বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১

নেতাদের মধ্যে এবার করোনা আতঙ্ক বেশি

প্রকাশিত: ০৪:৫৩ এএম, এপ্রিল ১০, ২০২১

নেতাদের মধ্যে এবার করোনা আতঙ্ক বেশি

দেশে গত বছর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর রাজনৈতিক দলগুলো যে যার মতো ত্রাণ নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিল; কিন্তু এবার পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তা তারা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। বরং করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের এই সময়ে দলগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের বেশির ভাগ নেতার মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া গত বছর প্রথম দিকে সাধারণ ছুটি এবং বেশ কিছুদিন লকডাউনের আদলে কঠোর বিধি-নিষেধ বাস্তবায়ন করা হলেও এবার পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। গত ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপের ঘোষণার দুই দিন পরই গণপরিবহন চলাচল, শিল্প, কলকারখানা এবং দোকানপাট নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর লকডাউন’ দেওয়া হচ্ছে বলে গতকাল শুক্রবার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তাই ত্রাণ বিতরণ প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো আরো কিছুদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ তত্পরতা কিছুটা শুরু করা হয়েছে। তবে বিএনপির গত বছরের গঠিত ত্রাণ ও করোনা পর্যবেক্ষণ কমিটি সচল করা হলেও দলটি এখনো ত্রাণ নিয়ে মাঠে নামেনি। তারা পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, তা বুঝে উঠতে চাইছে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও ‘লকডাউন’ এখনো পুরোপুরি না দেওয়ায় ত্রাণ তত্পরতা শুরু করেনি বলে জানা গেছে। গত বছর সরকার ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির তত্পরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। ওই বছরের ২৭ এপ্রিল ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ঠিক এক দিন আগে ২৬ এপ্রিল ৮৭ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের প্রস্তাব দেয় বিএনপি। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গতবারের মতো এবারও ত্রাণ তৎপরতা নিয়ে আমরা মাঠে নেমেছি। আমি নিজে এরই মধ্যে ত্রাণ তত্পরতা শুরু করে দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের প্রতিটি অঙ্গসংগঠনকে ত্রাণ তত্পরতা শুরু করে মাঠে নামার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের মতে, ‘পরিস্থিতি এখনো গত বছরের মতো হয়নি। গত বছর পুরো এক মাস সব কিছু বন্ধ থাকায় মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছিল। এখন সব কিছু চলছে।’ তিনি বলেন, ‘তার পরও আমরা করোনা পরিস্থিতির খবর রাখার জন্য দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছি।’ জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপির করোনা ও ত্রাণ কমিটি সচল করা হয়েছে। আমরা সারা দেশের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা তৈরির চেষ্টা করছি। সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও কিভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়, বিএনপি সে চেষ্টায় আছে।’ তিনি বলেন, ‘তবে প্রায় ১৪ বছর ধরে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে আছে। ফলে আমাদের দলের নেতাকর্মীরা নিজেরাই আর্থিক সংকটে আছে। তার পরও গত বছর করোনায় বিএনপি সারা দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।’ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেশের পরিস্থিতি কোন দিকে নিয়ে যাবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছি।’ তিনি বলেন, ‘এ বছর অবশ্য প্রথমে কঠোর বিধি-নিষেধ এবং আগামীতে লকডাউনের কথা বলা হচ্ছে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য, কলকারখানা চালু আছে। তা ছাড়া জাতীয় পার্টির আর্থিক সংগতিও অতটা নেই।’ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান গত ৩ এপ্রিল এক বিবৃতিতে সমাজের বিত্তবানদের পাশাপাশি জামায়াতের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। জানতে চাইলে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, ‘কভিড পরিস্থিতিতে জামায়াতের সব শাখাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গতবারের মতো এবারও ত্রাণ তত্পরতা অব্যাহত থাকবে। তবে কভিড পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় আমরা সে বিষয়ে নজর রাখছি।’ গত বছর মার্চ থেকে প্রথম দফায় সাধারণ ছুটি এবং পরে কিছুদিনের জন্য লকডাউনের মতো কঠোর বিধি-নিষেধে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অনেক লোক বেকার হয়ে পড়ে। করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারও গত বছর তুলনামূলক কম ছিল। ওই পরিস্থিতিতে ঢাকাসহ নির্বাচনী এলাকাগুলোতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ত্রাণসামগ্রী নিয়ে মাঠে নামে। প্রথম দিকে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র নেতারা মাঠে নামলেও পরে বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটির ব্যানারে সিনিয়র নেতারাও ত্রাণ বিতরণে নামেন। কিন্তু এ বছর দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার অনেক বেশি হওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে। করোনায় আক্রান্ত হওয়া সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুসহ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক, আনোয়ার হোসেন খানসহ দলটির অনেক নেতার অবস্থা সংকটাপন্ন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এর আগে মোহাম্মদ নাসিম, বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, সাহারা খাতুনসহ দলের এক ডজনেরও বেশি সিনিয়র নেতা মারা গেছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সিনিয়র নেতাদের আপাতত বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনে তিনি সবাইকে যোগাযোগ রাখতে বলেছেন। অন্যদিকে বিএনপির সবচেয়ে প্রবীণ নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, সার্বক্ষণিক সরব নেতা রুহুল কবীর রিজভীসহ দলটির শতাধিক নেতাকর্মী এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত এবং অন্তত ৪০০ জন মৃত্যুবরণ করেছেন বলে দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাদবাকি সিনিয়র নেতারা আপাতত বাসায় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪৪ হলেও এর বাইরে অনিবন্ধিত দল রয়েছে আরো অর্ধশতাধিক, যদিও দলগতভাবে এরা কেউ রাষ্ট্র ক্ষমতায় যায়নি। তবে দলগুলোর অনেক নেতাই বিভিন্ন সময় এমপি-মন্ত্রী ছিলেন। জামায়াত ও এবি পার্টি ছাড়া ‘আর্থিকভাবে দুর্বল’ বলে পরিচিত বাদবাকি ইসলামপন্থী দলগুলোর ত্রাণ তত্পরতা চোখে পড়ে না। সেই তুলনায় বরং সিপিবি-বাসদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলনের মতো বামপন্থী দলগুলোর ত্রাণ তত্পরতা গত বছর চোখে পড়ার মতো ছিল। এ বছরও পরিস্থিতি বুঝে তারা ত্রাণসামগ্রী নিয়ে মাঠে নামবে বলে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে।
Link copied!