বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিজে সুরক্ষিত থাকুন, অপরকে সুরক্ষিত রাখুন: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৪:৪৬ এএম, এপ্রিল ২০, ২০২১

নিজে সুরক্ষিত থাকুন, অপরকে সুরক্ষিত রাখুন: প্রধানমন্ত্রী

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সবার প্রতি আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষার সরকারি নির্দেশনাগুলো মেনে করোনা থেকে নিজে সুরক্ষিত থাকুন। অপরকে সুরক্ষিত রাখুন। এই করোনাভাইরাসের হাত থেকে যেন দেশ ও জাতি মুক্তি পায়- সেজন্য সবাই দোয়া করুন। সোমবার বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ধারণকৃত ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি। এদিন রাত আটটায় প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কৃষক লীগ নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আজকের এই দিনে আমার দুঃখ একটাই- করোনাভাইরাসের কারণে আমি নিজে সশরীরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পাড়লাম না। সকলের সঙ্গে দেখাও হলো না। প্রতি বছর আমরা কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করি। তবে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, মাস্ক পড়তে হবে, গার্গল করা, ভাপ নেওয়া, যেখানে বেশি জনসমাগম সেখানে না যাওয়া, দূরত্ব বজায় রেখে চলা এবং আমরা যে স্বাস্থ্য-সুরক্ষার নির্দেশাগুলো দিয়েছি- অবশ্যই সে নির্দেশনাগুলো মেনে চলতে হবে।' তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সেবাসহ সব ধরনের মৌলিক অধিকার পূরণের জন্য জাতির পিতা অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন। কৃষক লীগের এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেশের সকল কৃষক-কৃষাণীকেও শুভেচ্ছা জানাই। কারণ, তারা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ও মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খাদ্য উৎপাদন করেন। সেই খাদ্য খেয়েই আমরা বেঁচে থাকি। কাজেই তাদের প্রতি আমাদের সব সময় সমর্থন রয়েছে। তাদের সহযোগিতা করা- বিশেষ করে আওয়ামী লীগ কর্তব্য মনে করে।' এ প্রসঙ্গে করোনার শুরুতে কৃষকদের ধান কেটে দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, করোনাভাইরাসের সময় ধানকাটা নিয়ে সমস্যা হলে তিনি (শেখ হাসিনা) দলের নেতাকর্মী বিশেষ করে ছাত্রলীগকে আহ্বান করেছিলেন। পরে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও কৃষক লীগ থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের সকলে মাঠে নেমে পড়েন। কৃষকের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলে দেন। এখন থেকে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য হারভেস্টার থেকে শুরু করে সবধরনের যন্ত্র ধীরে ধীরে কৃষকের হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষি দেশের উন্নয়নের সব থেকে বড় মাধ্যম। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে শিল্পের দিকেও সরকার বিশেষ নজর দিয়েছে। উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার ব্যবস্থা এবং দেশ-বিদেশে পণ্য রপ্তানি করতে সরকার কৃষককে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। কারণ সরকার দেশের কৃষিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।' তিনি আরও বলেন, '১৯৯৬ সালে প্রথম সরকার গঠনের থেকেই আওয়ামী লীগ সরকার কৃষি গবেষণায় গুরুত্ব দেয়। আজ গবেষণার ফলে আরও নতুন নতুন ধরনের ফসল উৎপাদনসহ তরিতরকারি, ফলমূল ও দানাদার খাদ্যশষ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্য উৎপাদনে ব্যাপকহারে গবেষণা হচ্ছে। উন্নতমানের বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে কৃষক কম কষ্টে অধিক পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন করতে পারছেন। ধান, গম ও ভুট্টাসহ সব ধরনের ফসল উৎপাদন করার সুযোগ পাচ্ছেন। উৎপাদিত বাজারজাত করার ব্যবস্থাও সরকার করে দিচ্ছি।' শেখ হাসিনা বলেন, 'পঁচাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা এদেশের কৃষকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে শুরু করে। সার চাইতে গিয়ে গুলিতে ১৮ জন কৃষককে জীবন দিতে হয়েছে- এ ধরনের ঘটনাও বাংলাদেশে ঘটেছে। আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে, তখন থেকে কৃষকদের আর কোনো কষ্ট করতে হয়নি। কারণ সরকার কৃষকদের প্রতি যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে। বর্গাচাষীদের আমরা কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে বিনা জামানতে ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সারের দাম যা বিএনপি সরকারের আমলে ৯০ টাকা ছিল, তা আজ ১২ টাকায় আমরা নামিয়ে এনেছি।' কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে তার সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'গবেষণার মাধ্যমে উন্নত বীজ উৎপাদন করে কৃষকদের সরবরাহ করা হচ্ছে। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ- যেটা জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল, সরকার সেই লক্ষ্যও কার্যকর করে দিচ্ছে। সেখানে ৭০ শতাংশের ওপর ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করা হচ্ছে, যাতে কৃষকরা আরও অধিক পরিমান খাদ্য উৎপাদন করতে পারেন। উন্নতমানের বীজ সরবরাহ ও প্রতিটি কৃষি-উপকরণ কৃষকদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে সেচকাজে কৃষকের বিদ্যুৎ ব্যবহারে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। কৃষকের বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে নিশ্চিত হয়, সে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে সেচকাজে সোলার-প্যানেল ব্যবহারও শুরু হয়েছে।' তিনি আরও বলেন, 'কৃষকদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করনে উৎপাদিত পণ্যের যথাযথ দাম নির্দিষ্ট করা হচ্ছে। কৃষকদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, যাতে তাদের গুদামে খাদ্য সংরক্ষিত থাকে, প্রত্যেক কৃষকের ঘরে খাদ্য যেন থাকে। কারণ যারা উৎপাদন করবেন, তারাই খাবার পাবেন না বা তাদের ছেলে-মেয়েরা খাদ্যে কষ্ট পাবে- এটা হতে পারে না।' শেখ হাসিনা বলেন, 'প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থাও সরকার করে দিয়েছে। এবারও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক যেন সহযোগিতা পান- সেজন্য সরকার একটা থোক বরাদ্দ রেখে দিচ্ছে। দেশে উৎপাদন যাতে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হতে পারে- সেজন্য মাটি পরীক্ষা করা থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।' তিনি বলেন, 'আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিয়েছে। কৃষক একটা মোবাইল ফোনে ছবি তুলে তার ফসলের কী অবস্থা, মাটির কী অবস্থা বা মাটি পরীক্ষা করতে পারেন। কী ধরনের সার ব্যবহার করবেন, কতটুকু ব্যবহার করবেন বা কীটনাশক ব্যবহার করবেন কি-না বা কতটুকু করবেন- সেই ধরনের কৃষি তথ্য যাতে তারা পেতে পারেন সেজন্য তথ্যকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। সেখান থেকে কৃষক তার প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।' এর আগে কৃষক লীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ভোরে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের কার্যালয়ে জাতীয় ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকালে কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ্র ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপির নেতৃত্বে সংগঠনের নেতাকর্মীরা ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
Link copied!