শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নেতাকর্মীদের ‘ঝিমুনি’ কাটাতে চায় বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:১২ পিএম, জানুয়ারি ২৪, ২০২৩

নেতাকর্মীদের ‘ঝিমুনি’ কাটাতে চায় বিএনপি

টানা ছয় মাস ধরে লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। এর সঙ্গে গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু করেছে দলটি। এই কর্মসূচি পালন করছে বিএনপির সমমনা দল ও জোটগুলো। আগামী বুধবার সারা দেশের জেলা ও মহানগরে যুগপতের চতুর্থ ধাপের কর্মসূচি পালন করা হবে। এ কর্মসূচি পালনে সবাইকে আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। টানা এসব কর্মসূচিতে বিএনপি ও মিত্রদের নেতাকর্মীরা প্রায় হাঁপিয়ে উঠেছেন। তাদের মধ্যে ঝিমুনিভাব দেখা দিয়েছে। তবু তারা সরকার পতনের লক্ষ্যে কঠোর আন্দোলন চান। তবে বিএনপির হাইকমান্ড কোনো উসকানিতে এখনই কঠোর কর্মসূচির পক্ষে নয়। তারা সরকারি দলের অবস্থা বুঝে কর্মসূচি প্রণয়ন করবে। চলমান আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা ও নেতাকর্মীদের ‘ঝিমুনি’ কাটাতে সভা-সমাবেশ অব্যাহত রাখবে দলটি। বুধবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার উসকানি দিলেও ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে বিএনপি। বিএনপি কোনো উসকানির ফাঁদে পা দেবে না জানিয়ে তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের জন্য সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ, আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে বিএনপিকে ভয় দেখাতে চায়। সেইসঙ্গে বিএনপির মিছিল সমাবেশে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ঠেকাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায়। কিন্তু আমরা কোনো ফাঁদে পা দেব না। গত ২২ আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সভা-সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি। এরপর দলের ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে গণসমাবেশ করে বিএনপি। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন পর তৃণমূলে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তির জানান দেয় দলটি। শুধু তাই নয়, কর্মসূচি পালনকালে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সরকারি দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলার শিকার হন। এ পর্যন্ত ১৫ জন নেতাকর্মী মারা গেছেন বলে বিএনপির দাবি। জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং নারায়ণগঞ্জ ও ভোলায় তিন নেতাকর্মীকে হত্যার প্রতিবাদে ঢাকায় ১০ সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতিবাদ সমাবেশ করে বিএনপি। এসব কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে সরকারি দলসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলার শিকার হন নেতাকর্মীরা। এরপর গত ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে সারা দেশের ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে গণসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে ওই কর্মসূচির ইতি টানে দলটি। এরপর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক উপায়ে মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করছে। সম্প্রতি আমাদের কর্মসূচিতে শুধু নেতাকর্মীই নন, দেশের সাধারণ মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি সবাই দেখেছেন। এসব দেখে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তারা নানা ধরনের উসকানি দিচ্ছে। কিন্তু বিএনপি তাদের উসকানিতে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবে না। বরং দাবি আদায়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবেই আন্দোলন করবে। এদিকে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনসহ ১০ দফা দাবিতে আগামী বুধবার যুগপৎ আন্দোলনের চতুর্থ ধাপের কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি ও মিত্ররা। ওইদিন নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুপুর ২টায় সমাবেশ করবে বিএনপি। গতকাল রোববার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, যুগপৎ আন্দোলনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বুধবার ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’-এ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবিতে দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে সমাবেশ হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীসহ জনসাধারণের প্রতি সমাবেশ সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন। এর মাধ্যমে দুর্নীতিবাজ, ফ্যাসিস্ট, গণবিরোধী সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দিদের মুক্তি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানোসহ ১০ দফা দাবিতে চলমান গণআন্দোলন বেগবান করার আহ্বান জানান। নয়াপল্টনে সমাবেশের জন্য ডিএমপি কমিশনারকে অবহিত করে এরই মধ্যে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, নয়াপল্টনে সমাবেশের বিষয়ে যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সেখানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। যুগপতের চতুর্থ ধাপের কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী বুধবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করবে ১১ দলের জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। এই জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ কালবেলাকে বলেন, বুধবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তারা সমাবেশ করবেন। সেখানে ১১ দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া বুধবার বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগরে পানির ট্যাঙ্কির পাশে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে ১২ দলীয় জোট। এ জোটের অন্যতম নেতা ও জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, তারা বিকেল ৩টায় বিক্ষোভ সমাবেশ করবেন। সেখানে জোটের শীর্ষ নেতারা ছাড়াও অন্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন। এদিকে ১০ দফা দাবির পাশাপাশি বুধবার ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে যুগপৎভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট। এতে সভাপতিত্ব করবেন জোটের সমন্বয়কারী মুহাম্মদ সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, বুধবার সকাল ১১টায় পুরানা পল্টন মোড়ে তারা সমাবেশ করবেন। অন্যদিকে বুধবার সকালের দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করবে সাত দলের গণতন্ত্র মঞ্চ। জোটের শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, এখন পর্যন্ত প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এছাড়া বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বুধবার একসাথে রাজপথে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে গণফোরাম-বাংলাদেশ পিপলস পার্টি। গতকাল বিকেলে গণফোরাম (একাংশ) সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টুর কার্যালয়ে দল দুটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। জামায়াতে ইসলামী এখনো কোনো কর্মসূচির ঘোষণা করেনি। তবে ঘরোয়ভাবে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে আলোচনা সভা বা বিক্ষোভ মিছিলের পরিকল্পনা আছে বলে জানা গেছে।
Link copied!