নিজ আসনের তিন উপজেলার আ.লীগের সম্মেলনে দাওয়াত পাননি পঙ্কজ দেবনাথ
প্রকাশিত: ১২:৫৮ পিএম, নভেম্বর ২৭, ২০২২
নিজের সংসদীয় এলাকা বরিশাল-৪ আসনের তিনটি সাংগঠনিক উপজেলায় আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দাওয়াত পাননি সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ। এসব সম্মেলনে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ প্রধান অতিথি ছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের অন্য নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু পঙ্কজ দেবনাথকে মঞ্চে বা দর্শক সারিতে দেখা যায়নি।
গত বুধবার মেহেন্দীগঞ্জে এবং গত শুক্রবার সাংগঠনিক উপজেলা কাজীরহাটে আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ৪ নভেম্বর হিজলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছিল।
পঙ্কজ দেবনাথের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত বুধবার মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় সম্মেলনের আগের দিন মঙ্গলবার ঢাকায় ফিরে যান এই সংসদ সদস্য। ৪ নভেম্বর হিজলা এবং গতকাল শুক্রবার কাজীরহাট থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনেও ছিলেন না তিনি। দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর আওয়ামী লীগের কোনো অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর সৌজন্যবোধও দেখাচ্ছেন না দলের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা।
এমনকি তিন উপজেলায় সম্মেলনের আয়োজকও ছিলেন পঙ্কজ দেবনাথের বিরোধীরা। তাঁরা স্থানীয় রাজনীতিতে পঙ্কজ দেবনাথের বিরোধী হিসেবে পরিচিত। এসব সম্মেলনে পদও পেয়েছেন পঙ্কজবিরোধীরা। ফলে তাঁর অনুসারী নেতারা এখন কোণঠাসা হওয়ার আশঙ্কায় আছেন।
মেহেন্দীগঞ্জ সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র কামাল উদ্দীন খানকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাহাব আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। হিজলায় সুলতান আহমেদকে সভাপতি ও এনায়েত হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। আর কাজীরহাটে সভাপতি করা হয়েছে আবদুল জব্বার খান ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন জিল্লুর রহমান। তাঁরা সবাই পঙ্কজ দেবনাথের বিরোধী বলে পরিচিত।
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন খান বলেন, দলবিরোধী কাজের জন্য পঙ্কজ দেবনাথকে আওয়ামী লীগের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ জন্য তাঁকে দলীয় সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তিনি দলীয় সংসদ সদস্য হিসেবে আমন্ত্রণ পেতে পারেন কি না, এমন প্রশ্নে কামাল খান বলেন, এ বিষয়ে দলের নির্দেশনা রয়েছে।
সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ অবশ্য সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দলের একজন সমর্থক হিসেবে হলেও সম্মেলনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা ও আগ্রহ দুটোই ছিল আমার। কিন্তু আমাকে অংশ নিতে নিষেধ করা হয়েছে।’ তবে কে নিষেধ করেছেন, এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
এদিকে দলীয় কার্যক্রমে অংশ নিতে বাধা পেলেও নিজের অবস্থান ধরে রাখতে নানা উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন পঙ্কজ দেবনাথ। গত সোমবার তিনি বরিশাল থেকে সড়কপথে মেহেন্দীগঞ্জে যাওয়ার জন্য মেঘনার শাখা নদীতে একটি ফেরি উদ্বোধন করেন। শুক্রবার এলাকায় এসে রাতে বরিশালে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। শনিবার বিকেলে তিনি মেহেন্দীগঞ্জে সরকারি পাতারহাট রসিক চন্দ্র মহাবিদ্যালয়ের মাঠে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
পঙ্কজ দেবনাথ ৭ নভেম্বর বিশাল মিছিল নিয়ে মেহেন্দীগঞ্জ শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে স্থানীয় তেমুহনী চত্বরে সমাবেশ করেন। এরপর আর তাকে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে দেখা যায়নি।
গত ১১ সেপ্টেম্বর দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে পঙ্কজ নাথকে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ার অনুরোধ করে কেন্দ্রে রেজল্যুশন পাঠানো হয়েছিল। সেখানে অভিযোগ করা হয়, পঙ্কজ দেবনাথ নির্বাচনী এলাকা হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় দলের মধ্যে বিভেদ ও নিজের বলয় তৈরি করতে পুরোনো ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের কোণঠাসা করে রেখেছেন।
একই সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় প্রার্থীর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়া, নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পরাজিত করতে খুন, দলীয় নেতা-কর্মীদের মারধর, কুপিয়ে জখম এবং জ্যেষ্ঠ নেতাদের অপমান-অপদস্থ করছেন—এমন অভিযোগও আনা হয়। তবে পঙ্কজ দেবনাথ স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন বলে মনে করেন তার কর্মী-সমর্থকেরা।
দলীয় পদ হারানোর পর গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রথম এলাকায় ফেরেন এই সংসদ সদস্য। সে সময়ও তার সমর্থকদের নিয়ে মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলা—দুই উপজেলায় ব্যাপক মহড়া দেন।