শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিবন্ধন পেতে এগিয়ে ৬ দল

প্রকাশিত: ০১:০০ পিএম, মার্চ ১৭, ২০২৩

নিবন্ধন পেতে এগিয়ে ৬ দল

আগামী জুনে নতুন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করতে চায় কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন। ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী মে মাসেই নতুন রাজনৈতিক দলের আবেদন যাচাই-বাছাই করে নিবন্ধন দেয়ার কথা রয়েছে। সে লক্ষ্যে কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কাজও শুরু হয়ে গেছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে এসব কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তারপর মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনে যাবে কমিশন। তবে এর মধ্যেই নিবন্ধন দৌড়ে এগিয়ে থাকা ছয় দল আলোচনায় উঠে এসেছে। নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্র বলেছেন, ওই ছয় দলের মধ্যে দুটির বিরুদ্ধে জামায়াত-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক বাছাইয়ে উতরে যাওয়া দলগুলো হলো নাগরিক ঐক্য, গণ-অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় বঙ্গ লীগ, এবি পার্টি ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি বিডিপি। এর মধ্যে এবি পার্টি ও বিডিপির সঙ্গে জামায়াত নেতাদের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে। আলোচিত দলগুলোর নেতাদের দাবি, নির্বাচন কমিশনের চাওয়া সব তথ্য দিয়ে তারা শর্ত পূরণ করেছেন। তাদের নিবন্ধন না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। নিবন্ধন পাওয়ার ক্ষেত্রে দলগুলো আশাবাদী। তবে কিছু দলের নেতারা মনে করছেন, নিবন্ধন পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকার রাজনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে। না হলে তারা গতবারই পেত। কেউ নিবন্ধন না পেলে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার হুমকিও দিচ্ছেন তারা। তবে নির্বাচন কমিশন মনে করছে, যারা শর্ত পূরণ করতে পারবে, তারাই নিবন্ধন পাবে। এ ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিষয় নয়। আইন অনুযায়ী নিবন্ধন দেয়া হবে। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, ‘নিরানব্বই পেলেও নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পাবে না। এক শই পেতে হবে।’ এর আগে সর্বশেষ দল নিবন্ধনের জন্য ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল ইসি। আবেদন করেছিল ৭৬টি দল। কে এম নূরুল হুদা কমিশন নানা কারণে সবার আবেদন বাতিল করে দেয়। পরে আদালতের আদেশে নিবন্ধন পায় জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম ও বাংলাদেশ কংগ্রেস। তার আগে ২০১৩ সালে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলে ৪৩টি দল আবেদন করে। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশন সে সময় বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএ), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটকে নিবন্ধন দেয়। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনে। সে সময় ১১৭টি দল আবেদন করে নিবন্ধন পায় ৩৯টি। আদালতের নির্দেশে সাবেক বিএনপি নেতা নাজমুল হুদা নেতৃত্বাধীন দল তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দেয় কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে গত ১৫ বছরে মোট ৪৫টি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে ইসি। এর মধ্যে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় ও আদালতের নির্দেশে জামায়াতে ইসলামী, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, ফ্রিডম পার্টি, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি (পিডিপি) ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) দলের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। ফলে বর্তমানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে ৪০টি। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতি সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন দল নিবন্ধন দিতে আবেদন আহ্বান করার বিধান আছে। গত ২৬ মে দলগুলোর কাছে আবেদন আহ্বান করে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল ইসি। সে সময় শেষ হওয়ার সপ্তাহখানেক আগ পর্যন্ত ১০টির মতো দল আবেদনপত্র তুলেছিল। এদের মধ্যে আবেদনপত্র জমা দেয় বাংলাদেশ ন্যাশনাল রিপাবলিকান পার্টি এবং বঙ্গবন্ধু দুস্থ ও প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ। পরে ২৯ অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত সময় দেয় বর্তমান কমিশন। এবার সব মিলিয়ে ৯৩টি দল ইসির কাছে আবেদন করেছিল। দুটি দল পরে আবেদন প্রত্যাহার করে। চালান ও রসিদের টাকা পূরণ না করায় ১৪টি দলের আবেদন বাতিল হয়। বাকি ৭৭ দলও নিজেদের নিবন্ধন আবেদন সঠিকভাবে জমা দেয়নি। ফলে প্রত্যেককেই ফের ১৫ দিনের সময় দেয় ইসি। কিন্তু সেই সময়সীমার মধ্যে ৫৫টি দল সাড়া দেয়। এখন তাদের যাচাই-বাছাই চলছে। নিবন্ধনের শর্ত অনুযায়ী নতুন দল হিসেবে নিবন্ধিত হতে হলে একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং সদস্য হিসেবে অন্তত ১০০টি উপজেলা/মহানগর থানায় প্রত্যেকটিতে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থনসংবলিত দলিল থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আনিছুর রহমান বলেন, ‘যাচাই-বাছাই এখনো চলছে। শেষ হয়নি। আরও এক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। তারপর মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন শুরু হবে।’ নিবন্ধন পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হতে পারে বলে মনে করেন না ইসি আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, ‘অনেকেই মনে করতে পারেন। আমরা মনে করি না। আমরা আমাদের মতো কাজ করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত এ রকম কোনো বিষয় নেই।’ আর নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘কমিশন সিদ্ধান্ত দিলেই মাঠ পর্যায়ের পরিদর্শনে যাওয়া হবে। এ মাস থেকেও শুরু হতে পারে।’ নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘যদি সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত না হয়, তাহলে তো নিবন্ধন গতবারই পেতাম। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয় কি না তা তো জানি না।’ রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের শর্তগুলোকে অন্যায় শর্ত আখ্যা দিয়ে এই রাজনীতিবিদ বলেন, ‘সবগুলো সার্টিফাই করে দিয়েছি। যে অফিস নিয়েছি সেই অফিসের ভাড়ার রসিদ অনেক সময় বাড়িওয়ালারা দিতে চায় না। বিভিন্ন সংস্থার লোকরা এসে বাড়িওয়ালাদের বলে। পরে ভয় পেয়ে তারা দিতে চায় না।’ নির্বাচন কমিশন নিবন্ধনের জন্য যে শর্তগুলো দিয়েছিল, তা নতুন দলের জন্য কঠিন বলে মনে করেন গণ-অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক নূর। তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘কাগজে যা দেয়া আছে, মাঠেও তাই আছে। তারা মাঠে গেলে এগুলোই পাবে। বরং তারা শর্তে যা দিয়েছে, আমরা তার চেয়ে বেশি শর্ত পূরণ করেছি।’ খুলনা, বগুড়া, বাগেরহাটে গণ-অধিকার পরিষদের জেলা অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে অভিযোগ করে নুরুল হক নূর বলেন, ‘সরকার ম্যানেজড ইলেকশনের দিকে যাচ্ছে। যারা তাদের ইলেকশনে যাবে, তারাই নিবন্ধন পাবে। যদি নিবন্ধন না পাই, তাহলে রাজনৈতিকভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে ও আইনি প্রক্রিয়ায় লড়াই চালিয়ে যাব।’ এবি পার্টির আহ্বায়ক এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী বলেন, ‘তাদের (নির্বাচন কমিশন) চাহিদার কোনো ব্যত্যয় নাই। যেকোনো জায়গায় খবর নিতে যাক আমাদের কোনো সমস্যা নাই।’ এবি পার্টির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সংযোগের অভিযোগ প্রসঙ্গে সোলায়মান চৌধুরী বলেন, ‘কিছু থাকতে পারে, যারা আগে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি করত। তবে তারা সেখান থেকে পদত্যাগ করে চলে আসছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন যারা জামায়াতে ইসলামী করত তাদের কোনো সন্তানও আমাদের দলে নাই।’ বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) সভাপতি আনোয়ারুল হক চাঁন বলেন, ‘২৪ জেলার মহানগর কমিটি দিয়েছি। এগুলো সব জায়গা পরিদর্শন করেছি। আওয়ামী লীগের পর যদি কোনো রাজনৈতিক দল থেকে থাকে, সেটা বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি।’ বিডিপির বিরুদ্ধে জামায়াত-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেদের স্বাধীনতার পক্ষে মনে করি। স্বাধীনতায় যারা বিশ্বাস করে তারাই আমাদের দলে রয়েছে।’ বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান রুহুল আমিন ভূঁইয়া চাঁদপুরী বলেন, ‘আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। নির্বাচন কমিশন যদি মাঠ পর্যায়ে যায়, সে প্রস্তুতি আমাদের নেয়া আছে। কাগজপত্রে যেভাবে দিয়েছি, সেভাবেই আছে।’
Link copied!