশোচনা করতে হবে।তার মতো লোকের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য সাহস দরকার ছিল যা পাঁচ নারী দেখিয়েছেন। অ্যাটর্নি সুসান ক্রুমিলার বলেন, আমাদের একটা ধারণা যে, ডাক্তাররা সম্মানিত ও ভাল মানুষ। তারা মানুষকে সাহায্য করার জন্য সেখানে আছে। শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা নিয়ে কেউ যখন ডাক্তারের কাছে গিয়ে অপ্রয়োজনে কাপড় খুলতে হয়, শরীর সম্পর্কে তথ্য শেয়ার করতে হয়-সেটা অন্য কোন ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অপব্যবহারের চেয়েও অনেক বেশি আপত্তিকর।মামলায় যেসব মহিলারা খন্দকার ফেরদৌসের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের বিবরণ দেয়া তখন তাদের বয়স ১৪ থেকে ২৩ বছর ছিল। হয়রানির শিকার এক নারী সেদিনের বিব্রতকর ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রুটিন ব্লাড টেস্ট করানোর জন্য তিনি তার মায়ের সাথে ডা. ফেরদৌসের চেম্বারে গিয়েছিলেন। ব্লাড টেস্টের আগে চেক-আপ করার প্রয়োজন জানিয়ে ডা. ফেরদৌস ওই নারীকে পরীক্ষা কক্ষে নিয়ে তার শার্টটি টেনে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বাধা দেয়ার পরও শেষ পর্যন্ত তার শার্টটি ঘাড়ে পর্যন্ত টেনে তুলেন এবং তার স্টেথোস্কোপটি ব্রার নীচে স্পর্শ করিয়ে প্যাডিং এবং টাইটনেস সম্পর্কে মন্তব্য করেন। বর্তমানে ২৪ বছর বয়স্কা ওই নারী দ্যা সিটিকে জানান,এরপর ডা.ফেরদৌস তার বুকের দিকে এমনভাবে তাকিয়ে ছিলেন যা তাকে গভীর অস্বস্তিতে ফেলেছিল। এক পর্যায়ে তিনি আঙ্গুল দিয়ে তার স্তনপর্যন্ত স্পর্শ করেন। ওই নারী জানান, এটি ছিল তার কল্পনার বাইরে। এরপর তিনি ডা. ফেরদৌসকে জোরে ধাক্কা দিয়ে বাইরে এসে বিষয়টি মাকে জানালে,তার মা খন্দকার ফেরদৌসের মুখোমুখি হওযার জন্য নিজেকে প্রস্তুত মনে করেননি। সেদিনের পরে ভুক্তভুগী নারী তার ফেসবুক পেজে কথিত ঘটনাটি পোস্ট করে এটি তার এক বন্ধুর অভিজ্ঞতা হিসাবে বর্ণনা করে। কয়েক মাসের মধ্যে পোস্টটি দেখে অন্যান্য ভুক্তভোগী নারীরা তার সাথে যোগাযোগ করলে গত জুন মাসে তিনি তাদের অভিযোগগুলো নিয়ে কারো নাম প্রকাশ ছাড়াই সামাজিক মাধ্যমে আবার পোস্ট করেন। আদালতে দাখিল করা আবেদনের প্রেক্ষিতে দ্যা সিটি জানায়, ডা. ফেরদৌসের বিরুদ্ধে যে পাঁচ নারী মামলা করেছেন, তাদের মধ্যে একজন ২০০৩ সালে নির্যাতিত হয়েছিলেন । তখন তার বয়স ছিল ১৪ বছর। তিনি বলেন, ঠান্ডার লক্ষণ ও হাঁপানির চিকিৎসার জন্য খন্দকারের চেম্বারে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা করতে পারেন কি না -ডা.ফেরদৌস সেটা তার কাছে জানতে চান। এক পর্যায়ে তিনি ওই নারীকে তার পোশাক আংশিকভাবে খোলার নির্দেশ দেন। তার এক মাস পর হাঁপানি বেড়ে গেলে তিনি আবার ডাক্তারের চেম্বারে গেলে ডাক্তার তার খালি স্তন স্পর্শ করেন। মামলার আরেক বাদী তার হয়রানির ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তার সাথে ঘটনাটি ঘটেছিল এক দশক আগে। তিনি জানান,তিনি ফ্লু-ধরনের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন। পরীক্ষার সময় তিনি তার স্টেথেস্কোপ তার বুকে অযাচিতভাবে স্পর্শ করেন। তিনি বলেন,ওই ঘটনা কয়েক দিন পর্যন্ত আমার কাছে দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িযেছিল। আমার বয়স ছিল খুবই কম। কীভাবে বলতে হবে, বুঝতে পারছিলাম না। আবার আমি একেবারে অজ্ঞও ছিলাম না। আমি জানতাম, এভাবে কোনো চিকিৎসক কাউকে পরীক্ষা করে না। আমি বুঝতে পারছিলাম আমার সাথে কিছু ঘটেছে। তিনি বলেন,আমি এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। আমি এখন নিজের পক্ষে ওকালতি করতে পারি। এখন আমি আমার কথা বলতে পারি।মামলাকারী ওই পাঁচ নারী ক্ষতিপূরণ দাবি করার পাশাপাশি চিকিৎসকের চেম্বারে শারীরিক ও মানসিক হয়রানি, লিঙ্গ সহিংসতা এবং বৈষম্য, চিকিৎসার অপব্যবহার ও অপ্রাপ্তবয়স্কস্কদের প্রতি যৌন সহিংসতার জন্য তারা ডা.ফেরদৌসের শাস্তি প্রত্যাশা করেছেন। আমেরিকান বোর্ড অব ইন্টারনাল মেডিসিনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা.ফুরম্যান ম্যাকডোনাল্ড বলেন,ক্যান্সারের জন্য একজন রোগীর ব্রেস্ট স্ক্রিনিং করা যেতে পারে কিন্তু শ্বাসকষ্ট,গলা ব্যথা এবং সর্দি-কাশির মতো সমস্যায় রোগীদের স্তন পরীক্ষা করা "অস্বাভাবিক" ছিল। সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে মানবজমিনের পক্ষ থেকে ডা. ফেরদৌস খন্দকারের সাথে শুক্রবার নিউইয়র্ক সময় বিকেল পাঁচটায় এবং শনিবার সকাল সাড়ে সাতটায় যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য,করোনাভাইরাসের শুরুর দিকে দেশের মানুষের সেবা করার জন্য ডা.ফেরদৌস খন্দকার বাংলাদেশে ছুটে এসেছিলেন। কিন্তু তাকে বঙ্গবন্ধু হত্যার কুশীলব খন্দকার মোশতাকের ভাতিজা ও বঙ্গবন্ধুর খুনী কর্নেল রশিদের খালাতো ভাই হিসেবে প্রচারের পর নানা জটিলতায় তিনি নিউইয়র্ক ফিরে যান। সুত্র-দ্যা সিটি
Link copied!