মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পরাজয়ের পেছনে ৩ কারণ

প্রকাশিত: ১২:৫৮ পিএম, জানুয়ারি ১৭, ২০২২

পরাজয়ের পেছনে ৩ কারণ

সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে টানা তৃতীয়বারের মতো নগরের মসনদ জয় করলেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। সেই সঙ্গে বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেন। হাঁকডাক করেও শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে লড়েও প্রায় সত্তর হাজার ভোটের ব্যবধারে হেরে যান সম্পর্কে ভাতিজি আইভীর কাছে। কিন্তু কেন এমন পরাজয় যেখানে ভোটের আগে তৈমূর জোর গলায় বলেছিলেন তিনি হারবেন না। হারার কোনো ‘স্কোপই’ নেই তার। কারণ হিসেবে তার ভাষ্য ছিল, প্রতিটি জিনিসের মৌসুম থাকে, এবার ছিল স্বতন্ত্রের মৌসুম। কিন্তু সেই স্বতন্ত্রেও পরাজয় ঠেকাতে পারেননি তিনি। এর আগে ২০১১ সালের নির্বাচনে ভোটের আগের দিন সরে দাঁড়ান তৈমূর। তার এই পরাজয়ের পেছনে মোটাদাগে তিন কারণ দেখছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নাগরিকরা। তারা বলছেন, প্রথমত নিজের দল বিএনপি থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হন। দলীয় প্রতীকের মনোনয়ন বাগিয়ে আনতে পারেননি। এর কারণে নিজের পদ খুইয়ে স্থানীয় বিএনপির কাছে বিরাগভাজন হয়েছেন। প্রচারে তৈমূর আলম খন্দকারের সঙ্গে দলটির সাবেক দুই সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন ও আবুল কালাম নির্বাচনি মাঠে নামেননি। সবচেয়ে বড় কারণ শামীম ওসমান ও তার অনুসারীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। এটা বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের অনেকে মেনে নিতে পারেননি। যদিও তিনি ‘শামীম ওসমানের’ প্রার্থী নন বলে অস্বীকার করেছেন। তবুও এটা বাজারে চাউর ছিল। ভোট কমেছে এই কারণে। কারণ শামীম ওসমান অনুসারীদের নারায়ণগঞ্জের বড় একটি অংশ মেনে নেন না। তাদের পরোক্ষভাবে সঙ্গে নিয়ে তৈমূরের উল্টো সর্বনাশ হয়েছে। পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবুর মতে, ভোটাররা তার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। সিদ্ধান্ত নিতে নারায়ণগঞ্জবাসী কখনও ভুল করেননি। তৈমূর প্রচারে বলেছিলেন নগরের জন্য ১০০ বছরের পরিকল্পনা দেবেন। কিন্তু তিনি একবারও বলেননি আইভী যা করেননি, তা তিনি করে দেখাবেন। অর্থাৎ নারায়ণগঞ্জ শহরে আইভী এটা করেননি, আমি ওটা করব। তার বক্তব্যে এগুলো ছিল না। গ্রাউন্ড ওয়ার্ক কম ছিল তার। শুধু বলেছেন ১৮ বছর আইভী নগরের দায়িত্বে ছিলেন, এখন মানুষ পরিবর্তন চায়। কিন্তু কেন পরিবর্তন দরকার জনগণের কাছে তা পরিষ্কার করতে পারেননি। কংক্রিট কোনো বক্তব্য ছিল না। শুধু আইভীকে সরাতে চেয়েছেন। উনি সবচেয়ে খারাপ কথা বলেছেন- নগরের ট্যাক্স কমাতে চান, কিন্তু ট্যাক্স কমালে কি উন্নয়ন হবে নাকি? তিনি বলেন, ভোটাররা এখন আধুনিক শিক্ষিত সচেতন। তারা অনেক কিছু বিচার বিশ্লেষক করে। আর জনগণ চেয়েছে আইভী তার অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করুক। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শঙ্কর রায় বলেন, ভোটে বাকযুদ্ধ ছিল, কিন্তু সহিংসতা হয়নি। আর উভয় প্রার্থীই অহিংস। কিন্তু যে যাই বলুক, আইভীর ব্যক্তি জনপ্রিয়তার কাছেই হেরে গেছেন তৈমূর। আর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির জ্যৈষ্ঠ সহসভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, তৈমূর নির্বাচন করেছেন সেটা ওনার বিষয়। দল যদি তার পাশে গিয়ে দাঁড়াতে বলত, তা হলে আমরা নামতাম। কারণ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে আমি যেতে পারি না। আমি গতবার দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। এবারও মনোনয়ন কিনেছিলাম প্রার্থী হতে, কিন্তু দল এই নির্বাচন কমিশন ও সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না। কারণ আমার কাছে দল সব চেয়ে বড়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জেলা বিএনপির নেতা বলেন, বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে সব নেতাই নির্বাচন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করলেও শেষ কয়েক দিনে প্রধানমন্ত্রীকে তার ভাবমূর্তির কথা বলে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। এটিও ভালোভাবে নেননি অনেকে। তবে তৈমূর ছিন্নমূল, হকার ও শ্রমিকদের ভোট আদায় করতে পেরেছেন।
Link copied!